রহিম শেখঃ করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বের অন্যান্য দেশের মতো বাংলাদেশের রফতানির সবচেয়ে বড় খাত তৈরি পোশাক চরম বিপাকে পড়েছিল। তবে দেশের রফতানির প্রধান গন্তব্য যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপের দেশগুলোতে জীবনযাত্রা স্বাভাবিক হতে শুরু করেছে। ফলে ক্রেতারা পুনরায় কেনাকাটা শুরু করায় বাংলাদেশের তৈরি পোশাকের চাহিদা বাড়ছে। মাস্ক, পিপিইসহ সুরক্ষা সামগ্রী রফতানিতে বিপুল সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। করোনা মহামারীর মধ্যেও যুক্তরাষ্ট্রে ডেনিম বা জিন্স রফতানিতে চীন, মেক্সিকোকে পেছনে ফেলে শীর্ষে অবস্থান করছে বাংলাদেশ। করোনার প্রভাবে বাতিল ও স্থগিতাদেশ হওয়া পোশাকের ক্রয়াদেশের পণ্য নিতে শুরু করেছেন বিদেশী ক্রেতারা। আবার নতুন করে আসছে ক্রয়াদেশও। এরই মধ্যে অনেক কারখানাতেই সেপ্টেম্বর পর্যন্ত কাজ করার মতো পর্যাপ্ত ক্রয়াদেশ চলে এসেছে। ফলে করোনাভাইরাসের শুরুর দিকে বিপর্যস্ত রফতানি আয়ের শীর্ষ খাতটি শক্তভাবেই ঘুরে দাঁড়াচ্ছে। রফতানিকারকরা বলছেন, প্রধানমন্ত্রীর প্রণোদনা, স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা খোলা, বায়ারদের আস্থা ফিরে আসা ও শ্রমিকদের আন্তরিকতার ফলে এটি সম্ভব হয়েছে। আগামীতে বড় কোন সমস্যা না হলে স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধি করতে থাকবে এই খাতটি।
জানা গেছে, বিশ্বব্যাপী করোনা সংক্রমণের ঝুঁকি হ্রাস ও টিকা আবিষ্কার না হওয়ায় এক ধরনের অনিশ্চয়তা এখনও রয়ে গেছে। যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়লে গত মার্চে সেখানকার বড় ক্রেতারা একের পর এক ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত করতে থাকেন। এদিকে দেশেও ভাইরাসটির সংক্রমণ রোধে ২৬ মার্চ থেকে সাধারণ ছুটি ঘোষণার পর মাসখানেক পোশাক কারখানা বন্ধ ছিল। তাতে এপ্রিলে মাত্র ৩৭ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়, যা গত দুই দশকের মধ্যে সর্বনিম্ন। পরের মাসে রফতানি হয় ১২৩ কোটি ডলারের পোশাক। জুনে সেটি বেড়ে ২২৫ কোটি ডলারে গিয়ে দাঁড়ায়। তারপরও বিদায়ী ২০১৯-২০ অর্থবছরে ২ হাজার ৭৯৫ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি হয়, যা তার আগের বছরের চেয়ে ৬১৮ কোটি ডলার কম। চলতি অর্থবছরের জুলাই মাসে তৈরি পোশাক রফতানি আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জিত হলেও ১.৯৮ শতাংশ কম প্রবৃদ্ধি অর্জিত হয়। কিন্তু আগস্ট মাসের চিত্র এখন পর্যন্ত ভাল। চলতি মাসের ১৯ দিনে রফতানি আয়ে প্রবৃদ্ধি হয়েছে ৫০.