আইরিশ হার্পঃ আয়ারল্যান্ডের জাতীয় প্রতীকের গল্প

ওবায়দুর রহমান রুহেল- আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ প্রতিটা দেশেরই একটা নিজস্ব জাতীয় প্রতীক আছে যা দেশটির জাতীয় পরিচয় বহন করে, বহু বছরের ঐতিহ্যকে লালন করে। কারো কাছ থেকে ধার করে নয় বরং নিজ দেশের স্বকীয়তা বিশ্ব মঞ্চে তুলে ধরাই হচ্ছে জাতীয় প্রতীক নির্বাচনের মূল লক্ষ্য।বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক পানিতে ভাসমান সাদা শাপলা চারপাশে জড়ানো ধানের শীষ আর একদম উপরে পাট গাছের তিনটি পাতার একটি কুঁড়ি।সাদা শাপলা, ধান, পাট এই তিনটি জিনিসই বাংলাদেশের নিজস্ব স্বকীয়তা বহন করে।সাদা শাপলারা বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ মিঠা পানিতে অবাদে জন্মায়, এককালে পাটই ছিল বাঙালির প্রধান অর্থকরী ফসল যাকে ডাকা হতো সোনালী আঁশ বলে আর বাঙালির পাতে ভাত না জুটলে কারোকি ভুখ মরে? তাই তিনে মিলে বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক বাঙালির চিরন্তন আবহমান জনপদের প্রতিনিধিত্ব করে।বাঙালির বাউল গান, বাদ্য যন্ত্রগুলোও আমাদের ইতিহাস ঐতিহ্যকে ধারণ করে ।আমাদের ভূখন্ডের প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন ঘেটে অতি প্রাচীনকালের যেসব বাদ্য-বাজনাগুলোর পাওয়া যায় তারমধ্যে অন্যতম হচ্ছে কাঁসর, করতাল, ঢাক, বীণা, বাঁশি, মৃদঙ্গ ও মৃৎভান্ড ইত্যাদি।এদের যেকোনো একটি আমাদের জাতীয় প্রতীক হবার যোগ্যতা রাখে কেননা এদের ইতিহাস ৮০০-১২০০ খ্রীস্টাব্দের ইতিহাস।তবে কোন বাদ্যযন্ত্র বাংলাদেশের জাতীয় প্রতীক হবার যোগ্যতা অর্জন না করতে পারলেও আয়ারল্যান্ডের জাতীয় প্রতীকের মর্যাদায় আসনটুকু কেড়ে নিয়েছে আইরিশ হার্প।

Irish Harp

আয়ারল্যান্ডই হচ্ছে বিশ্বের একমাত্র দেশ যে দেশের জাতীয় প্রতীক একটি বাদ্যযন্ত্র।আয়ারল্যান্ডে প্রচলিত বর্তমান হার্পটির নকঁশা প্রনয়ণ করা হয়েছে ১৪০০ শতাব্দীতে যা বর্তমানে ডাবলিনের ট্রিনিটি কলেজের জাদুঘরে এখনো সংরক্ষিত আছে।বিদ্রোহী নেতা ওয়েন রো ও’নেইল ১৬৪২ খৃষ্টাব্দে প্রথম যে আইরিশ পতাকাটি উড্ডয়ন করেছিলেন সেখানে সবুজ রঙের মাঝখানে হলুদ রঙের হার্পের ছবি ছিল।হার্প শব্দটির বুৎপত্তি খ্রীস্টপূর্ব ৬০০ শতকে এবং তারের তৈরী বাদ্যযন্ত্র বুঝাতেই শব্দটি ব্যবহার করা হতো।আয়ারল্যান্ডে সবচেয়ে প্রাচীন হার্পটির বয়স ৪৫০০ বছর যেটি আবিষ্কৃত হয়েছিল ১৯২৯ খ্রীস্টাব্দে।সারা বিশ্বে জনপ্রিয় আইরিশ বিয়ার গিনিস তাদের পানীয় পন্যের প্রতীক হিসেবে ১৮৭৬ সালে হার্পের ছবিটি ব্যবহার করা শুরু করে।আয়ারল্যান্ডে হার্পের ইতিহাস নিয়ে কিছু মতবিরোধও আছে অনেকের ধারণা হার্পের সদৃশ বাদ্যযন্ত্র ৩০০০ খ্রীস্টপূর্বে ইউরোপের অন্যান্য দেশ ও এশিয়ায় পাওয়া যেত, তবে বর্তমান নকঁশা করা হার্প আইরিশ জাতি সত্ত্বার পরিচয় বহন করে এ ব্যাপারে কারো কোন দ্বিমত নেই। শামরকও আয়ারল্যান্ডের দ্বিতীয় জাতীয় প্রতীক বলে বিবেচিত হয়। ব্যবহারের দিক থেকে হার্প আয়ারল্যান্ডের বিভিন্ন বিশেষায়িত পতাকা, সেনাবাহিনীর পোশাক, পাসপোর্ট, মুদ্রা ও বিভিন্ন সরকারি চিঠি পত্রের খামের উপর ব্যবহার করা হয়।

SHARE THIS ARTICLE