ড. আরমান রহমান, এম বি বি এস. এম পি এইচ. পি এইচ ডি. (UCD আয়ারল্যান্ড থেকে): ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ডে তৈরী করা ভ্যাক্সিন ((ChAdOx1)) তাদের প্রথম ধাপের মনুষের শরীরে পরীক্ষা শুরু করেছিল এপ্রিল মাসে। সেখানে প্রায় এক হাজার সুস্থ মানুষের শরীরে এই ভ্যাক্সিন দেয়া হয়েছিল. এই ট্রায়ালের রেজাল্ট নিয়ে এখনো পরীক্ষা নিরীক্ষা চলছে, এর মধ্যেই তারা পাঁচ দিন আগে ঘোষণা দিয়েছে যে তারা দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ধাপের পরীক্ষা শুরু করতে যাচ্ছে।
প্রাথমিক পর্যায়ে আমেরিকার বিখ্যাত রকি মাউন্টেইন ল্যাবরেটরিজে (হ্যামিল্টন, মন্টানা) বানরের উপর করা পরীক্ষায় এই ভ্যাক্সিন ভাল ফলাফল দেখিয়েছে। যদিও গতসপ্তাহে অনলাইনে একাধিক নিউজ পোর্টাল ভিন্ন খবর প্রকার করেছে। বানরের উপর এই ভ্যাক্সিন ইংল্যান্ডে এবং অস্ট্রেলিয়াতেও পরীক্ষা করে দেখা হচ্ছে।
প্রথম ধাপের পরীক্ষায় দেখা হয় এই ভ্যাক্সিন মানুষের শরীরে ঢুকালে কোন পার্শপ্রতিক্রিয়া হয় কি না? ভ্যাক্সিন কি কোন ইমিউন রিয়াক্সন তৈরী করতে পারছে কি না?
মানুষের উপর যদিও কোন ডেটা তারা এখনো দেখতে পারেনি, তবে ধরে নেয়া যায়, প্রাথমিক পরীক্ষায় তারা আশা ব্যাঞ্জক ফলাফল পেয়েছেন, তা না হলে দ্বিতীয় এবং তৃতীয় ধাপের পরীক্ষায় করার ছারপত্র তারা পেতেন না. কারণ এই ধাপে দশ হাজার সুস্থ মানুষ থাকবে যাদের মধ্যে শিশুদেরকেও রাখা হবে.
দ্বিতীয় ধাপের পরীক্ষায় বয়স অনুযায়ী তাদের কে তিন ভাগে ভাগ করা হয়েছে।
এক -৫৬-৬৯ বছর
দুই- ৭০ বছরের উপরে
তিন-৫-১২ বছর বয়স
এই ধাপে করা পরীক্ষার মূল বিষয় হচ্ছে এই ভ্যাক্সিন এদের শরীরে কি ধরণের ইমিউন রিএকশন করছে, তাদের শরীরে কি যথেষ্ট এন্টিবডি এবং টি সেল তৈরী হচ্ছে? এই এন্টিবডি কি ভাইরাস কে অকার্যকর করতে পারছে? টি সেল কি ভাইরাস ধ্বংস করতে পারছে ইত্যাদি।
তৃতীয় ধাপে পরীক্ষা হবে আরো বেশি সংখ্যক মানুষের উপর, সেখানে ১৮ বছরের উপরে সবাইকে এই ভ্যাক্সিন দেয়া হবে, এইটাই হবে আসল পরীক্ষা যেখানে দেখা হবে এই ভ্যাক্সিন সত্যি মানুষকে করোনার হাত থেকে রক্ষা করতে পারে কি না?
কিভাবে বোঝা যাবে যে ভ্যাক্সিনটি কাজ করছে কি না?
এই জন্যে অক্সফোর্ডের বিজ্ঞানীরা ভ্যাক্সিনের ট্রায়ালে মানুষকে দুই ভাগে ভাগ করেছে। এক ভাগ মানুষ পাবে করোনা ভ্যাক্সিন, আরেক ভাগ যাকে কন্ট্রোল হিসেবে নেয়া হবে তারা পাবে মেনিনজাইটিসের ভ্যাক্সিন। কোন গ্রূপ ই জানতে পারবে না তাদের কে কোন ভ্যাক্সিনটা দেয়া হয়েছে। এর পরে পরীক্ষা করে দেখা হবে তারা করোনা আক্রান্ত হচ্ছে কি না. যদি দেখা যায় ভ্যাক্সিন গ্রূপ করোনা আক্রান্ত হচ্ছে না কিছু কন্ট্রোল গ্রূপের কভিড-১৯ হচ্ছে, তাহলেই বুঝতে হবে এই ভ্যাক্সিনের পরীক্ষা সফল হয়েছে।
এখানে উল্লেখ্য যে এই করোনা ভাইরাস তারা সোশ্যাল ট্রান্সমিশন থেকেই পাবে, যতদিন পর্যন্ত একটা নিদৃষ্ট সংখ্যক কন্ট্রোল গ্রূপের মানুষ কোবিড-১৯ এ আক্রান্ত না হন, ততদিন সবাইকেই অপেক্ষা করতে হবে. কারণ ভ্যাক্সিন কাজ করছে কি না তা পরীক্ষা করার আর কোন উপায় নেই. যত তাড়াতাড়ি কন্টোল গ্রূপের একটা নিদৃস্ট সংখ্যার কভিড-১৯ হয়ে যাবে, তত তাড়াতাড়ি আমরা ভ্যাক্সিন পেয়ে যাব.
অক্সফোর্ডের ভ্যাক্সিনা শিম্পাঞ্জির একটা সাধারণ ইনফ্লুয়েঞ্জা ভাইরাস ব্যবহার করা হয়েছে, এটাকে ইঞ্জিনিরিং করে এমন ভাবে তৈরী করা হয়েছে যেটাতে মানুষের ক্ষতি হওয়ার কোন সম্ভাবনা নাই. এই ভাইরাসের মধ্যে তারা করোনা ভাইরাসের স্পাইক প্রোটিন তৈরী করার জীন জুড়ে দিয়েছেন। ফলে এই ভ্যাক্সিন নিলে আমাদের শরীরে শুধু করোনা ভাইরাসে বাইরের স্পাইক প্রোটিন তৈরী হবে, আমাদের ইমিউন সিস্টেম তখন এটাকে চিনে রাখবে। পরে যদি করোনা ভাইরাসে আমরা আক্রান্ত হই, তাহলে আমাদের ইমিউন সিস্টেম সহজেই এটাকে ধ্বংস করে দিতে পারবে। এই ভ্যাক্সিনের একটা ভাল দিক হচ্ছে এটা শিশু, কিশোর, বৃদ্ধ এবং প্রেগনেট মহিলা সবাই ব্যবহার করতে পারবে, এর কোন সিরিয়াস সাইড এফেক্ট থাকবে না (হালকা গায়ে ব্যাথা এবং অল্প জ্বর হতে পারে যেটা অনেক ভ্যাক্সিনের ক্ষেত্রেই হয়ে থাকে).
এই ভ্যাক্সিন দ্রুত বাজারে নিয়ে আসার জন্যে অক্সফোর্ড চুক্তি করেছে এস্ট্রাজেনেকা কোম্পানির সঙ্গে। তারা এর মধ্যেই বড় আকারে এই ভ্যাক্সিন তৈরী করার প্রিপারেশন নিয়ে রাখছে। বলে রাখা ভাল, তৃতীয় বিশ্বের দেশে যাতে সুলভে এই ভ্যাক্সিন পাওয়া যায়, এর জন্যে তারা বিশেষ ব্যবস্থা নেয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।