হামিদুল নাসিরঃ স্মার্ট লেডি বাংলাদেশ হাই কমিশনার ঘুরে গেলেন আয়ারল্যান্ড। এই পর্যন্ত আমি অনেক হাই কমিশনার দেখেছি। উনাকে আমার প্রথম থেকেই ভাল লাগে। মাশ আল্লাহ দেখতে যেমন সুন্দরী উনার কথাবার্তাও অনেক স্মার্ট। সবচেয়ে বড় কথা হল বিনা ভোটের সরকারের একজন আন্তর্জাতিক মুখপাত্র এবং প্রধানমন্ত্রীর খুব বিশ্বস্ত।
অনেক মানুষ অভিযোগ করছে হাই কমিশনার সাহেবা যে পাবলিক মিটিংটি করেছে সেটা অতি গোপনীয় ভাবে করা হয়েছে। এখানে গোপনীয়তার কি আছে? অভিযোগ করা মানুষগুলি কে? আমরা যারা সরকার বিরুধী রাজনিতি করি তাদের একটা স্বভাব থাকে সব জায়গায় বিরোধীতা করা, কিন্তু আজকের বিরুধীতা করা লোকগুলি খোদ আওয়ামী লীগ।
তাই আমি একটু খোজ নিয়ে দেখতে চেষ্টা করি। দাওয়াত নামার পোষ্টারে পোষ্ট করা হয়েছে লাইভে যাওয়ার এক ঘন্টা আগে। অর্থাৎ মিটিং রুমে বসেই হয়তো দাওয়াত নামা পোষ্ট করা হয়েছে। উপস্থিত সবাই আওয়ামীলীগ বা আওয়ামী ঘরনার। হাতেগুনা কয়েকজন ছাড়া। যদিও ব্যানার ছিল কমিনিউটির। সবচেয়ে বড় কথা হল, এক ঘন্টা আগে দাওয়াত দিলেও তিন ঘন্টার ড্রাইভ করা দুরত্ব থেকে মানুষ পৌছেছে।
অর্থাৎ তারা আগেই জানে এমন একটা মিটিং হচ্ছে। সবচেয়ে বড় কথা, সরকার দলীয় আওয়ামী লীগের নেতারাই জানে না। যারা অভিযোগ করছে তারা অনেকেই আয়ারল্যান্ড আওয়ামী লীগের বড় নেতা। অথচ অনুষ্ঠানে বিএনপির নেতারা সরকার ও হাই কমিশনারের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ছিল। অনেকেই বক্তিতায় বলেছেন ডাবলিনে কয়েক হাজার লোক থাকে। অনেকের দাবি গুলি ছিল খুব সুন্দর এবং আমাদের প্র্যয়োজনীয়। যার জন্যে আমি প্রশংসা করি।
আমার একটা প্রশ্ন চলে আসে। স্মার্ট লেডি হাই কমিশনার কি জিজ্ঞেস করেছেন, ডাবলিন বা আয়ারল্যান্ড এত মানুষ বসবাস করে আপনারা বলছেন। তাহলে আপনারা কয়েকজন কেন এখানে উপস্থিত? এত অল্প সংখ্যক মানুষ কেন? আর মানুষ কোথায়? অল বাংলাদেশী এসোসিয়েশন অফ আয়ারল্যান্ড (আবাই) এর মত একটি সংগঠনের নির্বাচিত প্রতিনিধিরা কোথায়? ২০ হাজার বাংলাদেশীদের মধ্যে আওয়ামী লীগ কি আপনারা এই কয়েকজনেই করেন? আমাদের সমাজের উন্নয়নের জন্যে সামাজিক সংগঠন গড়ে তুলা হয়। সমাজকে বিভক্ত করার জন্যে নয়।
