ঝটপট ইফতার চটপট তৈরি

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ শুরু হয়েছে সিয়াম সাধনার মাস রমজান। সারাদিন রোজা রাখার পর সন্ধ্যায় পরিবারের সবাইকে নিয়ে ইফতার করা এ মাসের প্রতিদিনের অনুষঙ্গ। দিনভর না খেয়ে থাকার পর আমরা যেই ইফতার খাচ্ছি, সেটি অবশ্যই স্বাস্থ্যসম্মত হওয়া উচিত। পরিবারের বয়স্ক মানুষ আর ছোট বাচ্চাদের কথা চিন্তা করেই ইফতার তৈরি করা উচিত।

এখানে এমন কিছু ইফতার আইটেমের রেসিপি দেওয়া হয়েছে যা অল্পসময়ে ঝটপট তৈরি করা সম্ভব। প্রায় প্রতি ঘরেই এইসব আইটেম দিয়ে ইফতার করা হয়, স্বাস্থ্যসম্মত প্রণালী দেওয়া হলো নিচে।

ছোলা ভাজি

ইফতারের একটি মুখরোচক খাবার হল ছোলা ভাজি। আমরা রোযার মাস ছাড়াও সারা বছর কম বেশি ছোলা ভাজি খেয়ে থাকি।সচরাচর দেখা যায় বিকেলে ক্যান্টিনে বন্ধুরা বসে ছোলা ভাজি বেশি খাওয়া হয়। কিন্তু রোজার মাসে ইফতারের ছোলা ভাজির যে স্বাদ পাওয়া যায় অন্য সময় সে স্বাদ টা আর পাওয়া যায় না।

উপকরণ : ছোলা ও আলু পরিমান মত, কাচা মরিচ, কাচা পেয়াজ, রসুন বাটা, আদা বাটা, জিরা বাটা, সামান্য মসলা বাটা, হলুদের গুড়া, লবণ ও তেল।

প্রণালী : ছোলা রান্না করার আগের দিন রাতে বা ৪-৫ ঘন্টা আগে ভিজিয়ে রাখুন। ভিজানো ছোলা ও আলু টুকরো করে কেটে ভাল করে ধুয়ে নিন। তারপর লবণ ও কাচা মরিচ দিয়ে গরম তাপে সিদ্ধ করুন। গরম পাত্রে পরিমান মত তেল দিয়ে পেয়াজ কুচি হালকা বাদামী রঙ ভেজে নিন। এবার রসুন, আদা, জিরা ও মসলা বাটা ও সামান্য লবণ দিয়ে ভাল করে চুলার আচে মসলা গুলো কষিয়ে নিন। কষানো মসলার মধ্যে সিদ্ধ করা ছোলা ও আলু দিয়ে নাড়তে থাকুন প্রায় ২-৩ মিনিট। তারপর ছোলার মধ্যে কাচা-পেয়াজ কুচি একটু বেশি করে দিয়ে ১মিনিট নেড়ে চুলার আচ কমিয়ে পাত্রটি নামিয়ে ফেলুন।

পিয়াজু

গরম গরম পিয়াজু খেতে অনেক মজা। আমরা বিকেলের নাস্তা হিসেবে পিয়াজু, সিঙ্গারা, হালুয়া এই গুলো বেশি খেয়ে থাকি। কিন্তু রোজার মাসে সবার ঘরে ঘরে পিয়াজুর আইটেম থাকবেই। কম বেশি সবাই পিয়াজু বানাতে পারে, পিয়াজু বানানো খুবই সহজ। যে কোন ডাল দিয়ে পিয়াজু বানানো যায় তবে এর মধ্যে খেসারি ডালের পিয়াজু অনেক মচমচা হয়।

উপকরণ : যে কোন ডাল বাটা পরিমান মত, আদা বাটা, জিরা বাটা, রসুন বাটা, কাচা মরিচ কুচি, পেয়াজ কুচি, ধনিয়া পাতা কুচি, লবণ ও হলুদের গুড়া।

প্রণালী : প্রথমে ডাল ৪-৫ ঘন্টা ভিজিয়ে নিতে হবে। ভিজানো ডাল পাটায় বেটে হালকা মিহি করতে হবে। তারপর ডালের ভিতর সামান্যে লবন, বেশি করে পেয়াজ কুচি, আদা, জিরা, ও রসুন বাটা, কাচা মরিচ কুচি, হলুদের গুড়া ও ধনিয়া পাতা কুচি দিয়ে এক সাথে ভাল করে মিক্সড করুন।এবার চুলায় একটি পাত্র দিয়ে বেশি আচে গরম করে নিন। তারপর পাত্রে পরিমান মত তেল দিয়ে গরম করতে থাকুন। এবার ডাল বাটা হাতে গোল চ্যাপ্টা করে গরম ডুবো তেলে ছেড়ে দিয়ে ভাঁজতে থাকুন।পিয়াজু ভেজে অন্য একটা পাত্রে টিস্যু পেপার রেখে তার ওপর রাখুন। এবার গরম পিয়াজু ইফতারে মুড়ির সাথে বা ইফতারের শেষে গরম ভাতও পরিবেশন করতে পারেন।

