আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ ধনী দেশগুলির “ভ্যাকসিন জাতীয়তাবাদ” রোধ করতে এবং দরিদ্র দেশগুলোর মানুষ টিকা পেতে যেন বছরের পর বছর অপেক্ষা করতে না হয় সেই লক্ষ্যে গৃহীত উচ্চাভিলাষী কর্মসূচীর জন্য মাইলফলক হিসেবে “কোভাক্স” কার্য্যক্রম তার প্রথম কোভিড-১৯ টিকার ৬ লক্ষ ডোজ গতকাল সরবরাহ করেছে।
অক্সফোর্ড/অ্যাস্ট্রাজেনেকা টিকার ৬ লক্ষ ডোজ বহনকারী একটি বিমান বুধবার ঘানার রাজধানী আক্রায় অবতরণ করে। আশা করা যায় আগামী মঙ্গলবার থেকে ঘানায় সামনের সারির স্বাস্থ্যকর্মীদেরকে এই টিকা প্রদান করা হবে। পরিকল্পনার অংশ হিসাবে আগামী শুক্রবার আইভরি কোস্টের রাজধানী আবিদজানে এই টিকা পৌঁছে দেয়া হবে এবং সোমবার থেকে সেখানে টিকা দেয়া শুরু হবে।
কোভাক্স আশা করছে, আগামী ছয় মাসের মধ্যে ১৪৫টি দেশে এমন পরিমাণ টিকা পৌঁছে দিতে পারবে যাতে করে এই দেশগুলো তাদের জনগোষ্ঠীর অন্ততপক্ষে ৬% সম্মুখসারীর স্বাস্থ্যকর্মী এবং অধিক ঝুকিপূর্ন জনগোষ্ঠীকে পর্যাপ্ত টিকা প্রদান করতে পারবে। কোভ্যাক্স আশা করছে এ বছরের শেষের দিকে তারা আরও কয়েক কোটী ডোজ টিকা এসকল দেশে পৌঁছে দিতে সক্ষম হবে।
কোভ্যাক্সের এই কার্য্যক্রম পরিচালনা বেশ জটিল- গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ভ্যাক্সিন (গ্যাভী) এবং কোয়ালিশন ফর ইপিডেমিক প্রিপারডনেস ইনোভেশনস (সিইপিআই) সহ চারটি পৃথক সংস্থা দ্বারা পরিচালিত- কোভাক্স তার লক্ষ্যে বেশ মৌলিক। শতাব্দীর সবচেয়ে খারাপ মহামারির এই সময়ে তারা কোভিড টিকার ন্যায়সঙ্গত বন্টনের জন্য একটি ব্যবস্থা গড়ে তোলার চেষ্টা করছে।
কোভ্যাক্সের ১৯২ সদস্যের মধ্যে এমন ধনী দেশ রয়েছে, যারা কোভাক্সের মাধ্যমে টিকার জন্য অগ্রিম অর্থ প্রদানের কারণে ভ্যাকসিন গবেষণায় ভর্তুকি দেওয়ার পাশাপাশি দরিদ্র দেশগুলির জন্য টিকা সুরক্ষিত করা সম্ভব হয়েছে।
২০০৯ সালে সোয়াইন ফ্লু-মহামারী চলাকালীন সময়ে এবং এইডস চিকিৎসা আবিষ্কারের বছরগুলোতে বিনামূল্যে দেয়া টিকার একমাত্র বিকল্প হিসেবে দেখা হচ্ছে এই কোভ্যাক্স কর্মসূচীকে। উভয় ক্ষেত্রেই দরিদ্র দেশগুলি মহামারীর তীব্র সময়ে কার্যকর ওষুধ ছাড়াই চলেছে এবং ধনী দেশগুলিতে চিকিৎসা প্রদানের পর দরিদ্র দেশগুলো চিকিৎসা পেয়েছিলো।
বাস্তবে, কোভ্যাক্সে যুক্ত থাকার পাশাপাশি, ধনী দেশগুলি পশ্চিমা ভ্যাকসিন প্রস্তুতকারী কোম্পানিগুলোর সাথে বেসরকারী চুক্তিতে আবদ্ধ হয়ে ২০২১ সালের বৈশ্বিক টিকা সরবরাহের বেশিরভাগ ডোজ নিয়ে নিয়েছে। যুক্তরাজ্য এবং অস্ট্রেলিয়াসহ অনেক দেশই কোভাক্স থেকে টিকা নিতে কোন চুক্তি করেনি, কার্যকরভাবে এটি তাদের কোভিড-১৯ সহায়তা চ্যানেলের উপায় হিসাবে ব্যবহার করছে।
অন্যদিকে, মরক্কো, মিশর, সেনেগাল এবং সেশেলস সহ আফ্রিকার কয়েকটি দেশ চাইনিজ ভ্যাকসিন ব্যবহার করছে। জিম্বাবুয়ে, গত সপ্তাহে ২ লক্ষ ডোজ অনুদান হিসাবে পেয়েছে এবং আরও ৬ লক্ষ ডোজের অপেক্ষায় থেকে সম্মুখ শারীর কর্মীদের টিকা দেয়া শুরু করেছে।
জি-৭ দেশগুলি গত সপ্তাহে কোভ্যাক্সে তাদের অনুদান ৫৩০ কোটি ডলারে উন্নীত করেছে, তবে জনস্বাস্থ্য কর্মীরা বলেছেন যে এই প্রোগ্রামের জন্য কেবল অর্থের দরকার নেই। ধনী দেশগুলি যে পরিমাণ অতিরিক্ত ভ্যাকসিন ডোজ সংগ্রহ করেছে তার থেকে অংশ প্রদান করা প্রয়োজন। কেবলমাত্র ফ্রান্স এবং নরওয়ে কিছু টিকা প্রদানের বিষয়ে সম্মত হয়েছে, যুক্তরাজ্যের মতো অন্যান্য কয়েকটি দেশ বলেছে যে তারা তাদের অতিরিক্ত টিকা প্রদান করতে পারে তবে কোন সময় নির্ধারন করেনি।
কোভ্যাক্স বলছে যে, বছরের শেষ নাগাদ তার সদস্য দেশগুলির জনসংখ্যার ২০% কে টিকা দেওয়ার জন্য পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে, যদিও ডিউক গ্লোবাল হেলথ ইনোভেশন সেন্টারের তথ্যের বিশ্লেষণ থেকে জানা যায় যে এটি উচ্চাভিলাষী হতে পারে, এবং ভারতের সিরাম ইনস্টিটিউট- কোভ্যাক্সের ভ্যাকসিনের বৃহত্তম সরবরাহকারী – প্রস্তাব দিয়েছে যে তাদের প্রতিশ্রুতি পূরণে কমপক্ষে ১৮ মাস সময় লাগতে পারে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুসারে, এখন পর্যন্ত বিশ্বে ১৯ কোটির বেশি মানুষকে কোভিড -১৯ টিকা দেয়া সম্পন্ন হয়েছে, যার ৭৫% মাত্র ১০ টি দেশে এবং এই দেশগুলো কোভ্যাকস পরিচালনায় সহায়তা করছে। বিশ্বের প্রায় ১৩০ টি দেশ এখনও কোন টিকা কার্যক্রম শুরু করতে পারেনি।
তথ্যসূত্রঃ ওয়ার্ল্ড ডাটা, স্কাই নিউজ, আল জাজিরা