আসিফ মুক্তাদির, যুক্তরাষ্ট্র থেকেঃ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বন্দুক হামলার বিষয়টি আবার মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। বর্ণবৈষম্য, পারস্পরিক দ্বন্দ্বের জের ও অতর্কিত হামলায় যুক্তরাষ্ট্রের কোন না কোন শহরে প্রায় প্রতিদিনই বন্দুক হামলা সংগঠিত হচ্ছে। ঘন ঘন বন্দুক হামলার ফলে বাংলাদেশি অধ্যুষিত রাজ্য নিউইয়র্কে বসবাসকারী বাংলাদেশিরা আতংকিত হয়ে পড়েছেন।
পরিসংখ্যান বলছে, প্রতি দিন প্রায় ১০০ আমেরিকান বন্দুক হামলায় মারা যাচ্ছেন এবং আরও ১০০ জন আহত হচ্ছেন। অন্যান্য উন্নত দেশের নাগরিকের চেয়ে আমেরিকানরা সহজে আগ্নেয়াস্ত্র বহন করতে পারার কারণে এখানে এর ভয়াবহতাও বেশি।
হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট ইনডেক্স (HDI) নামে একটি প্রতিষ্ঠানের গবেষণায় বলা হচ্ছে, প্রতি ১০ লাখ মার্কিনের মধ্যে হত্যাকারীর সংখ্যা ২৯ জনের বেশি। যেখানে কানাডায় এই হার ৫.১, জার্মানিতে ১.৯, অস্ট্রেলিয়ায় ১.৪ জন। স্পষ্টত: আমেরিকায় এ সংখ্যা অনেক বেশি, যা কানাডার প্রায় ৬ গুণ এবং জার্মানির প্রায় ১৬ গুণ। আরেক গবেষণায় উঠে এসেছে, আমেরিকায় মানুষের চেয়ে আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা বেশি। আমেরিকায় আগ্নেয়াস্ত্র বহনকারীর হার ১২০.৫%, অর্থাৎ অনেকের কাছেই একাধিক অস্ত্র রয়েছে। এ বিবেচনায় দ্বিতীয় স্থানে থাকা ইয়েমেনে এই হার অর্ধেকেরও কম, যা ৫২.৮%। মনে রাখা জরুরি যে ইয়েমেন যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ।
আরেকটি দেখার বিষয় হলো পৃথিবীর মোট জনসংখ্যার মাত্র ৫% মানুষ আমেরিকায় বসবাস করে। কিন্তু ব্যক্তিগত আগ্নেয়াস্ত্র বহনের ক্ষেত্রে মোট আগ্নেয়াস্ত্রের প্রায় ৪৫% আমেরিকায়। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, আগ্নেয়াস্ত্র এত সহজলভ্য হওয়ায় আমেরিকায় বন্দুক ও সন্ত্রাসী হামলা বাড়ছে।
হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষক ডেভিড হিমেনওয়ে বলেন, যেসব অঙ্গরাজ্যে আগ্নেয়াস্ত্রের সংখ্যা বেশি, সেখানে হত্যা ও আত্মহত্যার সংখ্যাও বেশি। ২০১২ সালে কানেকটিকাটের স্যান্ডি হুক স্কুলে বন্দুক হামলার পর থেকে এখন পর্যন্ত এ ধরনের হামলা হয়েছে ২ হাজারের বেশি। ২০১৭ সালে লাস ভেগাসে ৫৮ জন, ২০১৬ সালে অরল্যান্ডোয় ৪৯ জন একইভাবে বন্দুক হামলায় নিহত হয়। গবেষণার তথ্য বলছে, ২০১৫ সালে গড়ে প্রতি দিনই একটি করে বন্দুক হামলা হয়েছে।
শুধু আগ্নেয়াস্ত্রের কারণে আমেরিকায় বছরে গড়ে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ মারা যায়। এর মধ্যে আত্মহত্যার সংখ্যা গড়ে প্রায় ২২ হাজার। আর হামলা করে হত্যার সংখ্যা গড়ে প্রায় ১২ হাজার। বন্দুক ব্যবহার করে আত্মহত্যার চেষ্টা করা প্রায় ৮৫% মানুষ মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ে। গবেষণায় দেখা গেছে, শ্বেতাঙ্গদের মধ্যে আত্মহত্যার প্রবণতা বেশি, যা প্রায় ৭৪%। অন্যদিকে বন্দুক হামলায় শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে ১০% বেশি কৃষ্ণাঙ্গ নিহত হয়। অন্য উন্নত দেশের তুলনায় আমেরিকায় নারীরা প্রায় ১২ গুণ বেশি বন্দুক হামলার শিকার হয়ে থাকেন। এখন পর্যন্ত প্রায় ১০ লাখ মার্কিন নারী বন্দুক হামলার শিকার হয়েছেন।
রিচার্ড ফ্লোরিডা নামে এক গবেষক জানান, যে অঙ্গরাজ্য বা শহরে আগ্নেয়াস্ত্রের ব্যবহার ও ক্রয়ে শক্ত আইন প্রচলিত, সেখানে এ ধরনের হামলা তুলনামূলক হারে কম। বিশেষজ্ঞরা অনেক আগে থেকেই বলছেন যে, এ সম্পর্কিত আইন কঠোর করলে এমন সহিংসতা অনেকাংশে কমানো যাবে। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সম্প্রতি এক বিবৃতিতে আগ্নেয়াস্ত্র ব্যবহারের উপর কড়াকড়ি আরোপের নির্দেশ দিয়েছেন।
ফিলাডেলফিয়ার মেয়র কিম কেনেডি বলেন, পেনসিলভানিয়ায় কাউকে ড্রাইভার লাইসেন্স নিতে হলে বন্দুক কেনার চেয়ে বেশি বেগ পোহাতে হয়। এ থেকেই বোঝা যায়, সরকার এসব ব্যাপারে এখনো কতটা উদাসীন।