আজ আরাফা দিবস। লাব্বায়েক ধ্বনিতে মুখরিত আরাফা ময়দান ( ভিডিও)

এ,কে, আজাদ – আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ আজ বৃহসপতিবার পবিত্র হজ। লাখো কণ্ঠে লাব্বায়েক! আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক! ধ্বনিতে মুখর হয়ে উঠেছে মক্কা নগরীর অদূরে আরাফার ময়দান। এর মধ্য দিয়েই শুরু হয়েছে হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা। মহামারি করোনার মধ্য দিয়ে ব্যাপক স্বাস্থ্য সতর্কতা ও নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে ১৪৪১ হিজরির পবিত্র হজ আজ। সৌদি হজ ও ওমরাহ মন্ত্রণালয়ের সার্বিক ব্যবস্থাপনায় যথাযথ নিরাপত্তার মাধ্যমে হজে অংশগ্রহণকারীদের পবিত্র নগরী মক্কা থেকে মিনায় নেয়া হয়েছিল।
মিনায় গিয়ে অবস্থানকারী হজ পালনকারীরা আজ সকাল সকাল আরাফাতের ময়দানে গিয়ে অবস্থান নিয়েছে। সেখানে তারা সকাল থেকে দিনভর ইবাদত-বন্দেগি ও রোনাজারিতে সময় অতিবাহিত করবে। সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করবেন তারা।
পবিত্র কাবা থেকে ৭ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে মিনায় রাতযাপন শেষে আজ ভোরে ফজরের নামাজ আদায় করে আরাফার ময়দানের উদ্দেশে রওয়ানা দেন হাজিরা।

আরাফার দিবসে করণীয়


আরাফার ময়দানে যাওয়ার আগে মিনায় পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করা সুন্নত। আরাফার ময়দানে যাত্রাপথে হাজিরা সমন্বিত কণ্ঠে পাঠ করেন_ ‘লাব্বায়েক, আল্লাহুম্মা লাব্বায়েক, লা শারিকা লাকা লাব্বায়েক, ইন্নাল হামদা ওয়াননি মাতা লাকা ওয়ালমুলক।’ অর্থাৎ আমি হাজির, হে আল্লাহ আমি হাজির, তোমার কোনো শরিক নেই, সব প্রশংসা ও নিয়ামত শুধু তোমারই, সমগ্র সাম্রাজ্য শুধুই তোমার।
আরাফার ময়দানে আজ হাজিদের উদ্দেশে বয়ান ও খুতবা প্রদান করবেন ড. আব্দুল্লাহ বিন সুলাইমান আল-মানিয়া।
১৯৮১ সাল থেকে টানা ৩৫ বছর হজের খুতবা দিয়েছেন সৌদি আরবের গ্র্যান্ড মুফতি শায়খ আবদুল আজিজ বিন আবদুল্লাহ আশ শায়খ। ২০১৬ সালে বার্ধক্যজনিত কারণে অবসর নেন তিনি। এরপর থেকে প্রতি বছর একজন করে নতুন খতিব নিয়োগ দেয়া হচ্ছে।
তারই ধারাবাহিকতায় সৌদি প্রেস এজেন্সির বরাতে আলখালিজটুডে ডটকো জানায়, ২৮ জুলাই (মঙ্গলবার) সৌদি আরবের বাদশাহ খাদেমুল হারামাইন শরিফাইন সালমান বিন আবদুল আজিজ আল-সৌদ এক রাজকীয় ফরমানে শায়খ আবদুল্লাহ বিন সুলাইমান আল মানিয়াকে নিয়োগ দিয়েছেন বলে জানা গেছে। শায়খ আবদুল্লাহ বিন সোলায়মান আল মানিয়া হলেন সবচেয়ে বেশি বয়স্ক হজের খতিব।

এবারের হজের ব্যতিক্রমী দৃশ্য

৯২ বছর বয়সী শায়খ ড. আব্দুল্লাহ বিন সুলাইমান আল মানিয়া আইন বিশেষজ্ঞ হিসেবে বেশ প্রসিদ্ধ। তিনি অর্গানাইজেশন অব ইসলামিক কো-অপারেশন বা ওআইসির ইসলামিক ফিকহ একাডেমির সদস্য। এর আগে তিনি মক্কা আল মোকাররামা কোর্টের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। শায়খ আবদুল্লাহ মানিয়া সৌদি আরবের বিভিন্ন ব্যাংকের শরিয়াহ কমিটিতে আছেন। এছাড়া তিনি জাতীয়, আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে জড়িত।
ইসলামি শরিয়াহ আইন নিয়ে তিনি পিএইচডি ডিগ্রী নিয়েছেন। তিনি একজন লেখক। শারিয়াহ শাসন ব্যবস্থা ও ইসলামিক অর্থনীতি বিষয়ে তার উল্লেখযোগ্য রচনা রয়েছে।