সবজি পাকোরা

শরীর সুস্থ্য ও সবল রাখার জন্য আমাদের প্রতিদিন সবজি খাওয়া উচিত। রোজার দিন ইফতারে তাই যোগ করা যেতে পারে সবজি পাকোরা। বিভিন্ন সবজি দিয়ে তৈরি করা সবজি পাকোরা গরম গরম খেতে দারুন মজা।

উপকরণ : বাধা কপি কুচি, আলু কুচি, গাজর কুচি, মটরশুঁটি, পেয়াজ কুচি, কাচা মরিচ কুচি, ময়দা, নুডুস সিদ্ধ, কর্নফ্লাওয়ার, ডিম, ধনিয়া পাতা কুচি, সাদা গোলমরিচের গুড়া, লবণ ও তেল পরিমানমত।

প্রণালী : প্রথমে পরিমান মত গাজর, আলু ও মটরশুঁটি সিদ্ধ করে নিন। অন্য একটি পাত্রে ১ টা বা ২ টা ডিম ফাটিয়ে নিন। এবার ফাটানো ডিমের মধ্যে উপরক্ত সব উপকরন পরিমানমত দিয়ে ভাল করে মিক্সড করুন। তারপর একটি পাত্রে ডুবো তেল দিয়ে চুলায় আচ দিতে থাকুন। তেল গরম হলে তার মধ্যে মাখানো সবজি গোল গোল করে বা চ্যাপটা করে বা খামচিয়ে নিয়ে ডুবো তেলে ছেড়ে দিন। একটু লালচে রঙ এ ভেজে অন্য একটা পাত্রে তুলে রাখুন। এবার গরম গরম মচমচা সবজি পাকোরা যে কোন সস দিয়ে পরিবেশন করুন।

আলুর চপ

ইফতারের আরেকটি মুখরোচক আইটেম হলো আলু চপ। কম সময়ে ঝটপট তৈরি করে নিন মজাদার আলু চপ।

উপকরণ : আলু ২৫০ গ্রাম, পেয়াজ কাটা ও বাটা, রসূন, আদা বাটা, জিরা গুড়া, কাবাব মসলা, কাঁচা মরিচ, কিমা, বেসন, ডিম, বিস্কিট গুড়া, গরম মসলা, তেল, লবন ও তেজপাতা।

প্রণালী : প্রথমে আলু সিদ্ধ করে চটকে নিতে হবে। এরপর সিদ্ধ আলু সব মসলা মাখিয়ে চুলে দিয়ে কষাতে হবে। কিমা আগেই কষিয়ে নিতে হবে। এরপর আলু কিছুক্ষণ হওয়ার পর কিমা দিয়ে আবার নাড়তে হবে। মাখা মাখা হয়ে গেলে চুলা থেকে নামাতে হবে।এরপর ওই মিশ্রণ চপের আকারে তৈরী করতে হবে। বানানো চপগুলো বিস্কিট গুড়া মাখিয়ে ১/২ ঘন্টা নরমাল ফ্রিজে রাখতে হবে। একটা বাটিতে বেসন, ডিম, আদা, পেয়াজ, সামান্য রসূন বাটা, একটু শুকনা মরিচের গুড়া, পরিমানমতো লবন, ১ চামচ কর্নফ্লাওয়ার ও বেকিং পাউডার পানি দিয়ে গোলাতে হবে। খেয়াল রাখতে হবে গোলানো কাই যেন খুব পাতলা বা ঘন না হয়। কড়াই বা ফ্রাইপেন-এ তেল গরম করতে হবে। ফ্রিজে রাখা চপ বেসনের কাইতে চুবিয়ে গরম তেলে হালকা আচে বাদামি রঙ ধারণ করা পর্যন্ত ভাজতে হবে।

ডিম চপ

ঝটপট ও অল্প সময়ে ডিম দিয়ে হরেক রকমের খাবার তৈরি করা যায়। এই রমজান মাসে ইফতারের টেবিলে সুস্বাদু ডিমের চপ বানিয়ে পরিবারে পরিবেশন করতে পারেন।

উপকরণ : সিদ্ধ করা ডিম ৪টা, কাচা ডিম ২টা, সিদ্ধ করা আলু ২টা, ময়দা পরিমান মত, আদা ও পেয়াজ বাটা, লবন, বিস্কুটের গুড়া পরিমানমত, ঘি ও যে কোন সস ইত্যাদি।

