জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে বহু বাংলাদেশির শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত

আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্ক:

উচ্চতর শিক্ষার জন্য জার্মানির বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিবছরই পড়তে আসেন শত শত বাংলাদেশি শিক্ষার্থী৷ কিন্তু এবার করোনার কারণে ভিসা প্রক্রিয়াকরণে দীর্ঘসূত্রতায় অনেকেরই শিক্ষাজীবন অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে৷

করোনার বিধিনিষেধ কাটিয়ে জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়গুলো শীতকালীন সেমিস্টারের ক্লাস অনলাইনের পরিবর্তে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতিতে ক্যাম্পাসে নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ কিন্তু গত কয়েক মাস আগে আবেদন করেও বাংলাদেশে জার্মান দূতাবাসে ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাচ্ছেন না শিক্ষার্থীরা৷

Things to keep in mind while selecting a German university – Study Free in  Germany

শীতকালীন সেমিস্টার শুরুর কেবল এক মাস বাকি৷ অনেকের আশঙ্কা, সময়মতো ভিসা না পেলে তাদের সেমিস্টার ড্রপ করতে হতে পারে৷ এ নিয়ে জার্মান দূতাবাসের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগ করেছেন বাংলাদেশি শিক্ষার্থীরা৷

দূতাবাস জানিয়েছে, করোনার কারণে বাংলাদেশে দীর্ঘসময় একাধিকবার লকডাউন চলতে থাকায় কর্মীসংখ্যা কমিয়ে আনতে হয়েছে৷ অন্যদিকে সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে ভিসা কার্যক্রম চালাতে গিয়ে স্বাভাবিক সময়ের চেয়ে দৈনিক ভিসার আবেদন গ্রহণের সংখ্যাও কমিয়ে আনতে হয়েছে৷

সদ্য সাবেক হওয়া বাংলাদেশে জার্মান রাষ্ট্রদূত পেটার ফারেনহোলৎসও বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের এমন দুর্দশার জন্য দুঃখ প্রকাশ করে জুন মাসে একটি টুইট করেন৷ দ্রুতই কর্মীসংখ্যা বাড়িয়ে শিক্ষার্থীদের ভিসা জটিলতাকে গুরুত্ব দিয়ে নিরসনের কথাও বলেছিলেন তিনি৷ কিন্তু দুই মাসেরও বেশি সময় পেরিয়ে গেলেও সে সংকটের সমাধান হয়নি৷

বাংলাদেশি শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি ইউনিভার্সিটি অফ ব্রেমেন এর ডিজিটাল মিডিয়া এন্ড সোসাইটি বিভাগের মাস্টার্সের ছাত্র মোঃ নাজিম উদ্দীন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও এ ব্যাপারে কথা বলেছেন৷

ডয়চে ভেলেকে নাজিম জানান, মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এরই মধ্যে বাংলাদেশে জার্মান দূতাবাস এবং বার্লিনে বাংলাদেশি দূতাবাসের মাধ্যমে জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গেও নিয়মিত যোগাযোগ করা হচ্ছে৷ তবে একই সঙ্গে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে সংকটের তড়িৎ সমাধান নাও হতে পারে, এমন আশঙ্কার কথাও তুলে ধরা হয়েছে৷

অনেক শিক্ষার্থীই তাদের আশঙ্কার কথা প্রতিবেদককে জানিয়েছেন৷ প্রায় সকলেই এরই মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য প্রয়োজনীয় পরিমাণের অর্থ ব্যাংকের ব্লকড অ্যাকাউন্টে জমা করে দিয়েছেন৷

Top 5 Universities in Germany with Fantastic Facilities - SPOTAHOME

চৈতী জান্নাত জানিয়েছেন, জার্মান দূতাবাসে এক বছর আগে তিনি ভিসার জন্য আবেদন করেছেন৷ কিন্তু এখনও কোনো উত্তর পাননি৷ অক্টোবরের শুরুতে বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত থেকে ক্লাসে শুরু করতে না পারলে হয়তো তাকে ভর্তি বাতিল করতে হতে পারে৷

ফ্রেডরিশ আলেক্সান্ডার ইউনিভার্সিটির ছাত্র মোস্তফা কামালকে ভিসার জন্য নয় মাস অপেক্ষা করতে বলা হলেও এক বছরেও তার সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়নি দূতাবাসের পক্ষ থেকে৷ বাংলাদেশে থেকে অনলাইনে দুই সেমিস্টারের পড়াশোনা শেষ করলেও পরবর্তী সেমিস্টার তাকেও বিশ্ববিদ্যালয়ে উপস্থিত থেকেই করতে হবে৷

