জলাবদ্ধতার কারণ খুঁজে পাচ্ছে না ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ রাজধানীর জলাবদ্ধতা নিরসনে বছরজুড়ে নানা প্রকল্প চলে। এরপরও সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে পানি জমে যায়। কীভাবে এই পানি জমে— এর কোনও কারণ খুঁজে পাচ্ছে না ঢাকা উত্তর (ডিএনসিসি) ও দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। বৃহস্পতিবার (২১ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যার পর টানা কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে ডিএসসিসির অনেক এলাকায় রাতভর ছিল পানি। এমনকি শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) দুপুর পর্যন্ত অনেক মার্কেট, দোকান, কাঁচাবাজার, মানুষের বাসাবাড়ি, রাস্তা-গলি ছিল পানির নিচে। যদিও এ বিষয়ে দুই সিটি কর্মকর্তারা মুখে কুলুপ এঁটেছেন। ঠিক কী কারণে অসহনীয় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় রাজধানীতে, তা নিয়ে কোনও কথা বলেননি কর্মকর্তারা।

ঢাকায় জলাবদ্ধতা (6)

নগর বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দুই সিটির দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা নতুন লাইন নির্মাণে আগ্রহী বেশি। এক্ষেত্রে কাজ দেখানোর প্রবণতা বেশি কাজ করে তাদের মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের দাবি, ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের কাজে এমন কোনও পরিকল্পনার ছাপ নাই।

ঢাকায় জলাবদ্ধতা (3)

শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) বাংলা ট্রিবিউনের পক্ষ থেকে দুই সিটির বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তাদের ভাষ্য, বছরব্যাপী জলাবদ্ধতা নিরসনে নানা কার্যক্রম পরিচালনা করা হয়েছে। তারপরও ঠিক কী কারণে বৃষ্টি হলেই নগরবাসী ভোগান্তিতে পড়ছেন, তা বুঝতে পারছেন না সিটি করপোরেশনের কর্তাব্যক্তিরা। এ বিষয়ে কথা বলতেও তাদের আপত্তি রয়েছে।

ঢাকায় জলাবদ্ধতা (4)

ডিএনসিসির প্রধান প্রকৌশলী ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মুহ. আমিরুল ইসলামকে মুঠোফোনে কল দেওয়া হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে জানানোর জন্য আমাদের জনসংযোগ কর্মকর্তা রয়েছেন। আমি কথা বলবো না।

ডিএনসিসির প্রধান নগর পরিকল্পনাবিদ মাকসুদ হাসেমের সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আমি এ লাইনের লোক নই। এ বিষয়ে বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিতে পারবেন ড্রেনেজ সার্কেলের কর্মকর্তারা।’

এ বিষয়ে জানতে ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সেলিম রেজা, প্রধান সমাজ কল্যাণ ও বস্তি উন্নয়ন কর্মকর্তা মোহাম্মদ মামুন-উল-হাসানকে মুঠোফোনে পাওয়া যায়নি।

জলাবদ্ধতা নিরসনে বছরব্যাপী কার্যক্রম চালালেও কেন জলাবদ্ধতা— তা জানতে ডিএসসিসি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান, সচিব আকরামুজ্জামান এবং প্রধান প্রকৌশলী আশিকুর রহমানকে মুঠোফোনে কল দিয়ে পাওয়া যায়নি।

অল্প বৃষ্টিতেও কেন ডুবে যায় ঢাকা? – DW – 27.07.2019

‘দুই সিটিতে পরিকল্পনার অভাব’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা গেছে, চলতি বছরে বর্ষা মৌসুমের আগে জলাবদ্ধতা নিরসনে তারা বেশকিছু কাজ করেছেন। ঢাকা ওয়াসার কাছ থেকে দীর্ঘ ৩৪ বছর পর শাখা-প্রশাখাসহ ১১টি অচল খাল, বর্জ্যে জমাটবদ্ধ পাঁচটি বক্স কালভার্ট ও প্রায় ২০০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের নর্দমার মালিকানা নিয়েছে সংস্থাটি। দায়িত্বভার গ্রহণের পর এসব খাল, বক্স-কালভার্ট ও নর্দমা হতে বর্জ্য অপসারণ, সীমানা নির্ধারণ ও দখলমুক্ত কার্যক্রম শুরু করে তারা।