প্রণালী : প্রথমে ডিমগুলো সিদ্ধ করে নিন। সিদ্ধ করা ডিমের খোসা ছাড়িয়ে ডিম ছুরি দিয়ে কেটে কুসুম গুলো বের করে অন্য পাত্রে রাখুন। এবার কুসুমের সাথে আদা ও পেয়াজ বাটা এবং নুন দিয়ে ভাল করে হাত দিয়ে পেস্ট করুন। পেস্ট করা কুসুম সিদ্ধ করা ডিমের খোলের ভিতর সমান করে পুরু করে ভরে দিন। তারপর সিদ্ধ করা আলুর সাথে পরিমান মত ময়দা ও নুন একসাথে হালকা ঘন করে পেস্ট করে ডিমের ওপর পাতলা পর্দার মত মাখিয়ে নিন। এবার কাচা ডিমগুলো ভাল করে গুলিয়ে নিন । আলুর প্রলেপ দেওয়া ডিমগুলো একটি একটি করে গোলানো কাচা ডিমের মধ্যে বিস্কুটের গুড়া দিয়ে ভাল করে মাখিয়ে ঘি-এ বাদামী রঙ এ ভেঁজে নিন। তৈরি হয়ে গেল মজাদার ডিমের চপ । ইফতারের টেবিলে অনান্য খাবারের সাথে যে কোন প্রডাক্টের সস দিয়ে ডিমের চপ পরিবেশন করুন। ডিমের চপ অনেক সুস্বাদু ও মজাদার একটা খাবার।

চিড়ার চপ

ইফতারের একটি ব্যতিক্রমী উপাদন আইটেম হতে পারে চিড়ার চপ। দেখে নিন কিভাবে বানাবেন।

উপকরণ : চিড়া – ১কাপ, পিয়াজ কুচি – ১/২ কাপ, কাচা মরিচ কুচি, গোল মরিচ গুড়া, লবণ চালের গুড়া – ১ টেবিল চামচ (মচমচে করার জন্য), ডিম – ১ টা, ধনে পাতা কুচি – প্রয়োজনমত, তেল – চপ ভাজার জন্য পরিমাণমত।

প্রণালী : চিড়া ভাল করে ধুয়ে, পানিতে ৫ মিনিটের মতন ভিজিয়ে রাখতে হবে। ৫ মিনিট পর ভাল করে পানি ঝরিয়ে চিড়াগুলিকে একটি বাটিতে নিতে হবে। লক্ষ্য রাখতে হবে চিড়াতে যেন পানি না থাকে। এরপর এক এক করে সব উপকরণ মিশাতে হবে। এইবার এই মিশ্রণ দিয়ে ছোট ছোট বল বানিয়ে, চপ এর মতন সাইজ করে একটা প্লেটে রাখতে হবে। এখন ফ্রাই প্যানে অল্প তেল দিয়ে চপগুলি ভাজতে হবে। যখন চপ গুলি বাদামি রঙ হবে তখন প্লেটে তুলে রাখুন। তৈরি হয়ে গেল মজাদার চিড়ার চপ!

সবজি হালিম

রমজানে হোটেল-রেস্তোরায় বিক্রি হওয়া হালিম যতোই সুস্বাদু হোক, সেগুলো কতটুকু স্বাস্থ্যসম্মত তা নিয়ে সন্দেহ রয়েই যায়। এরচেয়ে ঘরেই তৈরি করতে পারেন স্বাস্থ্যসম্মত সবজি হালিম।

উপকরণ: পোলাওয়ের চাল ১০০ গ্রাম, মসুর ডাল ১০০ গ্রাম, মাষকলাইয়ের ডাল ৫০ গ্রাম, মুগডাল ১০০ গ্রাম, বুটের ডাল ৫০ গ্রাম, গমের গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, পেঁয়াজ কিউব করে কাটা ১ কাপ, মিহি করে পেঁয়াজ কাটা ২ টেবিল চামচ, আস্ত কাঁচামরিচ ১০-১২টি, ধনেপাতা কুচি ২ টেবিল চামচ, আদা কুচি মিহি করে কাটা ১ চা চামচ, লেবু টুকরো করা, হলুদ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, মরিচ গুঁড়া ১ টেবিল চামচ, আদা বাটা আদা টেবিল চামচ, রসুন বাটা ১ টেবিল চামচ, ঘি ১ টেবিল চামচ, তেল পরিমাণমতো, পানি পরিমাণ মতো, তেঁতুলের ঘন পানি আধা কাপ, গাজর, টমেটো, ফুলকপি ছোট ছোট টুকরো করা, শুকনো মরিচ ৫-৬টি। হাড়সহ ছোট ছোট টুকরো গরুর মাংস ৫০০ গ্রাম, হালিমের মশলা ২ টেবিল চামচ। 