সাজ্জাদ হোসেন কেম্পটেন অ্যাপ্লাইড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির অ্যাডমিশন লেটার পেলেও তাকে সেপ্টেম্বরের মধ্যে উপস্থিত থাকতে বলা হয়েছে৷ অন্যথায় তার আবেদন বাতিল হতে পারে৷

একই বিশ্ববিদ্যালয়ের ইলেক্ট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং শিক্ষার্থী শাহরিয়া ফরিদ এশাও একই ধরনের আশঙ্কার কথা তুলে ধরেছেন৷ তিনি জানিয়েছেন, তার বিশ্ববিদ্যালয় অক্টোবর থেকে ক্লাসে বাধ্যতামূলক উপস্থিতির নির্দেশ দিয়েছে৷ কিন্তু গত বছর নভেম্বরে ভিসার আবেদন করেও তিনি এখনও কোনো সাড়া পাননি৷

অনেক জার্মান বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনো কোনো বিষয়ে কেবল শীত বা গ্রীষ্মকালীন সেমিস্টারেই ভর্তির সুযোগ দেয়া হয়৷ এক্ষেত্রে অনেকে সেমিস্টার ড্রপ দিলে শিক্ষাজীবন থেকে এক বছর হারিয়ে ফেলার শঙ্কাও করছেন৷

এ বিষয়ে ডয়চে ভেলের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে জার্মান দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করলে বার্লিনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলা হয়৷ জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ইমেইলে যোগাযোগ করা হলে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানানো হয়েছে৷

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, ‘‘কোভিড-১৯ মহামারির কারণে ২০২০ সালের শুরু থেকে জার্মানিতে প্রবেশের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে৷ এর পরিপ্রেক্ষিতে কেবল এসব বিধিনিষেধের বাইরে থাকা ব্যক্তিদেরই ভিসা দেয়া হচ্ছে৷ এর মধ্যে দীর্ঘমেয়াদী ভিসা ক্যাটাগরি যেমন পারিবারিক পুনর্মিলন, পড়াশোনা এবং কিছু দক্ষ কর্মীদের ভিসাও রয়েছে৷”

বাংলাদেশের শিক্ষার্থীদের ভাসা জটিলতার বিষয়টিও জার্মান পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় অবগত বলে জানানো হয়েছে৷ ‘‘জার্মানি আসতে চাওয়া শিক্ষার্থীদের কঠিন পরিস্থিতির বিষয়টি আমরা অবগত রয়েছি৷ তবে দূতাবাস কর্মী এবং শিক্ষার্থী, উভয়ের সুরক্ষার জন্য বাংলাদেশসহ আমাদের সব দূতাবাস কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা হাতে নিয়েছে (যেমন শিফটে কাজ করা, আবেদনের জায়গা ও অপেক্ষার জায়গায় ন্যূনতম দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি)৷ এর ফলে আবেদনকারী ভিসার ক্ষেত্রে বিধিনিষেধের আওতায় না পড়লেও, পুরো আবেদন প্রক্রিয়ার ওপর প্রভাব পড়েছে এবং ভিসার অ্যাপয়েন্টমেন্ট পাওয়ার অপেক্ষা দীর্ঘ হচ্ছে৷ আমরা এখন ভিসা প্রক্রিয়াকরণ দ্রুত করার জন্য কী কী ব্যবস্থা নেয়া যায়, তা মূল্যায়ন করে দেখছি৷”

তবে এই দ্রুত করার প্রক্রিয়া কবে থেকে শুরু হবে, বা ভিসা না পেলে শিক্ষার্থীদের ব্যাপারে বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেয়ার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে অনুরোধ করা হবে কিনা, সে ব্যাপারে কিছু জানায়নি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়৷ ভিসা প্রক্রিয়াকরণে ধীরগতির মধ্যেও কিছু সংখ্যক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী সম্প্রতি জার্মানিতে আসতে পেরেছেন৷ তবে বাকিদের অক্টোবরে শীতকালীন সেমিস্টারে ক্যাম্পাসে উপস্থিত থেকে ক্লাস শুরুর কী হবে, সে অনিশ্চয়তা থেকেই যাচ্ছে৷ সূত্র: ডয়চে ভেলে।

SHARE THIS ARTICLE