মাওলানা সাখাওয়াত উল্লাহ: খুতবা আরবি শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ বক্তৃতা, প্রস্তাবনা, ভাষণ, ঘোষণা, সম্বোধন ইত্যাদি। খুতবা জুমার নামাজের আগে দিতে হয়। জুমার নামাজের জন্য খুতবা দেওয়া ওয়াজিব। জাবের ইবনে সামুরা (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) দুটি খুতবা দিতেন, উভয় খুতবার মাঝখানে বসতেন। খুতবায় তিনি কোরআন পড়তেন এবং জনগণকে উপদেশ দিতেন। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৮০)
ইবনে উমর (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসে এসেছে, রাসুল (সা.) জুমার দিন দাঁড়িয়ে খুতবা দিতেন, অতঃপর বসতেন, পুনরায় দাঁড়াতেন। যেমন—আজকাল তোমরা করে থাকো। (মুসলিম, হাদিস : ১৮৭৯)
সুতরাং জুমার আগে দুই খুতবা দেওয়া সুন্নতে মুয়াক্কাদা। তাই এক খুতবা দিয়ে জুমার নামাজ পড়ালে জুমার নামাজ শুদ্ধ হয়ে গেলেও তা মাকরুহ হবে। (আদ্দুররুল মুখতার : ২/১৪৮; হেদায়া : ১/১৪৮; ফাতাওয়ায়ে হাক্কানিয়া : ৩/৩৮৫)
প্রশ্ন হলো, জুমার নামাজে দুটি খুতবা পাঠ করতে হয় কেন। এর কয়েকটি কারণ আছে—
১. মহানবী (সা.) জুমার নামাজের জন্য দুটি খুতবা দিতেন। তাই নবীজির সুন্নত আদায়ের জন্য দুটি খুতবা দিতে হয়।
২. দুটি খুতবা দিলে নির্দিষ্ট বিষয়ের আলোচনা পরিপূর্ণ হয়। পাশাপাশি এতে খতিবের আরাম হয় এবং শ্রোতাদের স্বস্তি হয়।
৩. একদল আলেমের মতে, জুমার দুটি খুতবা দুই রাকাত নামাজের স্থলাভিষিক্ত। প্রতিদিন চার রাকাত জোহরের ফরজ নামাজ পড়তে হয়। এর বিপরীতে জুমার দিন দুই রাকাত ফরজ নামাজ পড়তে হয়। আর দুটি খুতবা বাকি দুই রাকাতের কিছুটা হলেও শূন্যতা পূরণ করে। তাই এই দুই খুতবাকে জুমার নামাজের অংশ বিবেচনা করা হয়। এবং কেউ বিশেষ কারণে জুমার জামাতে শরিক হতে না পারলে তাকে জোহরের চার রাকাত ফরজ পড়তে হয়। এই দিক থেকে জুমা ও জোহরের মধ্যে সাদৃশ্য আছে।
মহান আল্লাহ সর্বাধিক অবগত।
খুতবা শোনার ফজিলতঃ
জুমার দিন জুমার নামাজে খতীবের খুতবা শোনা ওয়াজিব। খুতবা চলাকালীন মুসল্লিদের জন্য কথাবার্তা বলা নিষেধ। নিচের হাদিসটি লক্ষ্য করলে আমরা জুমার খুতবার ফজিলত সম্পর্কে ধারণা পাই-
হজরত আবু হুরায়রাহ (রা.) হতে বর্ণিত- রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন, ‘তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি জুমার দিনে গোসল করল, এরপর জুমায় গেল, নির্ধারিত সালাত আদায় করল, মন দিয়ে খুতবা শেষ পর্যন্ত শুনলো, এরপর ইমামের সঙ্গে সালাত আদায় করল, তার সেই জুমা থেকে পরবর্তী জুমা পর্যন্ত এবং আরো তিন দিনের গুনাহ মাফ করে দেয়া হবে।’ (বুখারি-৮৮৩, মুসলিম-৮৫৭)।
জুমার দিন যে বিষয়টি আমাদের মনে রাখা জরুরি-
যারা খুতবা শুরু হওয়ার পরে এসে তাড়াহুড়া করে সামনে আসতে চেষ্টা করে, হাদিস শরিফে তাদের প্রতি কঠোর সতর্কবাণী উচ্চারণ করা হয়েছে। ইমাম তিরমিযী কর্তৃক বর্ণিত হাদিসে আছে, যে ব্যক্তি জুমার জামাতে পরে এসে লোকজনের কাঁধ ডিঙ্গিয়ে সামনের দিকে স্থান নিতে চেষ্টা করে সে যেন নিজের জন্য জাহান্নামে যাওয়ার একটি সেতু নির্মাণ করলো।
ইমাম আহমদ (র.) বর্ণনা করেন যে, একদা রাসূল (সা.) জুমার খুতবা দিচ্ছিলেন, এ সময় এক ব্যক্তিকে উপবিষ্ট লোকদের কাঁধ ডিঙ্গিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হতে দেখে অত্যন্ত বিরক্তির সঙ্গে বললেন, ওহে! বসে পড়, দেরিতে এসেছ এবং অন্যদের কষ্ট দিচ্ছ।