প্রকৃতিকে আঘাত করলে, প্রকৃতি নিজেই প্রতিশোধ নিয়ে নেয়

মাষ্টার সিরাজী নবাবঃ করোনায় আক্রান্ত হচ্ছে দেশের পর দেশ। আক্রান্ত লোকের সাথে সাথে বাড়ছে মৃত্যুর মিছিল। ফলে পাল্টে যাচ্ছে আমাদের পৃথিবী।

দীর্ঘমেয়াদী লকডাউনে হু হু করে কমছে বায়ুদূষণের মাত্রা!
চীন, ইটালী বা ব্রিটেনের আকাশে অবিশ্বাস্য গতিতে কমছে নাট্রোজেন ডাই অক্সাইড, সালফার ডাই অক্সাইড আর কার্বন মনোক্সাইডের মাত্রা! পরিবেশবিদদের হতবাক করে নিউইয়র্কের আকাশে দূষণের মাত্রা কমেছে ২০% এরও বেশী! স্রেফ উপগ্রহ ছবিতে নয়, ঘরবন্দী ইউরোপের মানুষ খালি চোখেও দেখতে পাচ্ছে ঝকঝকে নির্মল আকাশ! স্মরণকালের মধ্যে যা কখনো দেখেনি তারা! দল বেঁধে ফিরে আসছে পরিযায়ী পাখির দল। সভ্যতা থেকে দূরে সরে যাওয়া নিরীহ ডলফিনের ঝাঁক ফিরে আসছে সমুদ্র সৈকতে মানুষের কাছাকাছি। কমেছে বিশ্ব ঊষ্ণায়নের হারেও।

ক্ষুদ্র এক ভাইরাস গোটা দুনিয়ার ভোল পাল্টে দিচ্ছে । পাল্টে দিচ্ছে আমাদের মানসিকতা, আমাদের জীবনযাত্রা। একদিকে সীমান্ত মুছে গিয়ে গোটা পৃথিবী দাঁড়িয়েছে এক আকাশের নীচে, অজানা অচেনা প্রতিপক্ষের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে নেমেছে একজোট হয়ে।

এরপর ঘরবন্দী হয়ে যাওয়া মানুষ প্রাথমিক ধাক্কাটুকু সামলে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে প্রতিবেশীর দিকে। হয়তো এ মহামারী থেকে শিক্ষা নিয়ে মানুষ চারপাশের পরিবেশ নিয়ে ছিনিমিনি খেলার আগে ভাববে আত্মীয়, বন্ধু, পড়শীদের কথা। অর্থাৎ বাসযোগ্য আমাদের পৃথিবীর কথা।

করোনা ঢেউ স্রেফ এই এক-দু’মাসের গল্প নয়। একটা ভ্যাকসিন আবিষ্কার হয়ে বাজারে আসতে সময় নেবে একটি নির্দিষ্ট সময়। এরমধ্যে পৃথিবীর অন্ততঃ দুই-তৃতীয়াংশ মানুষ আক্রান্ত হবে দফায় দফায় যতদিন ভ্যাকসিন না আবিষ্কার হয়।

কী অদ্ভুত না? আমরা আমাদের ইমিউন সিস্টেমের কথা জানি। কিন্তু এই পৃথিবীরও যে একটা ইমিউন সিস্টেম আছে, তা ভাবিনি কখনো! যেন (মাত্রাতিরিক্ত দূষণ) ইমিউন সিস্টেম পৃথিবী সইতে না পেরে সেই তার সিস্টেমকে চালু করে দিয়েছে!

বিজ্ঞানীদের মতে আগামী একবছরে করোনা-বিপর্যস্ত মানুষ, দফায় দফায় ঘরবন্দী থাকা মানুষ পৃথিবীর দূষণ কমিয়ে ফেলবে প্রায় ৩০% থেকে ৪৫%! পরিবেশ ফিরে যাবে ৫০০ বছর আগে, বিশুদ্ধতার নিরিখে। মাস’ছয়েকের মধ্যে কমতে থাকবে হিমবাহের গলন, বন্ধ হয়ে যাবে বছরখানেকের মধ্যে। কমবে ক্যানসার, কিডনী, শ্বাসযন্ত্র ও অন্যান্য দূষণজনিত রোগ।

নতুন পৃথিবীতে নতুনভাবে নামবে মানুষ, ভাঙাচোরা অর্থনীতি, থমকে যাওয়া শিল্প, আমূল বদলে যাওয়া জীবনকে নতুন করে বাঁধতে। ধূলো-ধোঁয়া-অন্ধকার পেরিয়ে সেই নতুন পৃথিবীর সোনালী আলোর রেখা হয়ত দেখা যাচ্ছে এখন থেকেই!

পৃথিবীতে মারণাস্ত্র মজুদ না করে মানবীয় উপাদান মজুদ করলেই আমরা সেই সাম্যের গান গাইতে পারতাম, “মানুষ মানুষের জন্য, জীবন জীবনের জন্য।”

SHARE THIS ARTICLE