আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ জাকাত ইসলামের মূল ভিতের অন্যতম একটি। এটি আবশ্যকীয় আর্থিক ইবাদতের অন্তর্ভুক্ত। আর ভিত বলা হয় ওই বস্তুকে যাকে নির্ভর করে মূল বস্তুটি গড়ে ওঠে। হাদিস শরিফে জাকাতকে ইসলামের ভিত উল্লেখ করে বিশ্বনবী (সা.) বলেন, ইসলামের মূল স্তম্ভ পাঁচটি। ১. আল্লাহ ছাড়া প্রকৃত কোনো উপাস্য নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মদ (সা.) আল্লাহর রাসুল—এ কথার সাক্ষ্য প্রদান করা, ২. সালাত কায়েম করা, ৩. জাকাত আদায় করা, ৪. হজ করা এবং ৫. রমজানের রোজা রাখা। (বুখারি, হাদিস : ৮)
জাকাতের প্রধান ও মূল উদ্দেশ্যই হলো আল্লাহর বিধান পালনের পাশাপাশি দারিদ্র্য বিমোচন। যাদের সম্পদ অর্জনের কোনো যোগ্যতা বা সামর্থ্য ও সুযোগ নেই কিংবা পূর্বসূরিদের কাছ থেকে জীবন ধারণের জন্য যা প্রয়োজন তা পাওয়ার সুযোগ নেই তাদের অধিকার আল্লাহ নির্ধারণ করে দিয়েছেন ধনীদের সম্পদে। যারা তা আদায় করবে তাদের জন্য রয়েছে অফুরন্ত উপকারিতা এবং মহা প্রতিদান। ইরশাদ হয়েছে, ‘এবং যারা সালাত আদায় করে, জাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও পরকালে ঈমান রাখে আমি তাদের মহাপুরস্কার দেব।’ (সুরা নিসা, আয়াত : ১৬২)
নিম্নে জাকাত আদায়ে আল্লাহর পক্ষ থেকে মহাপুরস্কার অর্জনের পাশাপাশি ব্যক্তিগত ও সামাজিক কয়েকটি সুফল বা উপকারিতা উল্লেখ করা হলো—
জাকাত আদায় প্রকৃত মুমিনের পরিচয়
এক বর্ণনায় নবী করিম (সা.) জাকাতকে দলিল হিসেবে উল্লেখ করে বলেন, ‘সালাত হচ্ছে একটি উজ্জ্বল জ্যোতি। সদকা তথা জাকাত হচ্ছে দলিল। ধৈর্য হচ্ছে জ্যোতির্ময়।’ (মুসলিম, হাদিস : ৪২২)
অর্থাৎ জাকাত হলো দাতার দৃঢ় ও মজবুত ঈমানের পরিচয় ও নিদর্শন। আল্লাহর দয়া ও অনুগ্রহের স্বীকারোক্তি ও কৃতজ্ঞতা জ্ঞাপন। সম্পদের মায়া ত্যাগ করে খুশি মনে দান করা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্যের আলামত। এই মর্মে আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘তাদের মধ্যে এমন ব্যক্তিও আছে, যারা আল্লাহর সঙ্গে অঙ্গীকার করেছিল, তিনি যদি নিজ অনুগ্রহে আমাদের দান করেন, তবে অবশ্যই আমরা সদকা করব এবং নিঃসন্দেহে আমরা সেলাকদের অন্তর্ভুক্ত হবো।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ৭৫)
তাই একনিষ্ঠভাবে জাকাত প্রদান করা প্রকৃত মুমিনেরই পরিচয়।
অন্তরের আত্মশুদ্ধি
জাকাত আদায়ের আরেকটি সুফল বা উপকারিতা হচ্ছে, অন্তরের আত্মশুদ্ধি। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘(হে নবী) আপনি তাদের ধন-সম্পদ থেকে জাকাত গ্রহণ করুন, যার দ্বারা আপনি তাদের পবিত্র ও পরিশুদ্ধ করে দেবেন এবং তাদের জন্য দোয়া করুন। নিশ্চয়ই আপনার দোয়া তাদের জন্য প্রশান্তি। আল্লাহ সর্বশ্রোতা, সর্বজ্ঞ।’ (সুরা তাওবা, আয়াত : ১০৩)
এখানে পবিত্র করার ব্যাখ্যা হচ্ছে, কৃপণতা, দুনিয়ার আসক্তি ও ধন-সম্পদের মোহ থেকে অন্তরকে পরিশুদ্ধ করা। সারা জীবন শুধু সম্পদ অর্জনের পেছনে ব্যয় করা থেকে নিজেকে সামান্য অব্যাহতি দেওয়া।
ধন-সম্পদে পবিত্রতা ও বরকত লাভ
জাকাত শব্দটি আরবি। এর অর্থ হলো পবিত্র করা। যেহেতু এটি মানুষের ধন-সম্পদকে পবিত্র করে বরকতময় করে তোলে, তাই একে পরিভাষায় জাকাত বলা হয়। মুসনাদে আহমদের বর্ণনা, আনাস (রা.) বলেন, এক ব্যক্তি মহানবী (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমি সম্পদশালী ও আমার আত্মীয়-স্বজনও অনেক। আর আমি শহরে বাস করি। আমাকে বলুন, কিভাবে নিজের সম্পদ ব্যয় করব? তিনি বলেন, জাকাত আদায় করবে। কারণ জাকাত হলো সম্পদের পবিত্রতা, তা তোমাকে পবিত্র করবে। আত্মীয়তার সম্পর্ক রক্ষা করবে। অসহায়, মিসকিন, প্রতিবেশী ও অভাবীদের হকের প্রতি লক্ষ্য রাখবে। (মুসনাদে আহমদ, হাদিস : ১২৩৯৪)
সামাজিক ঐক্য ও সমপ্রীতি সৃষ্টির কারণ
জাকাত আদায়ের মাধ্যমে ধনীদের মধ্যে এই অনুভূতি সৃষ্টি হয় যে সামাজিক উন্নয়নে তাদের অনেক বড় দায়িত্ব আছে। সাধ্যানুযায়ী সবার উচিত নিজ নিজ কর্তব্য পালন করা। যার ফলে ধনী-গরিবের মধ্যকার ব্যবধান দূর হয় এবং সামাজিক সমপ্রীতি গড়ে ওঠে। আর দরিদ্র মানুষের মনে এ অনুভূতি সৃষ্টি হয় যে শুধু অভাবী হওয়ার কারণে সে অবহেলিত নয়। মানুষের হক প্রদানে অবশ্যই তার প্রতি সম্মানজনক মনোভাব রাখতে হবে।