এসব খাল, বক্স-কালভার্ট ও নর্দমা হতে ২০২১ সালে আট লাখ ২২ হাজার টন, ২০২২ সালে ৪ লাখ ৪৪ হাজার টন এবং ২০২৩ সালের আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ২ লাখ টন বর্জ্য ও পলি অপসারণ করা হয়েছে বলে দাবি সংস্থাটির কর্মকর্তাদের। এছাড়া জলাবদ্ধতা নিরসনে নিজস্ব অর্থায়নে ২২৫ কোটি টাকা ব্যয়ে গত তিন বছরে ১৩৬টি স্থানে অবকাঠামো নির্মাণ ও উন্নয়ন করেছে ডিএসসিসি।

অন্যদিকে জলাবদ্ধতা নিরসনে ডিএনসিসি ১ হাজার ২৫০ কিলোমিটার ড্রেন নিয়মিত পরিষ্কার করার পাশাপাশি পানিপ্রবাহ নিশ্চিত করেছে। এছাড়া খাল থেকে গত এক বছরে প্রায় ২ লাখ টন বর্জ্য অপসরণ করেছে। কল্যাণপুরে বেদখল হওয়া ৫৩ একর জায়গা উদ্ধারের পর এখন খনন কাজ চলছে। কল্যাণপুর ‘রিটেনশন পন্ড’ থেকে অপসারণ করা হয়েছে ৩০ লাখ ঘনফুট স্ল্যাজ। এছাড়া ২৯টি খাল নিয়ে কাজ করেছে ডিএনসিসি। খালগুলোর নিয়মিত পরিচ্ছন্নতা কার্যক্রম চলমান আছে।

ডিএনসিসি সূত্রে জানা গেছে, উত্তরের মোট ১০৩টি স্থানে জলাবদ্ধতা সৃষ্টির পরিবেশ আছে। সেখানে অল্প বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়। স্থানগুলো চিহ্নিত করে সংস্থাটি কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া তাৎক্ষণিক কোথাও জলাবদ্ধতা হলে ডিএনসিসির কুইক রেসপন্স টিম প্রস্তুত থাকছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

কীভাবে আমরা ঢাকার জলাবদ্ধতা দূর করে দিলাম | প্রথম আলো

জলাবদ্ধতা নিরসনে দুই সিটি বিভিন্ন প্রকল্প নিয়ে কাজ করলেও এসব কাজকে ‘অপরিকল্পিত’ এবং অনেকাংশে ‘দায়সারা’ বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

নগর পরিকল্পনাবিদ ও ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (আইপিডি) নির্বাহী পরিচালক ড. আদিল মুহাম্মদ খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘সিটি করপোরেশন মূলত নতুন লাইন তৈরিতে ব্যস্ত। কিন্তু যে ড্রেনগুলো আছে সেগুলোর কোথায় কোথায় ব্লক হয়েছে তা পরিষ্কার করার ব্যাপারে তারা মনোযোগী নয়। ফলে বেশি কাজ দেখানোর জন্য নতুন করে ব্যাপক অর্থ খরচ করা হলেও পুরো নেটওয়ার্কিং না হওয়ায় সুফল মিলছে না।’

ঢাকার জলাবদ্ধতা: 'দুই মেয়র নাগরিকদের সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছেন' | undefined

বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) ইনস্টিটিউট অব ওয়াটার অ্যান্ড ফ্লাড ম্যানেজমেন্ট বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শাহ আলম খান বলেন, ‘জলাবদ্ধতা নিরসনের উপায় দুটি। ভূ-গর্ভে পানি শোষণ করে নেওয়া এবং খাল, বিল ও ড্রেন দিয়ে নদীতে চলে যাওয়া। জলাশয় আর খাল বিল ভরাট হয়ে যাওয়াতে প্রাকৃতিক সিস্টেম যেহেতু ধ্বংস হয়ে গেছে তাই কৃত্রিম সুযোগ তৈরি করতে হবে পানি যাওয়ার। কিন্তু দুই সিটি করপোরেশনের কাজে এমন কোনও পরিকল্পনার ছাপ নাই।’

SHARE THIS ARTICLE