যারাই দল এবং আধিপত্য টিকিয়ে রাখতে গোপনীয়তার সাথে দেশের হাই কমিশনার সাহেবাকে নিয়ে মিটিং করছেন তারা ভাল করছেন না। আপনাদের দল আওয়ামী লীগ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নিজ দলের নেতাদের বঞ্চিত করে বিএনপির সাথে আতাত করে হয়তো সাময়িক ফায়দা হচ্ছে কিন্তু নিজের রক্তের সাথে বেঈমানী করে লাভবান হওয়া যায়না।
এই চেয়ে বেশি কথা লিখলে আবার গোয়েন্দা সংস্থার কাছে আমার নামে আবার ফাইল হবে। মামলা হবে। ১০ বছর দেশে যেতে পারি না। আমার আওয়ামী লীগের ভাইয়েরা এই জিনিসটা খুব ভাল পারে। ছবি ও পত্রিকার কাটিং দিয়ে আমাকে দেশে গোয়েন্দাদের কাছে হিরো বানায়। আমার কিন্তু ভালই লাগে। আমার মত নগন্য মানুষকে নিয়ে দেশের সরকার ও গোয়েন্দারা ভাবে। যোগাযোগ করে।হুমকি দেয়। আমি আপাদমস্তক একজন বিএনপির কর্মী। সামাজিক ভাবেও সবার সাথে থাকি।নীতি ও নৈতিকতার প্রশ্নে অটুট থাকতে ভালবাসি। সামাজিক ভাবে প্রবাসীদের এক মঞ্চ নীতিতে বিশ্বাসী। আমার এই বিশ্বাসের কারনেই অনেকের সাথে ভুল বোঝাবুঝি হয়। আমি ব্যাক্তিগত ভাবে এই ভুল বোঝাবুঝিকে শত্রুতা মনে করি না। আমি বিশ্বাস করি। সমাজ বিনির্মানে সৎ চরিত্রবান মানুষ এগিয়ে আসুক।
জবাবদিহি ও ম্যান্ডেটকে সম্মান করি। যার কারণে বাংলাদেশ সরকারের ভোটের নামে প্রহসনকে আমি মানিনা। সামাজিক সংগঠনের নেতাদের বোঝা উচিত। নিজের সম্মান আর আধিপত্য বিস্তারের জন্যে ইচ্ছা করে সমাজের ক্ষতি করলে দীর্ঘ মেয়াদে নেতাদেরকেই জবাব দিতে হবে। হাই কমিশনার সাহেবাকে মনে হল স্পষ্টভাষী। দেশে করুন ডলার সংকট ও অর্থনৈতিক খারাপের কথা অকপটে বলেছেন। আমাদের ভাগ্য খারাপ আপাততকনস্যুলার অফিস হচ্ছে না। সেটা আয়ারল্যান্ডবাসীর জন্য নিশ্চয়ই খুশির সংবাদ না।
পরিশেষে, আমার অনুরোধ থাকবে। আমরা যেন বুঝি। হাই কমিশনার দেশের একটি প্রতিষ্ঠান। সরকার পরিবর্তন হয় কিন্তু জনগনের সেবায় নিয়োজিত এই প্রতিষ্ঠান পরিবর্তন হয় না। যাদের বেতন ভাতা আমাদের সকলের টাকায় পরিশোধ হয়। তাই সকলের অধিকার আছে জানার এবং উপস্থিত হওয়ার। এইভাবে যদি সামাজিক ও দলীয় ভিবক্তির কারনে গোপনীয় ভাবে অনুষ্টানের আয়োজন করা হয় তাহলে সমাজ এবং দল দুইটাই মুখ থুবড়ে পরবে। মানুষ সামাজিক নেতা, দলীয় নেতা, সরকার, হাই কমিশনার সবার প্রতি আংগুল তুলে প্রশ্ন ছুড়ে দিবে। বিশ্বাস হারাবে।গ্রহনযোগ্যাতা হারাবে। মানুষ সম্মানের চেয়ে উপহাস করবে বেশি। এমনকি নতুন প্রজন্ম আমাদের সন্তানদের কাছে লজ্জিত হবো। Let wisdom be for the welfare of the society.