আইরিশ বাংলাপোস্ট ডেস্কঃ ১৫ই সেপ্টেম্বর, মঙ্গলবার; বেলারুশের বিতর্কিত প্রেসিডেন্ট আলেক্সাজন্ডার লুকাশেংকো গতকাল সোমবার রাশিয়ার প্রেসিডেনট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে দেখা করার জন্য সচি এসেছেন। ৯ই আগস্টে অনুষ্ঠিত ভোট বিরোধী ধারবাহিক আন্দোলনের মাঝে এই প্রথম লুকাশেংকো পুতিনের সাথে সাক্ষাত করলেন। তার আসার আগের দিন রোববার সারা বেলারুশ ব্যাপী বিক্ষোভ অব্যাহত থাকলে ৭৭৪ জন আন্দোলনকারীকে গ্রেফতার করেছে বলে সরকারীভাবে জানা গিয়েছে, এর মধ্যে ৫০০ জনই রাজধানী মিনস্কে গ্রেফতার হয়েছেন।
সোচিতে লুকাশেংকোর সাক্ষাতে পুতিন বলেছেন, তিনি চান কোন বিদেশী হস্তক্ষেপ ছাড়াই বেলারুশের জনগণ তাদের সমস্যা সমাধান করুক। তিনি অবশ্য লুকাশেংকোর নির্বাচনী বিজয়ে তাকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন, লুকাশেংকো সংবিধান পরিবর্তনের যে প্রস্তাব দিয়েছেন তা সময়োপযোগী এবং যুক্তিসংগত। তিনি বলেন, “রাশিয়া সম্মিলিত সুরক্ষা চুক্তি সংস্থা এবং ইউনিয়ন কাঠামোর মধ্যে সমস্ত চুক্তিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ রয়েছে, আমরা আমাদের সমস্ত দায়িত্ব পালন করব, আমরা বেলারুশকে ১.৫ বিলিয়ন ডলারের ঋণ দেব এবং প্রতিরক্ষা ক্ষেত্রে আমাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখব। বেলারুশ হবে আমাদের করোনা ভ্যাকসিন গ্রহণকারী প্রথম দেশ। আলেকজান্ডার গ্রিগরিভিচ, আপনাকে দেখতে পেরে আমি আনন্দিত, স্বাগতম।”
আলেকজান্ডার লুকাশেংকো বলেন, “আমি পরে আপনাকে বেলারুশের পরিস্থিতি সম্পর্কে সমস্ত কিছু বলব – তবে, মিডিয়া যেমন বলেছে তেমন কিছুই নয়। উইকএন্ডে লোকেরা রাস্তায় নেমেছিল, আমরা তাদের জন্য মিনস্কের কিছু অংশ মুক্ত করে দিয়েছিলাম, যাতে তারা যেতে পারে। আপনি আমাদের সমর্থন করেছেন তার জন্য আমি কৃতজ্ঞ। প্রয়োজনের বন্ধু, এটি আমাদের জন্য শিক্ষণীয়, সোভিয়েত-পরবর্তী সকল প্রজাতন্ত্রের জন্য একটি পাঠ। পশ্চিমের সীমানা ছাড়িয়ে কেউ যদি [লড়াইয়ের জন্য] চুলকানি দেয় তবে আমরা যে কোনও মুহুর্তে প্রস্তুত। কাউকে ইউনিয়ন রাজ্যের সীমান্তে তাদের সামরিক শক্তি প্রদর্শনের কোন সুযোগ নেই। ন্যাটো আমাদের বিবেচনায় নেয় না, এটি যখন চায় সামরিক অনুশীলন পরিচালনা করে। সুতরাং আমরাও করব। আমরা যখন শত্রুকে শান্ত করার চেষ্টা করি তখন মহান যুদ্ধে ভুল না করা আমাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ। রাশিয়া আমাদের বড় ভাই। আমাদের রাষ্ট্র এবং আমাদের জনগণ সর্বদা বন্ধুভাবাপন্ন থাকবে।
বিগত পাঁচ সপ্তাহ ধরে বেলারুশিয়ায় প্রেসিডেন্ট লুকাশেংকো বিরোধী প্রতিবাদ ও আন্দোলন চলছে। রোববারে ১ লক্ষ লোকের মিছিল নেমেছিল রাজধানী মিনস্কে, লুকাশেংকোর পতন চায় ওরা।
গত সপ্তাহে ৬৫ বছর বয়সী লুকাশেঙ্কো, ক্রেমলিন-নিয়ন্ত্রিত চ্যানেল আরটি-র প্রধান সম্পাদক মার্গারিটা সিমোনিয়ান সহ রাশিয়ান সাংবাদিকদের একটি সাক্ষাত্কার দিয়েছেন, যাতে তিনি হুঁশিয়ারি দিয়েছিলেন যে যদি তার সরকার পতিত হয়, “রাশিয়া পরবর্তী হবে”।
১৯৯৪ সাল থেকে ৯৫ লক্ষ জনপগোষ্ঠীর পূর্ব ইউরোপীয় এই দেশটিতে কঠিন হস্তে শাসন করে আসছেন লুকাশেংকো। ৯ই আগস্টের বিতর্কিত নির্বাচনে তিনি পুনরায় প্রেসিডেন্ট হয়েছেন, আর এই নির্বাচন সুষ্ঠু না হওয়ায় বিরোধী দল আন্দোলনে রাস্তায় নেমে এসেছে। রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট লুকাশেংকোর সাথে আছেন আর আন্দোলনকারীদের সমর্থন আছে বিশ্বের গণতান্ত্রিক দেশগুলোর।
সংবাদসূত্রঃ আল জাজিরা, বি বি সি, দা গার্ডীয়ান