ভিশন ২০৩০ঃ যেসব সুবিধা মিলছে সৌদি প্রবাসী বাংলাদেশিদের

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ মধ্যপ্রাচ্যের অন্যতম শীর্ষ ধনী দেশ সৌদি আরব। জ্বালানি তেলের সর্বোচ্চ মজুদে দেশটির অবস্থান বিশ্বে দ্বিতীয়। তেলভিত্তিক অর্থনীতির দেশ হলেও তেলের ওপর নির্ভরতা কমিয়ে বিকল্প আয়ের দিকে ঝুকছে দেশটি।

সৌদি আরবকে রক্ষণশীল সমাজ থেকে ধীরে ধীরে বের করে আনার উদ্যোগ নিয়েছেন যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। তিনি দেশে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সংস্কারের কাজ শুরু করেছেন। রক্ষণশীল মুসলিম রাষ্ট্রে বৈচিত্র‌্য এনে এর আধুনিকায়ন করা এবং বিদেশি বিনিয়োগ আকৃষ্ট করাই এর উদ্দেশ্য।

এরই মধ্যে বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে শ্রম বাজারের কাঠামোগত পরিবর্তন আনার উদ্যোগ নিয়েছে সৌদি আরব। শ্রম আইন সংশোধনসহ প্রবাসী কর্মীদের উন্নয়নে নানা উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে। বেতন বাড়ানো হয়েছে প্রবাসী শ্রমিকদেরও।

ফলপ্রসূ উন্মুক্ততা এবং অর্থনৈতিক ভিত্তির সম্প্রসারণ এবং বৈচিত্র্যের একটি নতুন পর্ব শুরু করেছে সৌদি। বিশাল উন্নয়ন প্রকল্পে পূর্ণ একটি নতুন বাস্তবতার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নিজ উদ্দমে এগিয়ে যাচ্ছে দেশটি।

অর্থনীতিকে বহুমুখীকরণ করে তুলতে ২০১৬ সালে ভিশন ২০৩০ ঘোষণা করেছেন সৌদি যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমান। এরই অংশ হিসেবে গত চার বছরে সাড়ে পাঁচ লাখ নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে দেশটিতে। যার সুফল পাচ্ছেন প্রবাসী বাংলাদেশিরাও।

বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় শ্রমবাজার সৌদি আরব। সৌদি আরবের প্রাইভেট সেক্টরে বাংলাদেশি ওভারসীজ কর্মী নিয়োগের সর্বোচ্চ সীমা ছিল ২৫ শতাংশ। সৌদি আইন মোতাবেক কোন প্রতিষ্ঠান ২৫ শতাংশের এর বেশি বাংলাদেশী কর্মী নিয়োগ দিতে পারবে না।

বর্তমানে সৌদি আরবের নতুন আইন মোতাবেক এখন থেকে দেশটির প্রাউভেট সেক্টরের যে কোন প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ ৪০ শতাংশ বাংলাদেশি অভারসীজ কর্মী নিয়োগ দিতে পারবে।

সে লক্ষ্যে সৌদি আরবের মানব সম্পদ ও সামাজিক উন্নয়ন মন্ত্রণালয় দেশটির প্রাইভেট সেক্টর গুলোতে বাংলাদেশি কর্মী নিয়োগের সর্বাধিক সীমা ২৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৪০ শতাংশ এ নির্ধারণ করেছে।

বর্তমানে প্রবাসী বাংলাদেশীদের মধ্যে সৌদি আরবে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক কর্মী কাজ করেন এবং তাদের সংখ্যা প্রায় ১.২ মিলিয়ন। যা নতুন আইনে অদূর ভবিষ্যতে প্রায় ২০ লক্ষ বাংলাদেশি অভারসীজ কর্মী সৌদি আরবে আজ করার সুযোগ পাবেন।

এদিকে দীর্ঘ ৭০ বছরের পুরনো কাফালা প্রথা বিলুপ্ত করার মধ্য দিয়ে শ্রম আইনের ঐতিহাসিক সংস্কার করে নতুন যুগের সূচনা করেছে সৌদি আরব। এখন থেকে দেশটিতে অবস্থানরত বিদেশি শ্রমিকরা তাদের নিয়োগকর্তার অনুমতি ছাড়াই চাকরি পরিবর্তন করতে পারবেন। এতে খুশি প্রবাসী বাংলাদেশি শ্রমিকরা।

সৌদি আরবের যুবরাজ মোহাম্মদ বিন সালমানও বিশ্বের শীর্ষ তেল রপ্তানিকারক দেশটির অর্থনীতিতে বৈচিত্র্য আনার লক্ষ্যে প্রধান সার্বভৌম সম্পদের তহবিল সংস্কারকে অগ্রাধিকার দিয়েছেন।

এরই মধ্যে সৌদি আরবে বসবাসরত অভিবাসী নাগরিকদের ব্যবসা বাণিজ্য পরিচালনা ও বিনিয়োগের নতুন সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। সৌদিতে বসবাসরত বাংলাদেশি ব্যবসায়ীরা নতুন এ সুযোগ গ্রহণ করে বৈধভাবে সৌদি আরবে ব্যবসা পরিচালনা করতে পারবেন।

সৌদি বাণিজ্য উপমন্ত্রী প্রকৌশলী আয়েদ আল-ঘোয়াইনাম সৌদি আরবে বসবাসরত সকল বাংলাদেশি ব্যবসায়ীদের অব্যাহত সুযোগ সুবিধা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। একই সাথে বাংলাদেশ হতে নতুন বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের সৌদি আরবে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন।

এদিকে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম দ্য ন্যাশনালের একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভিশন-২০৩০ উদ্যোগের অংশ হিসেবে ১ লাখ কোটি ডলার মূল্যের নতুন প্রকল্প গড়ে তুলছে সৌদি আরব। গত চার বছরে এ প্রকল্প ৫ লাখ ৫৫ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে।

এ উদ্যোগের অংশ হিসেবে আগামী দশকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন জ্বালানি তেল কোম্পানি সৌদি আরামকো দেশটির বেসরকারি খাতে ১ লাখ ৩০ হাজার কোটি ডলার বিনিয়োগ করবে।

পাশাপাশি সংস্থাটি সৌদিদের বাড়ির মালিকানা বৃদ্ধি এবং বেকারত্বের হার কমিয়ে আনারও লক্ষ্য নিয়েছে। এছাড়া ২০৩০ সালের মধ্যে নাগরিকদের বাড়ির মালিকানা ৬০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৭০ শতাংশে উন্নীত করার ওপর জোর দিচ্ছে সৌদি আরব।

সৌদি আরব চুক্তিভিত্তিক সম্পর্কের উন্নয়নের লক্ষ্যে, যেমন- কাজের চুক্তির জন্য ডকুমেন্টেশন এবং ডিজিটাইজেশন প্রোগ্রাম, মজুরিসহ কাজের পরিবেশের উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন উদ্যোগ ও কর্মসূচি চালু করেছে। সুরক্ষা কর্মসূচী এবং শ্রমের বিবাদগুলি সমাধানের জন্য অনলাইন কার্যক্রম চালু করেছে।

গত বছরের শেষে সৌদি এই ঐতিহাসিক সংস্কার এনেছে। এই সংশোধনীর ফলে আরও বেশি স্বাধীনতা পাচ্ছেন হাজারও অভিবাসী ও প্রবাসী শ্রমিকরা।

SHARE THIS ARTICLE