আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনে (৩ নভেম্বর) বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প যে দেশটির জনগণের দ্বারা উপেক্ষিত হতে পারেন, তার পক্ষে বার্তা দিচ্ছে নির্বাচনী জনমত জরিপগুলো। কোভিড-১৯ প্রাদুর্ভাবের মতো মারাত্মক মহামারি এবং বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভসহ বিভিন্ন ইসু্য যে তার পুনর্র্নির্বাচনী লড়াইকে ডুবিয়ে দিচ্ছে, তা অনেকটা স্পষ্ট এসব জরিপে। সংবাদসূত্র :স্ট্রেইট টাইমস গত শুক্রবার নির্দলীয় ‘কুক পলিটিক্যাল রিপোর্টের’ জাতীয় সম্পাদক অ্যামি ওয়াল্টার লিখেছেন, ‘বিগত দুই সপ্তাহে মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচন নিয়ে হওয়া প্রতিটি জনমত জরিপ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের পুনরায় নির্বাচিত হওয়ার সম্ভাবনার মারাত্মক এক চিত্র তুলে ধরেছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রেসিডেন্ট হিসেবে তার প্রতি সমর্থনের হার এখন ৪১ শতাংশ। সাম্প্রতিক জনমত জরিপে ডেমোক্রেটিক পার্টির প্রার্থী এবং বারাক ওবামা প্রশাসনের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের চেয়ে গড়ে ৯ থেকে ১০ পয়েন্টে এগিয়ে রয়েছেন।’ এনপিআর/পিবিএস নিউজ আওয়ার/মেরিস্টের জনমত জরিপ অনুযায়ী, ট্রাম্পকে জনগণের সমর্থন না দেওয়ার হার এখন রেকর্ড সর্বোচ্চ। গত ২২ থেকে ২৫ জুন দেড় হাজারের বেশি নিবন্ধিত ভোটারের অংশগ্রহণে ওই জরিপটি করা হয়। তাতে দেখা যাচ্ছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের পক্ষে ভোট পড়েছে মাত্র ৪০ শতাংশের কিছু বেশি। এর আগে নিউইয়র্ক টাইমস-সিয়ানা কলেজের জরিপে দেখা গেছে, মিশিগান, পেনসিলভেনিয়া ও উইসকনসিনে ট্রাম্পের চেয়ে দুই অঙ্কের ব্যবধানে এগিয়ে আছেন বাইডেন। এছাড়া ফ্লোরিডা, অ্যারিজোনা ও উত্তর ক্যারোলিনায় তা যথাক্রমে ৬, ৭ ও ৯ শতাংশ। অথচ ২০১৬ সালের নির্বাচনে এসব রাজ্য ছিল ট্রাম্পের তীর্থভূমি। এছাড়া উলেস্নখ করার মতো বিষয় হলো, বয়স্ক শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন কমে গেছে। অথচ পুনর্র্নির্বাচিত হওয়ার ক্ষেত্রে এসব ভোটারের ভোটকেই তুরুপের তাস হিসেবে ভাবা হচ্ছিল। বলা হচ্ছে, মহামারি মোকাবিলা ও বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ ও পুলিশি সহিংসতা নিয়ে ট্রাম্পের বিতর্কিত অবস্থানের নেপথ্য কারণ হিসেবে কাজ করেছে। জর্জিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. চার্লস বুলোক বলেন, ‘ট্রাম্পের জন্য দুর্ভাগ্যজনক বিষয় হলো, কিছু সংখ্যক ভোটার বৈচিত্র্যপূর্ণ হওয়ায় এবং প্রজন্ম বদলের কারণেও প্রতি বছর পার হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তার শিবিরে থাকা লোকদের মধ্যে ট্রাম্পের প্রতি সমর্থন কমেছে।’ রাষ্ট্রবিজ্ঞানের এই অধ্যাপক আরও বলেন, ‘সাধারণত, যে ব্যক্তি কম ব্যবধানে নির্বাচিত হন, তিনি তার সমর্থন বাড়ানোর জন্য মানুষের আরও কাছাকাছি গিয়ে তাদের মন জয়ের চেষ্টা করেন। কিন্তু ট্রাম্প কখনোই তা করেননি এবং তার শিবিরে নতুন লোকদের আনার লক্ষ্যে নীতিনির্ধারণী সিদ্ধান্তও তৈরি করা হয়নি।’ ‘কুক পলিটিক্যাল রিপোর্টের’ জাতীয় সম্পাদক অ্যামি ওয়াল্টার লিখেছেন, ‘ট্রাম্পের বড় চ্যালেঞ্জ দেশের বাইরে নয়, অভ্যন্তরে। তিনি দায়িত্বে রয়েছেন এবং যখন দায়িত্বে থাকবেন, তখন আপনাকে প্রমাণ করতে হবে, দেশে বিরাজমান ইসু্যগুলো কার্যকরভাবে আপনি মোকাবিলা করছেন। এখন যা বর্ণবাদ ও করোনাভাইরাস। কিন্তু ভোটাররা তাকে উভয় ক্ষেত্রে ব্যর্থ হতে দেখছেন।’ কৃষ্ণাঙ্গ জর্জ ফ্লয়েডের মৃতু্যর পর সৃষ্ট পরিস্থিতি সামলাতে ট্রাম্পকে ব্যর্থ মনে করছেন অনেকেই। এক জরিপে দেখা যাচ্ছে, প্রতি ১০ জনে তিনজন ভোটার মনে করেন, ফ্লয়েড হত্যার পর ট্রাম্প সঠিকভাবে পদক্ষেপ নিয়েছেন। অন্যদিকে, তার প্রশাসনের বিরুদ্ধে হওয়া আন্দোলনের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন ৬১ শতাংশ ভোটার। এছাড়া করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় ট্রাম্পকে সমর্থন জানিয়েছেন ৪৪ শতাংশ ভোটার। আর এর বিরোধিতা করেছেন ৫২ শতাংশ। করোনাভাইরাস পরিস্থিতি থেকে বর্ণবাদবিরোধী বিক্ষোভ মোকাবিলায় ট্রাম্পের প্রতি আস্থা হারিয়েছেন মার্কিনিরা। এসব বিষয়ই তার জনপ্রিয়তা কমার ক্ষেত্রে বড় ভূমিকা রাখছে। মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পও বলেছেন, ‘আমাকে দেশের অনেক মানুষই ভালোবাসে না। আর এ কারণেই হয়তো আগামী নভেম্বরের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থী জো বাইডেন ‘প্রেসিডেন্ট’ নির্বাচিত হতে যাচ্ছেন।’ ২৬ জুন ‘ফক্স নিউজ’কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ডোনাল্ড ট্রাম্প এ কথা বলেছেন।