আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ বহুল আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যার মামলার স্বাক্ষী থেকে আসামি হওয়া আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নির কাল হলো দুই বিয়ে। মূলত এ দুই বিয়ে করেই ফেঁসে গেলেন তিনি। আগের বিয়ের কাবিননামাই মৃত্যুদণ্ডাদেশ পেয়েছেন তিনি। নিজের মৃত্যুদণ্ডের রায় ঘোষণার পর বিচলিত হয়নি মিন্নি। তার মধ্যে কোনো আতঙ্ক বা অনুশোচনা দেখা যায়নি।
মিন্নি তার স্বামী রিফাত শরীফকে বিয়ে করার আগে নয়ন বন্ডকে বিয়ে করেছিলেন। রিফাতের হত্যাকাণ্ডের পর আগের বিয়ের কাবিননামার বিষয়ে আদালতে কোনো স্পষ্ট ব্যাখ্যা দিতে পারেননি মিন্নি ও তার পরিবার।
রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের পরপরই নয়ন বন্ড ও মিন্নির বিয়ের কাবিননামা ফেসবুকে ভেসে বেড়াচ্ছিল। আর এ থেকেই রিফাত শরীফের হত্যাকাণ্ডের পরিকল্পনাকারী হিসেবে সন্দেহের তীর মিন্নির দিকে চলে আসে। একপর্যায়ে পুলিশি তদন্তে হত্যাকাণ্ডে মিন্নির সম্পৃক্ত থাকার প্রমাণও পাওয়া যায়।
তদন্তে মিন্নির সম্পৃক্ততা পাওয়ার পর তাকে স্বাক্ষী থেকে আসামি করে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
এদিকে গতকাল বুধবার (৩০ সেপ্টেম্বর) আলোচিত এ মামলার রায় ঘোষণা করা হয়। রায়ে মিন্নিসহ ছয়জনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়।
বুধবার বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. আছাদুজ্জামান এ রায় ঘোষণা করেন। রায়ে দণ্ডপ্রাপ্ত প্রত্যেককে ৫০ হাজার টাকা করে জরিমানা করার কথাও বলে হয়েছে।
মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্তরা হলেন- মৃত্যুদণ্ড- আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি, রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইয়ুম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান।
খালাস পেয়েছেন- রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর, কামরুল ইসলাম সায়মুন, মো. মুসা।
এর আগে, আজ সকাল ৯টায় বাবা মোজাম্মেল হক কিশোরের সঙ্গে মিন্নি আদালত প্রাঙ্গণে আসেন। এরপর কারাগার থেকে ৮ আসামিকে নেয়া হয় আদালতে। রায় ঘোষণাকে কেন্দ্র করে আদালত চত্বরে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়।
এ বিষয়ে রিফাত হত্যা মামলার বাদী পক্ষের আইনজীবী মজিবুল হক কিসলু জানান, কাজী মো. আনিসুর রহমান স্বাক্ষী হিসেবে আদালতে বলেছেন, ২০১৮ সালের ১০ অক্টোবর মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ে আমি সম্পন্ন করি। ওইদিন নয়ন বন্ডের কিছু বন্ধু আমাকে নয়ন বন্ডের বাসায় নিয়ে যায়। তখন নয়ন বন্ডের বাসায় নয়ন বন্ডের মা এবং মিন্নিসহ অনেক লোক উপস্থিত ছিলেন। নয়ন বন্ডের বাসায় বসেই পাঁচ লাখ টাকা দেনমোহরে মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ে হয়।
তিনি আরো বলেন, বিয়ে সম্পন্ন করার পর আমি যখন জানতে পারি মিন্নি বরগুনা পৌরসভার আবু সালেহ কমিশনারের ভাইয়ের মেয়ে, তখন আমি সালেহ কমিশনারকে আমার মোবাইল দিয়ে কল দিয়ে মিন্নি ও নয়ন বন্ডের বিয়ের খবর জানাই। তখন তিনি আমাকে বিয়ের কথা গোপন রাখতে বলেন। এরপর মিন্নির বাবা মোজাম্মেল হোসেন কিশোরও আমাকে ফোন করে বিয়ের বিষয়টি গোপন রাখতে অনুরোধ করেন।
আইনজীবী কিসলু আরো বলেন, এরপর কাজি মো. আনিসুর রহমান জানতে পারেন রিফাত শরীফের সঙ্গে মিন্নির ফের বিয়ে হয়েছে। রিফাত শরীফের সঙ্গে মিন্নির বিয়ের পরদিন মিন্নির বাবা কাজিকে ফোনে বলেন, মিন্নি ও নয়ন বন্ড কাল তার কাছে যাবে। আপনি ওদের ডিভোর্স করিয়ে দিয়েন। কিন্তু মিন্নির বাবার কথা অনুযায়ী ওইদিন তারা কাজির কাছে আসেননি। এর পরেরদিনও ফোন করে কাজিকে একই কথা বলেন মিন্নির বাবা কিশোর। কিন্তু তার পরদিনও ডিভোর্সের জন্য মিন্নি ও নয়ন বন্ড কাজির কাছে না আসলে কাজি এবার মিন্নির বাবাকে ফোন দেন। তখন মিন্নির বাবা কাজিকে বলেন, ওরা দুজনে কমিটমেন্ট করেছে, ওদের বিয়ের কথা ওরা কাউকে জানাবে না। গোপন রাখবে।
এদিকে গত বছরের ২৬ জুন বরগুনা সরকারি কলেজের সামনে রিফাত হত্যাকাণ্ড ঘটে। ১ সেপ্টেম্বর ২৪ জনকে অভিযুক্ত করে প্রাপ্ত ও অপ্রাপ্তবয়স্ক; দু’ভাগে বিভক্ত করে আদালতে প্রতিবেদন দেয় পুলিশ। এর মধ্যে প্রাপ্তবয়স্ক ১০ জন এবং অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ জন। মামলার চার্জশিটভুক্ত প্রাপ্তবয়স্ক আসামি মো. মুসা এখনো পলাতক।
গত ১ জানুয়ারি রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক ১০ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনা জেলা ও দায়রা জজ আদালত। এরপর ৮ জানুয়ারি অপ্রাপ্তবয়স্ক ১৪ আসামির বিরুদ্ধে চার্জ গঠন করেন বরগুনার শিশু আদালত।
রিফাত হত্যা মামলার প্রাপ্তবয়স্ক আসামিরা হলেন রাকিবুল হাসান রিফাত ফরাজি, আল কাইউম ওরফে রাব্বি আকন, মোহাইমিনুল ইসলাম সিফাত, রেজওয়ান আলী খান হৃদয় ওরফে টিকটক হৃদয়, মো. হাসান, মো. মুসা, আয়েশা সিদ্দিকা মিন্নি, রাফিউল ইসলাম রাব্বি, মো. সাগর এবং কামরুল ইসলাম সাইমুন।