প্রণালী: প্রথমে মাংস ভালো করে ধুয়ে রাখুন। এরপর পাতিলে তেল গরম করে এতে পেঁয়াজ এবং আস্ত গরম মশলা দিয়ে ভাজুন। বাটা ও গুঁড়া মশলা স্বাদ অনুযায়ী লবণ এবং পরিমাণ মতো পানি দিয়ে মশলা কষিয়ে নিন। এরপর এতে মাংস দিন। ভালো করে কষিয়ে পরিমাণ মতো পানি দিয়ে ঢেকে রান্না করুন। মাংস হয়ে এলে এতে হালিমের মশলা ও কাঁচা মরিচ দিয়ে নেড়ে নামিয়ে রাখুন। হালিমের শস্য আলাদা আলাদা পানিতে ভিজিয়ে রাখুন। প্রায় ৪-৫ ঘণ্টা। এরপর সব শস্য একসঙ্গে মিশিয়ে ধুয়ে নিন। কিছুক্ষণ গরম পানিতে ভিজিয়ে রেখে সিদ্ধ করুন।

এরপর রান্না করা মাংসের সঙ্গে মিশিয়ে জ্বাল দিতে থাকুন। খেয়াল রাখুন নিচে যাতে লেগে না যায়। সব সবজি ধুয়ে নিন। হালিম প্রায় সিদ্ধ হয়ে এলে এতে আরও হালিমের মশলা এবং সবজিগুলো দিয়ে নাড়তে থাকুন। হালিম ঘন হলে নামিয়ে নিন। এরপর গরম গরম হালিমের সঙ্গে আদা কুচি, পেঁয়াজ বেরেস্তা, ধনেপাতা ও কাঁচামরিচ কুচি, তেঁতুল পানি বা লেবুর রস দিয়ে পরিবেশন করুন।

বুটের ডালের হালুয়া

ইফতারের আরেকটি মুখরোচক ব্যতিক্রমী আইটম হতে পারে বুটের ডালের হালুয়া। জেনে নিন কিভাবে তৈরি করবেন।

উপকরণ: বুটের ডাল ১ কাপ, গরুর দুধ ২ কাপ, লাল চিনি ১ কাপ , লবণ ১ চিমটি খাঁটি গাওয়া ঘি/তেল আধা কাপ, এলাচ ২ টি, দারুচিনি ২ টুকরা. তেজপাতা ১ টি, বাদাম কুচি ২ টেবিল চামচ, কিসমিস ১ টেবিল চামচ।

প্রণালি : প্রথমে বুটের ডাল ধুয়ে ১ ঘণ্টা ভিজিয়ে রাখুন। এরপর পরিমাণমত পানি দিয়ে বুটের ডাল সিদ্ধ করে পানি শুকিয়ে নিন। গরুর দুধে অল্প পানি মিশিয়ে নিন। এবার সিদ্ধ বুটের ডালে একটু একটু দুধ মিশিয়ে ব্লেন্ড করে নিন, পাটায়ও বেটে নিতে পারেন, যদি পাটায় বেটে নেন তবে সে ক্ষেত্রে দুধ দেবার দরকার হবেনা দুধ একবারে হালুয়া তৈরির সময় দিলেই হবে। এখন ননস্টিক ফ্রাইং প্যানে খাঁটি গাওয়া ঘি/তেল গরম দিয়ে একে একে এলাচ, দারুচিনি, তেজপাতা দিয়ে দিন। এবার বুটের ডাল ও গরুর দুধ এর মিশ্রণ দিয়ে দিন। ঘন ঘন নাড়ুন যাতে নিচে পোড়া না লাগে। চুলার আঁচ মাঝারি রাখুন। এরপর লাল চিনি দিয়ে দিন, এক চিমটি লবণ দিন।বাদাম কুচি এবং কিসমিস দিন। নাড়তে নাড়তে এক পর্যায়ে হালুয়া যখন ঘন হয়ে প্যান থেকে ছেড়ে ছেড়ে আসবে তখন চুলা থেকে নামিয়ে নিন। যে প্লেট বা ট্রে তে হালুয়া ঢালবেন তাতে সামান্য গাওয়া ঘি মাখিয়ে নিন। এবার প্লেটে হালুয়া ঢেলে সমান করে বিছিয়ে পছন্দ মতো সাইজে কেটে নিন। উপরে বাদাম কুচি এবং কিসমিস দিয়ে সাজিয়ে পরিবেশন করুন গরম গরম সুস্বাদু বুটের ডালের হালুয়া।

SHARE THIS ARTICLE