আইরিশ বাংলা পোস্ট ডেস্কঃ ইউরোপ আবারও কোভিড-১৯ মহামারীর কেন্দ্রস্থলে পরিণত হয়েছে। ইউরোপ মহাদেশ জুড়ে কোভিডের সংক্রমণ বাড়ছে দ্রুত। অক্টোবর মাসে ৫০ শতাংশেরও বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে এই সংক্রমণ। শীতের শুরুতে এই সংক্রমণের উর্ধগতি সংশ্লিষ্ট সকলের জন্য উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ইউরোপ অঞ্চলের পরিচালক ডঃ হ্যান্স ক্লুজ গত ৪ঠা নভেম্বর সতর্ক করে বলেছিলেন যে অঞ্চলটি "পুনরায় মহামারীর কেন্দ্রস্থল হতে চলেছে" এখন বোঝা যাচ্ছে তার পূর্বাভাস দূরদর্শী ছিল। শুক্রবার, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা বলেছে যে আগের সপ্তাহে ইউরোপ জুড়ে প্রায় ২০ লক্ষ নূতন রোগী শনাক্ত করেছে - মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে এক সপ্তাহে এই অঞ্চলে এই সংখ্যা ছিল সবচেয়ে বেশি। আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী মিহল মার্টীন পরিস্থিতিতে তার মারাত্নক উদ্বেগের কথা প্রকাশ করেছেন। গত ২৪ ঘণ্টায় নূতন করে আক্রান্ত হয়েছেন ৩,৮০৫ জন আর হাসপাতালে এক দিনে নূতন করে ভর্তি হয়েছেন ২৬ জন, যার কারণে হাসপাতালে মোট কোভিড রোগীর সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৫৮২ জনে। আই সি ইউ তে ভর্তির সংখ্যা গতকালের তুলনায় ১ জন কমে ১০৬ জনে এসে দাঁড়িয়েছে। এদিকে জার্মানিতে গতসপ্তাহে একদিনে ৫০,০০০ বেশী নতুন সংক্রমণের রেকর্ড করেছে। নেদারল্যান্ডও ১৬,০০০ -এরও বেশি হয়েছে একদিনে - মহামারী শুরু হওয়ার পর থেকে দেশের সর্বোচ্চ সংখ্যা। নেদারল্যান্ড সরকার শনিবার থেকে আংশিক লকডাউন শুরু করার কথা বলেছে যা কমপক্ষে তিন সপ্তাহ স্থায়ী হবে। গত মাসের শেষের দিকে সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বেলজিয়ামও নূতন করে কিছু বিধিনিষেধ আরোপ করেছে, যার মধ্যে পাবলিক প্লেসে মাস্ক পরার আবশ্যক করা হয়েছে। বার, রেস্তোরাঁ এবং ফিটনেস ক্লাবে প্রবেশের জন্য কোভিড-১৯ টিকার পাসও দেখাতে হবে। কোভিড পাস দেখায় যে কেউ সম্পূর্ণরূপে টিকা পেয়েছেন কিংবা সম্প্রতি তার টেস্ট নিগেটিভ হয়েছে বা তিনি সম্প্রতি রোগ থেকে সুস্থ হয়েছেন। অস্ট্রিয়াতে যারা টিকাপ্রাপ্ত নন তাদের জন্য লক ডাউন ঘোষিত হয়েছে। এই নূতন সংক্রমণের সংখ্যা বৃদ্ধি সত্ত্বেও, দেশগুলতে দৈনিক মৃত্যুর হার অতীতের তুলনায় স্থিতিশীল রয়েছে। বিশেষজ্ঞরা নূতন রোগীর সংখ্যার তুলনায় হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুর সংখ্যা হ্রাসের কারণ হিসাবে প্রতিটি দেশে উচ্চহারে টিকা প্রদান ও গ্রহণকে কৃতিত্ব দিচ্ছেন। অন্যদিকে পূর্ব ইউরোপের দেশে সংক্রমণ যেমন বেড়েছে, সেখানে মৃত্যুর হারও অনেক বেশী দেখা যাচ্ছে। গত তিন সপ্তাহে রোমানিয়াতে ৫৯১, বুলগেরিয়াতে ৩৩৪ আর লাটভিয়াতে মারা গেছেন ৬৪ জন। যদিও ইউরোপের সকল দেশে টিকা প্রাপ্তিতে সাম্য বজায় রেখেছে কিন্তু পূর্ব্ব ইউরোপের দেশগুলোতে টিকা বিতরণ ও গ্রহণে শ্লথগতি হওয়ার কারণে তাদের টিকাপ্রাপ্তির মাত্রা অনেক কম। পূর্ব ইউরোপের এই দেশগুলোতে গড়ে মাত্র ৩৩-৩৫% মানুষ দুই ডোজ টিকা পেয়েছেন যেখানে ইউরোপের অন্যান্য দেশে ৭০% এর বেশী মানুষ দুই ডোজ টিকা পেয়ে গেছেন। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, সকল নাগরিককে সচেতন থেকে যতটুকু সম্ভব মাস্ক পরিধান করা, হাত ধুয়াধুয়ী করা, দূরত্ব বজায় রাখা, জনসমাবেশ না করা ইত্যাদি কার্য্যক্রম অব্যাহত রাখার কথা বলা হয়েছে। আয়ারল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তারা এই মুহুর্তে লক ডাউনের কথা না ভাবলেও এন্টিজেন টেস্টিং প্রাপ্তি সার্বজনীন করার কথা ভাবছেন তবে এই টেস্টিং সম্পুর্ন ফ্রি হবেনা বল্যেও তিনি জানিয়েছেন।