আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ চীনের গবেষকরা দাবি করেছেন যে, তারা “কোয়ান্টাম আধিপত্য” অর্জন করেছেন। কম্পিউটার জগতে কোয়ান্টাম এমন এক অবস্থান যা কোনভাবেই শাস্ত্রীয় কম্পিউটারের পক্ষে করা সম্ভব নয়। জিউজ্যাং নামের এই ডিভাইসটি ৩ মিনিট ২০ সেকেন্ডের মধ্যে এমন গণনা সম্পন্ন করতে পেরেছে যা একটি নিয়মিত সুপার কম্পিউটারের পক্ষে সম্পন্ন করতে প্রায় ২৫০ কোটি বছর লাগবে।
প্রচলিত কম্পিউটারগুলি বাইনারি বিট পদ্ধতিতে ডেটা প্রক্রিয়া করে–“হয় শূন্য কিংবা এক”। কিন্তু কোয়ান্টাম কম্পিউটারের বিশেষ সুবিধা হচ্ছে এরা একই সাথে “শূন্য এবং এক” উভয় বিটকে প্রক্রিয়ায় জন্য ব্যাবহার করতে পারে। যার কারণে কোয়ান্টাম কম্পিউটারের প্রক্রিয়া করার শক্তি তাতপর্য্যপূর্নভাবে বৃদ্ধি পায়, যেহেতু দুটি কোয়ান্টাম বিট (কিউবিটস) চারটি সম্ভাব্য অবস্থায় থাকতে পারে, তিনটি কিউবিট আটটি অবস্থায় এবং এই ভাবে বাড়তেই থাকে।
উপরের কথাগুলোর অর্থ হচ্ছে, যখন ক্লাসিকাল কম্পিউটার একটি সময়ে একটি সম্ভাবনা নিয়ে কাজ করে তারপর অন্য বিকল্প সম্ভাবনা প্রক্রিয়া করে এবং একইভাবে একের পর একটি কাজ করে সেখানে কোয়ান্টাম কম্পিউটার একই সময়ে অনেকগুলি সম্ভাবনা অন্বেষণ করতে পারে। কোয়ান্টাম কম্পিউটারগুলি গতানুগতিক কম্পিউটারের তুলনায় অনেক দ্রুত গণনা সম্পাদন করতে সক্ষম, তবে কোয়ান্টামের চূড়ান্ত অর্জন তখনই হবে যখন তারা এমন কাজ করতে পারবে যা কোনভাবেই ক্লাসিকাল কম্পিউটার করতে পারেনা এবং সেই মাইলফলককে “কোয়ান্টাম আধিপত্য” বলা হয়েছে।
গত বছর গুগল এরকম দাবি করেছিল যে “কোয়ান্টাম আধিপত্য” তারা অর্জন করেছে। গুগল জানিয়েছিল যে, তাদের ৫৩-কিউবিট সাইকামোর প্রসেসর ৩ মিনিট ২০ সেকেন্ডের মধ্যে এমন গণনা সম্পন্ন করেছে – গুগলের অনুমান মতে যে কাজ করতে পৃথিবীর সবচেয়ে শক্তিশালী সুপার কম্পিউটারের ১০,০০০ বছর লাগতে পারত।
আজ চীন এই “কোয়ান্টাম আধিপত্য” ক্লাবে যোগ দিয়েছে বলে দাবি করেছে। জিউজ্যাং কম্পিউটার তিন মিনিট ২০ সেকেন্ডের মধ্যে এমন একটি বিশেষ চ্যালেঞ্জিং সমস্যার সমাধান খুঁজে পেয়েছে বলে জানিয়েছে, যা একটি ঐতিহ্যবাহী সুপার কম্পিউটার সম্পন্ন করতে ২৫০ কোটি বছরের বেশী সময় লাগবে। ভেবে দেখুন ২৫০ কোটি বছর হচ্ছে আমাদের পৃথিবীর বর্তমান বয়সের অর্ধেকেরও বেশি, আর এই সময় গুগলের দাবীকৃত সময়ের চেয়ে ১০০০ কোটি গুণ দ্রুত।
এই কোয়ান্টাম কম্পিউটিং যে গণনাটি সম্পন্ন করলো তাকে বলা হয় “বোসন স্যাম্পলিং”; এটি একটি জটিল অপটিক্যাল সার্কিটের আউটপুট গণনা। এই গননায়, মুলত, অনেকগুলি ইনপুটের মাধ্যমে “ফোটন” নামক কণাকে সিস্টেমে প্রেরণ করা হয় এবং একবার ভিতরে প্রবেশ করলেই এই “ফোটন” কণিকাগুলো বিম বিভাজক ( বিম স্প্লিটার) দ্বারা বিভক্ত হয়ে যায় এবং আয়নায় প্রতিফলিত হয়ে চারদিকে ছড়িয়ে পড়ে। এই “বোসন স্যাম্পলিং” এর কাজ হচ্ছে এই সমস্ত ছড়িয়ে পড়া ফোটনের ভেরিয়েবলগুলিকে হিসাবে নিয়ে এই গোলকধাঁধার সম্ভাব্য সকল আউটপুটগুলোকে গণনা করে ফলাফল দেয়া- একটি নিয়মিত কম্পিউটারের জন্য এই কাজ অবিশ্বাস্যরকম কঠিন, আর কোয়ান্টাম কম্পিউটারের জন্য অত্যন্ত সহজ ।
চীনের ক্ষেত্রে, জিউজ্যাং কম্পিউটার, ৫০টি ফোটন, ১০০টি ইনপুট, ১০০টি আউটপুট, ৩০০ টি বিম স্প্লিটার এবং ৭৫টি আয়না দিয়ে এই কাজ সম্পন্ন করেছে। এই কোয়ান্টাম কম্পিউটার একটি কফি তৈরি করতে যতক্ষণ সময় লাগে সেই সময়ের মধ্যে বিতরণের সকল নমুনা গণনা করতে সক্ষম হয়েছে। বর্তমানে বিশ্বের চতুর্থতম শক্তিশালী সুপার কম্পিউটার – সানওয়ে তাইহুলাইট এই কাজ করার জন্য মহাবিশ্বের পুরো বয়সের এক পঞ্চমাংশ সময়ের প্রয়োজন হত।
স্পষ্টতই এটি একটি বিশাল অর্জন, তবে এর অর্থ এই নয় যে ঐতিহ্যবাহী কম্পিউটারগুলি শীঘ্রই আস্তাকুড়ে নিক্ষিপ্ত হচ্ছে। এই ধরণের কোয়ান্টাম কম্পিউটার বেশীরভাগ ক্ষেত্রেই এখনো পরীক্ষামূলক অবস্থানে আছে, শুধুমাত্র তাদের শক্তিমত্তার সম্ভাবনার কথা আমাদেরকে জানিয়েছে মাত্র। বিশ্বে কম্পিউটার যুদ্ধে যারা জড়িত যেমন গুগল, আমাজন, মাইক্রোসফট এদের সাথে তাদের প্রতিযোগিতায় আধিপত্য প্রদর্শন করলো মাত্র। এই কোয়ান্টাম কম্পিউটারের ব্যাবহার্য্য কোন কার্য্যকারিতা আদৌ হবে কি না, আর যদি হয় তাহলে এইসকল কম্পিউটারের স্থিতিশীলতা অর্জনে কত সময় লাগবে, সেটা জানতে আমাদের অপেক্ষা করতে হবে ।