ডাঃ ইসমত কবিরঃ কোভিড-১৯ রোগ নিরাময়ে দুটি ঔষধের সীমিত কার্য্যকারীতা প্রমাণিত হয়েছে একটি বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায়। এই ঔষধুগুলো ‘টসিলিজুম্যাব’ (একটেমরা) ও ‘সারিলুম্যাব’ (কেভজারা) কোভিড১৯ এর জটিল রোগীদের মৃত্যু কমায়, দ্রুত সারিয়ে তোলে। বর্তমানে এই ঔষধগুলো বাতরোগের জনয় ব্যাবহার করা হচ্ছে।
ছয়টি দেশের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আই সি ইউ) চিকিৎসাধীন ৮০৩ জন রোগীর উপর পরিচালিত ট্রায়াল (REMAP CAP) এর প্রেক্ষিতে এ উপসংহার এসেছে।
ট্রায়াল এর বিস্তারিত পাওয়া যাবে মেডআরকাইভের প্রাক-প্রকাশনা নিবন্ধটিতে।
এই ট্রায়ালে একদিকে ৩৫৩ জন টসিলিজুম্যাব ও ৪৮ জন সিরালুম্যাব পেয়েছিলেন আর অন্যদিকে ৪০২ জন পেয়েছিলেন নৈমত্তিক চিকিৎসা।
কোভিড১৯ এ আক্রান্ত হয়ে অঙ্গ বৈকল্যের (অর্গান ডিসফাংশন) শিকার হয়েছেন এমন রোগীদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আই সি ইউ) ভর্তির চব্বিশ ঘন্টার মধ্যে ইঞ্জেকশন হিসেবে শিরায় এ ওষুধটি দেওয়া হয়েছিলো।
এসব রোগীদের শতকরা নব্বইভাগ একই সাথে স্টেরয়েড (যেমন ডেক্সামিথাসন) পেয়েছিলেন। শতকরা ত্রিশ ভাগ ক্ষেত্রে ওষুধটির দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছিলো।
নৈমত্তিক চিকিৎসা বা স্ট্যান্ডার্ড অব কেয়ার এর সাথে তূলনা করে দেখা গেছে এ ওষুধ ৮.৫% মৃত্যু কমিয়ে দিচ্ছে, আইসিইউ অবস্থানকালীন সময়ও সাত থেকে দশদিন কমিয়ে দিতে সক্ষম হচ্ছে।
যুক্তরাজ্যে এ গবেষণার প্রধান, ইম্পেরিয়াল কলেজ এর অধ্যাপক এন্থনি গর্ডন বলেন, “এ ওষুধ প্রতি বারজনে একটি মৃত্যু প্রতিহত করছে, এটা খুব বড় একটা সুখবর”!
কোভিড১৯ এর গুরুতর রোগীদের চিকিৎসায় আইসিইউতে নির্ভরযোগ্য ওষুধ হিসেবে এতদিন স্টেরয়েড ব্যবহার হয়ে আসছিলো, এখন ‘ইনটেনসিভিস্ট’ ডাক্তারদের হাতে যুদ্ধ করার মতো আরেকটি অস্ত্র এলো।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ম্যাট হ্যানকক সাহেব ট্রায়াল এর এ ফলকে যুগান্তকারী বলে আখ্যায়িত করেছেন।
ওষুধ নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থার অনুমোদন পাওয়ার ফলে এ ওষুধগুলো এখন এনএইচএস হাসপাতালগুলোতে পর্যাপ্ত পরিমাণে সরবরাহ করা হচ্ছে।
কোভিড-১৯ রোগটি জটিল হলে রোগ প্রতিরোধী শরীরজাত রাসায়নিক পদার্থ ‘সাইটোকাইন’ এর আধিক্য লক্ষ্য করা যায়।
একে অনেকে ‘সাইটোকাইন স্টর্ম’ বা ‘সাইটোকাইনের সুনামি’ বলেন।
এর ফলে সৃষ্ট ‘সাইটোকাইন রিলিজ সিনড্রোম’ অনেক ক্ষেত্রেই মৃত্যুর কারণ হয়ে দাঁড়ায়।
‘সাইটোকাইন’গুলোর মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে ‘ইন্টারলিউকিন সিক্স’ বা ‘আইএলআর’ ছয়।
‘ইন্টারলিউকিন সিক্স’ এর কাজ নিয়ন্ত্রণ করা গেলে ‘সাইটোকাইন স্টর্ম’ জনিত জটিলতা বা মৃত্যু প্রতিরোধ করা যাবে এরকম তাত্ত্বিক ধারণা থেকে ‘ইন্টারলিউকিন ৬’ রোধী ওষুধ ‘টসিলিজুম্যাব’ (একট্যামরা) ও ‘সারিলুম্যাব’ (ক্যাভজারা) নিয়ে কোভিড১৯ এর ট্রায়াল শুরু হয়।
এ ওষুধগুলো ইতিমধ্যে ‘রিউমাটয়েড আরথ্রাইটিস’ নামে বাতরোগে ব্যবহৃত হয়ে আসছিল।
এ ওষুধ দুটোর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, এগুলো যকৃতর (Liver) ক্ষতি করতে পারে, সুপ্ত যক্ষা রোগ জাগিয়ে তুলতে পারে।
নামী ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান ‘রোস’ আর ‘সানোফি’ যথাক্রমে ‘একটেমরা’ (টসিলিজুম্যাব) ও ‘কেভজারা’ (সারিলুম্যাব) নামে এ ব্যয়বহুল ওষুধগুলো বাজারজাত করে।
এতে ডোজপ্রতি ৭৫০ থেকে ১০০০ পাউন্ড (বাংলাদেশি টাকায় প্রায় এক লাখ টাকা) খরচ পড়ে। বলা হচ্ছে, আইসিইউর প্রতিদিনের জন্য রোগীপ্রতি ব্যয় হচ্ছে ১৮০০ থেকে ২০০০ পাউন্ড।
যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য সেবা ব্যবস্থা পুরোটাই সরকারী। ওষুধগুলো মৃত্যু প্রতিহত করে আইসিইউ অবস্থানকালীন সময় সাত থেকে দশদিন কমিয়ে আনতে পারে। তাই দামী হলেও চিকিৎসার সামগ্রিক ব্যয়ের বিচারে ওষুধগুলো সাশ্রয়ী।
ইতিপূর্বে ‘রোস’ প্রতিষ্ঠান এর পক্ষ থেকে জুলাই ২০২০ এ COVACTA নামের ট্রায়ালের প্রেক্ষিতে ঘোষণা করা হয়েছিলো, ‘একটেমরা’ কোভিড১৯ এর রোগীর জটিলতা কমায় না, মৃত্যু প্রতিরোধে কোন ভূমিকা রাখে না।
একই সময় জুলাই, ২০২০ এর প্রথম সপ্তাহে ওষুধ প্রতিষ্ঠান ‘সানোফি’ ঘোষণা করেছিলো, সারিলুম্যাব (Sarilumab) বা ‘Kevzara কোভিড১৯ রোগীর চিকিৎসায় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে না।