আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ মুন্সীগঞ্জের সদর উপজেলার আধারা ইউনিয়নের ভাষানচর মিজিকান্দি গ্রামে পারিবারিক কলহের জেরে তিন ছেলে মিলে হত্যা করেছে বাবাকে। হত্যার পর তারাই নাটক সাজিয়েছে, তাদের বাবা মাছ ধরতে গিয়ে জলদস্যুদের হামলায় নিহত হয়েছেন। মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দুপুর আড়াইটার দিকে মুন্সীগঞ্জ পুলিশ সুপার কার্যালয়ের সভাকক্ষে সংবাদ সম্মেলন করে এই ঘটনার বিস্তারিত তুলে ধরেন মুন্সীগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ মাহফুজুর রহমান আল মামুন।
তিনি জানান, এই ঘটনায় নিহত নুরুল ইসলাম হাওলাদারের তিন ছেলেকে আসামি করে করা হত্যা মামলায় সুমন হাওলাদার ও মোহাম্মদ আলী হাওলাদারকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদেরকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, তাদের বাবাকে তারা পরিকল্পিতভাবে হত্যা করে জলদস্যুরদের হামলায় নিহত হওয়ার নাটক সাজিয়েছে। গ্রেফতার দুই আসামিকে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেওয়ার জন্য আদালতে পাঠানো হয়েছে।
পুলিশ সুপার ঘটনা বর্ণনা দিয়ে বলেন, রবিবার (৯ এপ্রিল) সকালে নুরুল ইসলামের সঙ্গে তার স্ত্রীর ঝগড়া হয়। তার কারণ হিসেবে প্রাথমিকভাবে জানতে পারি, তিনি জমিতে ধান চাষ করেছিলেন, তবে সেখানে তার ছেলেরা ধান কাটতে যায়নি ও সহযোগিতা করছে না তাই তার স্ত্রীর সঙ্গে এই নিয়ে বাগবিতণ্ডা হয়। তখন স্ত্রীকে মারধরও করেন। মারধরের পর মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেন। তবে ক্ষোভে বাড়িতে ফেরেননি, চলে যান মেয়ের বাড়িতে।
এসপি বলেন, নূর ইসলামও ভয়ে বাড়িতে না গিয়ে তার বোন হামিদা বেগমের বাড়িতে চলে যান। রাতের আগেই বিকালে যখন ছেলেরা ঘরে ফিরে শোনে, তাদের মাকে মেরে হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। তখন তারা বাবাকে খুঁজতে থাকে। ফুপুর বাড়ি গিয়ে বাবাকে নিয়ে আসে। পরে আবার তাদের মধ্যে ঝগড়া শুরু হয়। রাতে বাবার সঙ্গে ছেলে মুক্তার ও রাসেল ঘুমিয়ে ছিল। রাত ৩টার দিকে ঘুম থেকে উঠে বড় ভাই সুমনকে কল করে ডাকে। সে আসার পর তারা বাবার ওপর আক্রমণ করে। প্রথমেই সুমন তার বাবার মাথায় কোপ দেয় তারপর সবাই মিলে কাঁধে ও শরীরের বিভিন্ন যায়গায় কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে। এরপর তাদের বাবাকে জলদস্যুরা হত্যা করেছে বলে নাটক সাজায়।
পুলিশের এই কর্মকর্তা বলেন, এ ঘটনায় নিহতের ছোট বোন হামিদা বেগম বাদী হয়ে নিহতের তিন ছেলের নাম উল্লেখ করে ও অজ্ঞাত আরও দুজনকে আসামি করে সোমবার মুন্সীগঞ্জ সদর থানায় হত্যা মামলা করেন।
মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করে করেন, নুরুল ইসলামকে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে ও ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে হত্যা করে তার সন্তানেরা। পরে লাশ হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে নিয়ে মাছ ধরতে গিয়ে জলদস্যুরদের হামলায় নিহত হয়েছে বলে নাটক সাজায়।
এদিকে, হত্যা মামলার প্রধান আসামি ও নিহতের বড় ছেলে সুমন হাওলাদার ঘটনার পরে পুলিশ ও সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেন, রবিবার গভীর রাতে তার বাবা মেঘনা নদীতে মাছ ধরতে যান। ভোরে মাছ ধরে ফিরে আসার সময় সংঘবদ্ধ জলদস্যুরা নৌকায় হামলা চালিয়ে নগদ টাকা, মাছ ও জাল ছিনিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। এ সময় বাধা দিলে জলদস্যুরা লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি আঘাত করে। এতে তার বাবা নূরুল ইসলাম হাওলাদার মাথায় গুরুতর আঘাত পেয়ে নদীতে পড়ে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে মুন্সীগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে নিয়ে আসা হলে দায়িত্বরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।