৬৬ শতাংশ। তার মানে করোনার মধ্যে রফতানি আয়ের স্বাভাবিক প্রবৃদ্ধিতে ফিরতে সক্ষম হচ্ছে তৈরি পোশাক খাত। জানতে চাইলে বিজিএমইএ’র ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আবদুস সালাম বলেন, ‘এটি একটি পরিণত’ (ম্যাচিউরড) খাত। এ খাতের বাজার ও ক্রেতা টেকসই (সাসটেইনেবল)। ফলে কিছুটা বেগ পেয়ে হলেও ঘুরে দাঁড়ানোই স্বাভাবিক। ইতিবাচক প্রবৃদ্ধিতে ফিরতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রেখেছে স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা খোলার সিদ্ধান্ত নেয়া। না খুলতে অনেক দিক থেকে চাপ ছিল। এই সময়ে অর্ডার বাতিল বা স্থগিত করা বায়াররা আবার ফিরে এসেছেন। তারা আমাদের ওপর আস্থা রাখছেন এবং শ্রমিকদের সহযোগিতায় আমরা সময়মতো শিপমেন্ট দিতে পারছি। তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতা, শ্রমিকদের কাজে আন্তরিকতা, বায়ারদের আস্থা ফিরে আসায় ও ব্যাংকসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা তৈরি পোশাক খাতকে ঘুরে দাঁড়াতে অবদান রেখেছে।’
রাইজিং গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদ হাসান খান বলেন, আমাদের সাতটি কারখানার মধ্যে ছয়টিতে ভাল ক্রয়াদেশ আসছে। সব মিলিয়ে গতবারের তুলনায় ক্রয়াদেশের পরিমাণ ৮০ শতাংশের কাছাকাছি। তা ছাড়া মার্চে বাতিল ও স্থগিত হওয়া সব ক্রয়াদেশের পণ্য ক্রেতারা নিতে শুরু করেছেন। যদিও একটি ক্রেতা প্রতিষ্ঠানকে ৪ লাখ ৭০ হাজার ডলার মূল্যছাড় দিতে হয়েছে। মাহমুদ হাসান খান বলেন, করোনা শুরুর দিকে ক্রয়াদেশ বাতিল ও স্থগিত হওয়ায় আমরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছিলাম। তবে বর্তমানে ক্রয়াদেশ আসার হার দেখে ভরসা পাচ্ছি। মনে হচ্ছে আমরা টিকে যেতে পারব।
বাংলাদেশী পোশাকের অন্যতম বড় ক্রেতা প্রতিষ্ঠান সুইডেনের এইচএ্যান্ডএম। এই ব্র্যান্ড বাংলাদেশ থেকে বছরে প্রায় ৩০০ কোটি ডলার বা ২৫ হাজার ৫০০ কোটি টাকার পোশাক কিনে থাকে। এইচএ্যান্ডএমের বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও ইথিওপিয়ার প্রধান জিয়াউর রহমান বলেন, গত দুই থেকে আড়াই মাসে আমরা ৫০ কোটি ডলারের ক্রয়াদেশ দিয়েছি। আমাদের ৩০০ সরবরাহকারী কারখানার সবাই ক্রয়াদেশ পেয়েছে। এইচএ্যান্ডএমের ক্রয়াদেশ পাওয়ার ক্ষেত্রে অন্য প্রতিযোগী দেশের তুলনায় বাংলাদেশের অবস্থান ভাল। চীন ও তুরস্ক থেকে যেসব ক্রয়াদেশ সরছে, তার একটি অংশ বাংলাদেশে আসছে। কারণ, বাংলাদেশে উৎপাদন খরচ তুলনামূলক কম।
পোশাক রফতানিতে দ্বিতীয় অবস্থানেই বাংলাদেশ ॥ চীন বরাবরের মতো তৈরি পোশাক রফতানিতে শীর্ষে অবস্থান করছে। তবে ২০১৮ সালের তুলনায় গত বছর দেশটির পোশাক রফতানি ৬০০ কোটি ডলার কমে ১৫ হাজার ২০০ কোটি ডলার হয়েছে। মোট পোশাক রফতানিতে চীনের হিস্যা বর্তমানে ৩০ দশমিক ৮ শতাংশ। বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার (ডব্লিউটিও) ‘ওয়ার্ল্ড স্ট্যাটিসটিক্যাল রিভিউ ২০২০’ প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, পোশাক রফতানিতে দ্বিতীয় অবস্থানে মূলত ২৭ দেশের জোট ইউরোপীয় ইউনিয়ন (ইইউ)। গত বছর ইইউর রফতানি ১৩ হাজার ৬০০ কোটি ডলার। তবে একক দেশ হিসেবে বাংলাদেশ দ্বিতীয় শীর্ষ পোশাক রফতানিকারক। বাংলাদেশ গত বছর ৩ হাজার ৩০৭ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে। বৈশ্বিক পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশের হিস্যা ৬ দশমিক ৮ শতাংশ। ২০১০ সালে হিস্যা ছিল ৪ দশমিক ২ শতাংশ। তৃতীয় অবস্থানে থাকা ভিয়েতনাম গত বছর ৩ হাজার ১০০ কোটি ডলারের পোশাক রফতানি করেছে। চীনের মতো ভিয়েতনামের পোশাক রফতানি ২০১৮ সালের তুলনায় গত বছর ১০০ কোটি ডলার কমেছে। মোট পোশাক রফতানিতে ভিয়েতনামের বর্তমান হিস্যা ৬ দশমিক ২ শতাংশ। জানতে চাইলে নিট পোশাক শিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএর সাবেক সভাপতি ফজলুল হক বলেন, ‘ভিয়েতনামের পোশাক রফতানির অনেকটাই যুক্তরাষ্ট্রের বাজারের ওপর নির্ভরশীল। করোনায় ইইউর বাজার পরিস্থিতি দ্রুত উন্নতি হলেও যুক্তরাষ্ট্রে সেটি শ্লথ হচ্ছে। ফলে আশা করছি, আগামী দুই বছরেও ভিয়েতনাম আমাদের পেছনে ফেলতে পারবে না। তারপরও আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘উৎপাদন সক্ষমতা বাড়ানোর পাশাপাশি বহুমুখী পোশাক উৎপাদনে জোর দিতে পারলে বাংলাদেশ এগিয়ে থাকবে।’ জানতে চাইলে বেসরকারী গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) গবেষণা পরিচালক খন্দকার গোলাম মোয়াজ্জেম বলেন, ‘ভিয়েতনামের বার্ষিক পণ্য রফতানির পরিমাণ ২২ হাজার কোটি ডলার। তার মধ্যে তৈরি পোশাক তাদের ষষ্ঠ শীর্ষ রফতানি পণ্য। তারপরও ভিয়েতনাম যদি পোশাক রফতানিতে বাংলাদেশকে ছাড়িয়ে যায়, তাহলে সেটি হবে দুঃখজনক। কারণ তৈরি পোশাক আমাদের প্রধান রফতানি পণ্য।’ তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশে কারখানার কর্মপরিবেশ উন্নয়নে অনেক কাজ হলেও বহুমুখী পণ্য উৎপাদনের ক্ষমতায় ও প্রযুক্তিতে উন্নয়ন হয়নি। এই জায়গায় দ্রুত উন্নতি করতে হবে। না হলে অদূর ভবিষ্যতে বাংলাদেশকে অনেক পেছনে ফেলে এগিয়ে যাবে ভিয়েতনাম।’
যুক্তরাষ্ট্রে ডেনিম বাজারে শীর্ষে বাংলাদেশ ॥ করোনা মহামারীর কারণে যুক্তরাষ্ট্রে চীন, মেক্সিকোর রফতানি প্রায় অর্ধেকে কমে এসেছে। এ কারণেই ডেনিম রফতানিতে বাংলাদেশ এই দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে গেছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে ডেনিম বা জিন্স রফতানিতে চীন, মেক্সিকোকে পেছনে ফেলে শীর্ষ দেশ হিসেবে উঠে এসেছে বাংলাদেশ। যদিও এ বছর করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে রফতানির পরিমাণ আগের বছরের চেয়ে কিছুটা কমেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য অধিদফতরের টেক্সটাইল এ্যান্ড এ্যাপারেল কার্যালয়ের (ওটেক্সা) দেয়া তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালের প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশ ১৯০ দশমিক ১৪ মিলিয়ন ডলারের ডেনিম রফতানি করেছে। আর ১৮৪ দশমিক ৯৪ মিলিয়ন ডলারের ডেনিম পণ্য রফতানি করে মেক্সিকো আছে দ্বিতীয় অবস্থানে। চতুর্থ অবস্থানে আছে চীন। এ সময়ে যুক্তরাষ্ট্রে ১২০ দশমিক ৮২ মিলিয়ন ডলারের ডেনিম রফতানি করেছে দেশটি। এই তালিকায় তৃতীয় অবস্থানে আছে ভিয়েতনাম। এ বছরের প্রথমার্ধে যুক্তরাষ্ট্রে ১৪৩ দশমিক ৫৭ মিলিয়ন ডলারের ডেনিম পণ্য রফতানি করেছে দেশটি। