
যোবায়ের আহমদঃ সৌদি আরবের অন্যতম ধনী ব্যবসায়ী শেখ সুলায়মান আল রাযি নয় বছর বয়সে আল খাদরা বাজারে কুলি হিসেবে কাজ শুরু করেন। বর্তমানে ৮২ বছর বয়সী এই ব্যবসায়ী ফোর্বসের বিশ্বের ধনীর তালিকায় ১৬৯তম অবস্থানে রয়েছেন। এখন পর্যন্ত তিনি দান করেছে ১৬ বিলিয়ন ডলার (এক লাখ ৩৭ হাজার কোটি টাকারও বেশি)।
সুলায়মান আল রাযি তার প্রতিষ্ঠান থেকে কোনো বেতন নেন না। চলেন চ্যারিটির অর্থায়নে। অর্জিত সম্পদের অর্ধেকেরও বেশি দান করে দেন তিনি।
তার বিলিওনিয়ার হওয়ার গল্প তরুণদের অনুপ্রেরণা দেয়। সম্প্রতি ফোর্বস মিডলইস্ট এর ওয়েবসাইটে তার শূন্যহাত থেকে বিলিওনিয়ার হওয়ার গল্প উঠে এসেছে।
পুরো নাম শেখ সুলায়মান বিন আবদুল আজিজ আল রাযি। নয় বছর বয়সে সৌদি আরবের আল খাদরা বাজারে কুলির কাজ করা শুরু করেন, ছিল না কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা। বারো বছর বয়সে খেজুর সংগ্রহের কাজ করতেন বিনিময়ে মাসে ৬ রিয়াল পেতেন। যেখানে কাজ করতেন সেই উত্তপ্ত শক্ত মাঠে ঘুমাতেন আর একটাই পোশাক ছিল তার।
তারপর রিয়াদের এক হোটেলে ওয়েটারের কাজ করেন কিছুদিন। এরপর আমদানিকৃত কেরোসিন তেল পাইকারিতে বিক্রি করার কাজ করেন। সেখান থেকে সৌদি আরবের সাথে চুক্তিবদ্ধ এক সংস্থায় ওয়েটারের কাজ নেন তিনি। সেখান থেকে মাসে ৬০ রিয়াল পেতেন।
এরপর নিজস্ব এক মুদি দোকানের ব্যবসা শুরু করেন কিন্তু বিয়ের জন্য তাকে তার দোকান বিক্রি করে দিতে হয়। তার জমানো সকল সঞ্চয় বিয়েতে ব্যয় হয়ে যায়। বিয়ের পর তিনি ভাই সালেহ আল রাজির অধীনে কাজ করতে শুরু করেন । ১৯৭০ সালে ভাইয়ের থেকে আলাদা হয়ে মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানি চালু করেন। এখান থেকে তার ভাগ্য পাল্টে যেতে থাকে। এমন এক সময়ে বাজারে একজন তরুণ উদ্যোক্তা হিসাবে নিজেকে পরিচয় করিয়ে দেন যখন আরব উপসাগরীয় অঞ্চলে নতুন ব্যবসা প্রণয়ন করা খুব কঠিন কাজ হিসাবে বিবেচনা করা হতো। ধীরে ধীরে মানি এক্সচেঞ্জ কোম্পানিকে সম্প্রসারণ করতে শুরু করেন তিনি এবং সৌদি আরবে ৩০টির বেশি শাখা চালু করেন। মিশর লেবাননসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে তার ব্যবসা বাড়াতে থাকেন।
বর্তমানে তিনি আল রাযি ব্যাংকের প্রতিষ্ঠাতা এবং বিশ্বের শীর্ষ ধনী ব্যক্তিদের অন্যতম। ফোর্বসের মতে ১৬ বিলিয়ন ডলার দান করার পর সোলায়মান আল রাযির বর্তমান সম্পদ মূল্য ৯ বিলিয়ন ডলার। বিশ্বের ১৬৯তম ধনীর তালিকায় রয়েছেন।
তাকে একবার জিজ্ঞেস করা হয়েছিল আপনি আপনার অর্ধেক সম্পদ পরিবারকে আর অর্ধেক সম্পদ চ্যারিটিতে দান করেছেন। নিজের জন্য কী রেখেছেন? তিনি শান্ত ভঙ্গিতে সহাস্যে উত্তর দিয়েছিলেন কিছুই না! আমি আশিরোর্ধ্ব মানুষ। আমার কীইবা দরকার হবে। কোম্পানির দানের টাকায় চলেন তিনি। আমার থাকা, খাওয়া, চিকিৎসা এবং পরিবহন সরবরাহ করে এবং আমি ভালো আছি।
তাকে আরেকবার প্রশ্ন করা হয়েছিল আপনার সফল হওয়ার রহস্য কী? তিনি বলেছিলেন, আমি সর্বদা আমার প্রতিটি কষ্টার্জিত টাকা পরের দিনের জন্য সঞ্চয় করতাম। এটিই আমাকে ব্যবসা শুরু করার এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ গড়ার সুযোগ দিয়েছিল।
তথ্যসূত্র: আরব এক্সপ্যাট্রিয়টস ডট কম