আজ ৩০ জুলাই মোতাবেক ৯ জিলহজ ১৪৪১ হিজরি (বৃহস্পতিবার) ঐতিহাসিক আরাফাতের ময়দানে অবস্থিত মসজিদে নামিরা থেকে সৌদির স্থানীয় সময় দুপুর সাড়ে বারোটার পর আরাফার ময়দানে হাজিদের উদ্দেশে বয়ান ও খুতবা প্রদান করবেন ড. আব্দুল্লাহ বিন সুলাইমান আল-মানিয়া।
বাংলাদেশের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেল হজের খুতবা সরাসরি সম্প্রচার করবে।
হজের খুতবা শেষে জোহর ও আসরের নামাজ একসঙ্গে আদায় করে সূর্যাস্ত পর্যন্ত আরাফায় অবস্থান করবেন হাজিরা।
এরপর আরাফার ময়দান থেকে হাজিরা মুজদালিফা যাবেন। মুজদালিফা উপত্যকায় খোলা আকাশের নিচে তারা মাগরিব ও এশার নামাজ একসঙ্গে জামাতে আদায় করবেন। রাতে তারা সেখানেই অবস্থান করবেন।
আগামীকাল শুক্রবার ঈদুল আজহার দিন ফজরের নামাজ পড়ে তারা মিনায় ফিরবেন। সেখানে প্রতীকী শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের পর তারা কোরবানি দেবেন।
স্বাস্থ্য ও নিরাপত্তা কর্মীরা পবিত্র নগরী কাবা শরিফের চারদিকে জীবানুমুক্তকরণ করতে বিশেষভাবে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করেছে।

আরাফাত দিবসের গুরুত্ব ও ফজিলত ...

এবারের হজে অংশগ্রহণকারীদের নিরাপত্তায় এবং কাবা শরিফের পরিচ্ছন্নতায় কাবা শরিফের চারদিক ঘেরাও করে দেয়া হয়েছে। কোনো হজপালনকারীকেই কাবা শরিফ স্পর্শ করতে দেয়া হবে না। যথাযথ দূরত্ব বজায় (১.৫ মিটার তথা ৫ ফিট) রেখে তাওয়াফ, নামাজে অংশগ্রহণ ও সাঈসহ হজের সব কার্যক্রম পালন করেছে।
রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম স্বাস্থ্যকর্মীদের হজযাত্রীদের লাগেজ স্যানিটাইজ করতে দেখিয়েছে এবং কিছু হজযাত্রীকে ইলেক্ট্রনিক কব্জিবন্দ দেয়া হয়েছে যাতে তাদের অবস্থান ও গতিবিধি নিরীক্ষণ করা যায়। শ্রমিক, ক্লাচিং ঝাড়ু এবং জীবাণুনাশককে কাবার আশেপাশের এলাকা পরিষ্কার করতে দেখা গেছে।
হজ কর্তৃপক্ষ এ বছর কাবা ঘিরে রেখেছে। তারা জানিয়েছেন যে সংক্রমণের সম্ভাবনা সীমাবদ্ধ করতে হজযাত্রীদের এটি স্পর্শ করতে দেয়া হবে না। তারা হজযাত্রীদের যত্ম নিতে একাধিক স্বাস্থ্যসেবা, মোবাইল ক্লিনিক এবং অ্যাম্বুলেন্স স্থাপন করেছেন বলে জানিয়েছেন। সরকার মক্কায় প্রবেশের ব্যবস্থা আরও কঠোর করায় এ বছরের হজ থেকে বিদেশী সংবাদমাধ্যমকে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। মিনায় পাথর নিক্ষেপসহ সব কাজের সময় মাস্ক ব্যবহার ও দূরত্ব বজায় রাখা বাধ্যতামূলক। মিনায় পাথর নিক্ষেপের নুড়ি হজ কর্তৃপক্ষ বিশেষ ব্যাগের মাধ্যমে সরবার করবে।
সৌদি সরকারে এমন কঠোর স্বাস্থবিধি ও নিরাপত্তা মেনে হজ ব্যবস্থাপনার জন্য হজে অংশগ্রহণকারীরা সন্তোষ প্রকাশ করেছেন।

SHARE THIS ARTICLE