সৈয়দ আতিকুর রব-আয়ারল্যান্ড থেকে : ইউরোপের সাথে ব্রিটেনের শেষ মূহুর্তের ব্রেক্সিট চুক্তিতে খারাপ পরিস্থিতি কিছুটা হলেও এড়াতে পারবে আয়ারল্যান্ড। তবে ১ জানুয়ারি থেকে আয়ারল্যান্ডের সামনে হাজির হবে নতুন কিছু চ্যালেঞ্জ। যেগুলো দেশটির বাণিজ্য সেক্টরকে আমূল পাল্টে দেবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। চুক্তি ছাড়াই ব্রেক্সিট সম্পন্ন হলে অনেক পণ্যের উপর বাড়তি শুল্ক যোগ হতো, বিশেষ করে কৃষি খাদ্যের ওপর এর চাপ পড়তো সবচেয়ে বেশি। এর ফলে ক্ষতিগ্রস্থ হতো আয়ারল্যান্ডের কৃষিখাত, কারণ দেশটির এই সেক্টর অনেকটাই ব্রিটেনের বাজার নির্ভরশীল।
আইরিশ সেন্ট্রাল ব্যাংকের তথ্য মতে এর ফলে দেশটিতে ১ লাখের বেশি মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি হতো। যে কারণে ব্রেক্সিট নিয়ে জটিলতা যতই বেড়েছে, নিজেদের স্বার্থেই আয়ারল্যান্ডের সরকার এই চুক্তির পক্ষে জোর দিয়েছে। তবে চুক্তির ফলে খারাপ পরিস্থিতি এড়াতে পারলেও ব্রিটেনের সাথে এবার নতুন এক বাণিজ্য সম্পর্কে জড়াতে হবে আয়ারল্যান্ডকে, যা আইরিশ অর্থনীতির জন্য দীর্ঘমেয়াদি চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেবে বলে মনে করা হচ্ছে। এর ফলে ‘কঠোর ব্রেক্সিটের’ সেই ধারণাই বাস্তবায়িত হলো, যা ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও তার কট্টর মিত্রদের আধিপত্যবাদকে আরো জোড়ালো করলো। নতুন এই চুক্তি অনুযায়ী ব্রিটেন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মাঝে বাণিজ্যের জন্য আনুষ্ঠানিকভাবে কাস্টমস ডিক্লারেশন করতে হবে, যাতে খরচ বাড়বে এবং দীর্ঘদিনের সুবিধজনক যে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য সম্পর্ক ছিলো তার উপর নীতিবাচক প্রভাব পড়বে। দুই অঞ্চলের দৈনন্দিন কর্মকান্ডের ওপরও এর প্রভাব পড়তে বাধ্য। ব্রিটেনের ডিগ্রি কিংবা পেশাগত দক্ষতা এখন আর ইউরোপে যাচাই বাছাই ছাড়াই স্বীকৃত হবে না। ইউরোপের বেশির ভাগ দেশেই ৯০ দিনের বেশি অবস্থান করতে হলে ব্রিটিশ নাগরিকদের ভিসা ও স্বাস্থ্য বীমা লাগবে। যেমনটা দরকার হয় অস্ট্রেলিয়া কিংবা আরো অনেক দেশের নাগরিকদের জন্য। আর অর্থনীতির প্রতিটি সেক্টরেই আসবে নতুন বিধিমালা যাতে তৈরি হবে নতুন নতুন সঙ্কট। আর দীর্ঘদিনের নির্বিঘ্নে বাণিজ্যের এই সমাপ্তির প্রভাব পড়বে আয়ারল্যান্ডের উপরও। করোনার নতুন ধারার সংক্রমণ সনাক্ত হওয়ার পর ফ্রান্স গত সপ্তাহে বৃটিশ মালবাহী লরিগুলো আটকে দিয়েছে এবং ড্রাইভারদের করোনা নেগেটিভ সনদ দাবি করেছে দেশটি। যেটি প্রমাণ করছে, ১ জানুয়ারির পর থেকে ব্রিটেনের সাথে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একই ধরণের সমস্যায় পড়তে পারে আয়ারল্যান্ড।
বিশেষজ্ঞদের মতে এটি হবে দুই দেশের জন্য অতিরিক্ত একটি কাজের জঠিলতা। এবং ১ জানুয়ারি থেকে এই অঞ্চলে যে পরিবর্তন আসবে সেটি হয়তো হবে অনেক জটিল, বিশেষ করে ব্রিটেনের নতুন আইটি ব্যবস্থাপনা- যেগুলোর কার্যকারিতাই এখনো যাচাই করার সুযোগ হয়নি। এহেন অবস্হায় আইটি কোম্পানিগুলোকে হয়তো সপ্তাহ খানিক সময় দেয়া হবে তাদের সিস্টেম কিভাবে কাজ করবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা সরকারকে দিতে। নতুন একটি সিস্টেমের সাথে পরিচিতি হতে আইটি কোম্পানিগুলোকে যে কিছুটা বেগ পেতে হবে সেটি নিঃসন্দেহে বলার অপেক্ষা রাখে না। চুড়ান্ত চুক্তির ফলে আয়ারল্যান্ডের সাপ্লাই চেইনও বিপর্যস্ত হওয়ার শঙ্কা রয়েছে। ব্রিটেন নির্ভর আইরিশ বাণিজ্য আর কখনোই আগের অবস্থায় ফিরবে না বলে ধারণা করা হচ্ছে। পুরো আয়ারল্যান্ড দ্বীপেই ( আয়ারল্যান্ড ও নর্দান আয়ারল্যান্ডের ) সাপ্লাই চেইনের নির্ধারকগুলো চিরতরে বদলে গেছে। যেটি ইউরোপের অবশিষ্ট অংশের সাথে সরাসরি সংযোগ স্থাপনের গুরুত্বের কথা মনে করিয়ে দিচ্ছে। করোনাবর্ষের সামনের দিনগুলোতে ব্রেক্সিট চুক্তি পরবর্তী নতুন চ্যালেঞ্জগুলো মোকাবেলায় আয়রিশ সরকার কি ধরণের পদক্ষেপ গ্রহণ করে সেটি হবে আগামী দিনের দেখার বিষয়।