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারীর কারণে যুক্তরাষ্ট্রে চীন, মেক্সিকোর রফতানি প্রায় অর্ধেকে কমে এসেছে। এ কারণেই ডেনিম রফতানিতে বাংলাদেশ এই দেশগুলোর চেয়ে এগিয়ে গেছে। যতদিন এই দুইটি দেশ করোনার কারণে সৃষ্ট অসুবিধাগুলো কাটিয়ে ওঠার চেষ্টা করবে, ততদিন বাংলাদেশ ডেনিম রফতানির এই শীর্ষস্থান ধরে রাখতে পারবে বলে আশা করেন তারা। গত কয়েক বছর ধরে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে শীর্ষ ডেনিম রফতানিকারক দেশ হিসেবে নিজের অবস্থান ধরে রেখেছে বাংলাদেশ। চট্টগ্রামভিত্তিক ডেনিম রফতানিকারক প্রতিষ্ঠান প্যাসিফিক জিন্স লিমিটেড-এর পরিচালিক সৈয়দ এম তানভির বলেন, ‘সামনের দিনগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বাংলাদেশী ডেনিম রফতানিকারকদের প্রবেশ বাড়বে, তবে দেশটিতে ভিয়েতনাম ও কম্বোডিয়া বেশি সুবিধা পাবে।’ আর রাজনৈতিক কারণেই দেশটিতে মেক্সিকো ও চীনের রফতানির পরিমাণ কমেছে বলে মনে করেন তিনি।
মাস্ক ও পিপিই রফতানি বাড়ছে বাংলাদেশের ॥ করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বজুড়ে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সামগ্রী (পিপিই) ও মাস্কের চাহিদা বেড়েছে। বাংলাদেশের রফতানি পণ্যের তালিকাতেও এ দুটি পণ্য বৈচিত্র্য এনেছে। আগের যে কোন সময়ের চেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বেড়েছে সুরক্ষা পণ্যের রফতানি। বিদেশী ক্রেতাদের চাহিদা মেটাতে তৈরি পোশাক খাতের
উদ্যোক্তারা নতুন বিনিয়োগও করছেন। উদ্যোক্তারা জানান, তৈরি পোশাক খাতে এই দুই পণ্যের মাধ্যমে বৈচিত্র্য আনার সুযোগ তৈরি হয়েছে। যে পরিমাণ রফতানি আদেশ দিতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন ক্রেতারা তা পূরণ করা গেলে ব্যাপক সম্ভাবনা তৈরি করবে। ২০১৯-২০ অর্থবছরের এপ্রিল থেকে জুন পর্যন্ত তিন মাসে মাস্ক রফতানি হয়েছে এক কোটি ৩১ লাখ ডলারের। আগের বছরের একই সময়ে যা ছিল মাত্র ১০ লাখ ডলার। পুরো অর্থবছরের হিসাবে পাঁচ গুণ বেড়ে মোট রফতানি হয়েছে আড়াই কোটি ডলারের। আগের বছর এর পরিমাণ ছিল ৫৫ লাখ ডলার। বিজিএমইএ ও বিকেএমইএর তথ্য অনুযায়ী, প্রচলিত বাজারের মধ্যে কানাডায় মাস্কের রফতানি বেশি হারে বেড়েছে। মোট রফতানির প্রায় এক-পঞ্চমাংশ ৫০ লাখ ডলারের মাস্ক গেছে দেশটিতে। আগের অর্থবছরে এর পরিমাণ ছিল ২৮ হাজার ডলার। দেশটিতে সার্বিক পোশাক রফতানি ২৬ শতাংশ কমলেও মাস্কের এ চাহিদায় বড় সম্ভাবনা দেখছেন উদ্যোক্তারা। জার্মানি, ফ্রান্সসহ ইউরোপের সব দেশ এবং যুক্তরাষ্ট্রেও চাহিদা বেড়েছে কয়েকগুণ। এমনকি ভারত, থাইল্যান্ডের মতো বাজারেও চাহিদা অনেক বেড়েছে।
অন্যদিকে গত অর্থবছর পিপিই রফতানি হয়েছে ৫১ কোটি ডলারের। সবচেয়ে বেশি ১১ কোটি ডলারের পিপিই গেছে জার্মানিতে। যুক্তরাষ্ট্রে রফতানি হয়েছে ৮ কোটি ডলারের। জানা যায়, ইতোমধ্যে বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ বাণিজ্যিক জায়ান্ট বেক্সিমকো গ্রুপ যুক্তরাষ্ট্রে ৬৫ লাখ পিপিই গাউন রফতানি করছে। যুক্তরাষ্ট্রের ব্র্যান্ড হানেস, এসব পিপিই গাউন তৈরির অর্ডার দিয়েছিল। মার্কিন সরকারের কেন্দ্রীয় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা সংস্থা-ফেমাকে সরবরাহের জন্য বেক্সিমকোর কাছ থেকে গাউন তৈরি করে নেয় ব্র্যান্ডটি। জানতে চাইলে বেক্সিমকোর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং গ্রুপ পরিচালক সৈয়দ নাভেদ হুসাইন বলেন, পিপিই উৎপাদনের নতুন কেন্দ্র হয়ে ওঠার মতো সকল সুযোগ এখন বাংলাদেশের সামনে রয়েছে। আগামী তিন বছরের মধ্যে সুরক্ষা সরঞ্জাম রফতানিতে বিশ্ববাজারের অন্যতম প্রধান সরবরাহকারী হয়ে ওঠার লক্ষ্য নিয়ে ইতোমধ্যেই একটি ‘পিপিই শিল্প পার্ক’ স্থাপন করেছে দেশের শীর্ষস্থানীয় এই বাণিজ্যিক গ্রুপটি। বেক্সিমকোর শিল্পাঞ্চল থেকে মাত্র ১০ মিনিটের দূরত্বে নতুন শিল্পকেন্দ্রটি স্থাপন করা হয়েছে।
স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় করোনায় পোশাক শ্রমিক আক্রান্ত কম ॥ দেশে প্রথম করোনাভাইরাস সংক্রমণ ছড়ানোর পর সবচেয়ে বড় ভয়ের কারণ হয়ে উঠেছিল পোশাক খাতের লাখ লাখ কর্মী। তাদের মধ্যে সংক্রমণের তীব্রতা বেশি হলে দেশে আক্রান্ত ও মৃত্যু অনেক বেশি হবে বলেই বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা প্রকাশ করেছিলেন। তবে প্রায় ছয় মাসের কাছাকাছি সময়ে এসে এখন দেখা যাচ্ছে, পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে সংক্রমণের মাত্রা তুলনামূলক খুবই কম। এমনকি মৃত্যুর ঘটনাও খুবই কম। তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রফতানিকারদের সমিতি (বিজিএমইএ) সূত্রে জানা যায়, দেশে চার হাজারের বেশি পোশাক কারখানায় প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন। সরকারের স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে মেনে কারখানা খোলা, বিজিএমইএ অডিট টিমের নিয়মিত কারখানা পরিদর্শন, সুরক্ষার বিষয়ে বিভিন্ন উদ্যোগ কার্যকর করার ফলে পোশাক কারখানাগুলোতে তেমন সংক্রমণ ছড়ায়নি। সর্বশেষ তথ্যমতে, বিজিএমইএর তালিকাভুক্ত কারখানাগুলোতে আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ৫১১ জন। এর মধ্যে ৪৪৫ জন সুস্থ হয়ে উঠেছেন। বাকিরা চিকিৎসাধীন। জানতে চাইলে রফতানিকারকদের সংগঠন বাংলাদেশ রফতানিকারক সমিতির (ইএবি) সভাপতি আবদুস সালাম মুর্শেদী বলেন, ‘শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি মেনে কারখানা পরিচালনা করায় করোনার প্রভাব তেমন একটা প্রতিফলিত হয়নি পোশাক শ্রমিকদের মধ্যে। এ ছাড়া যারা পরিশ্রম করে, তাদের মধ্যে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা কম। শারীরিক সক্ষমতার কারণে আক্রান্ত হলেও অনেকে বুঝতেও পারেনি।