আজ মেসি-এমবাপ্পে দুই তারকার শ্রেষ্ঠত্বের লড়াই

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ সাতবারের ব্যালন ডি’অরজয়ী লিওনেল মেসি। তার শোকেসটা ট্রফিতে ঠাসা। এক বার্সেলোনার হয়েই ট্রফি জিতেছেন ত্রিশেরও বেশি। আর্জেন্টিনার হয়ে কোপা আমেরিকা জিতেছেন ২০২১ সালে। তবে ইতিহাসের অন্যতম সেরা ফুটবলারের শোকেসে নেই বিশ্বকাপ ট্রফি। এ ট্রফির জন্য আজ ৩৫ বছর বয়সী ফরোয়ার্ডের লড়াই হবে ২৩ বছর বয়সী কিলিয়ান এমবাপ্পের সঙ্গে। লড়াইটা আর্জেন্টিনা বনাম ফ্রান্সের হলেও দুই দলই স্বপ্ন বুনছে এ দুই মহাতারকাকে ঘিরে।
ক্লাব ফুটবলে মেসির মতো অতটা সাফল্য না পেলেও এরই মধ্যে নামের পাশে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নের পদক লিখে ফেলেছেন এমবাপ্পে। আবার মেসি, রোনালদো ও নেইমারের পর ফুটবলের সবচেয়ে উজ্জ্বল নক্ষত্রও ভাবা হয় তাকেই। আজ কাতার বিশ্বকাপের ফাইনালের মঞ্চে ফ্রান্সের এ ‘বুলেট ট্রেন’কে পরাজিত করার চ্যালেঞ্জ ধ্রুপদী ফুটবলের এক মহান শিল্পী মেসির সামনে।

আর্জেন্টিনা বনাম ফ্রান্স: পরিসংখ্যানে কে এগিয়ে

বিশ্বকাপে এর আগে একবার মেসির মুখোমুখি হয়েছেন এমবাপ্পে। আন্তর্জাতিক ফুটবলে তাদের প্রথম ও সর্বশেষ দেখা হয় রাশিয়া বিশ্বকাপে। সেবার শেষ ষোলোর ম্যাচে আর্জেন্টিনাকে ৪-৩ গোলে হারিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে ওঠে ফ্রান্স। পরিশেষে ফ্রান্সই শিরোপা জিতে নেয়। আর্জেন্টিনার বিপক্ষে জোড়া গোল করেছিলেন এমবাপ্পে। মেসি কোনো গোল পাননি। তবে দুটি গোল তৈরি করে দিয়েছিলেন তিনি।

বিশ্বকাপের বাইরে ক্লাব ফুটবলে দুবার মেসির মুখোমুখি হন এমবাপ্পে। ২০২০-২১ মৌসুমে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ ষোলোয় লড়াই হয় দুজনের। মেসি তখন বার্সেলোনার খেলোয়াড়, আর এমবাপ্পে পিএসজিতে। ক্যাম্প ন্যুতে প্রথম লেগে পিএসজির ৪-১ গোলের জয়ে হ্যাটট্রিক করেন এমবাপ্পে। পেনাল্টি থেকে একটি গোল করেন মেসি।

পিএসজির মাঠে ফিরতি লেগ ১-১ গোলে ড্র করেছিল বার্সেলোনা। এ ম্যাচেও দুই দলের দুই গোলদাতা মেসি ও এমবাপ্পে। দুই লেগ মিলিয়ে ৫-২ গোলের জয়ে এমবাপ্পের পিএসজিই উঠেছিল কোয়ার্টার ফাইনালে। তার মানে, আন্তর্জাতিক ও ক্লাব ফুটবলের লড়াই মিলিয়ে মেসির বিপক্ষে এমবাপ্পেই এগিয়ে রয়েছেন।

২০২১ সালের ফেব্রুয়ারিতে সেই হারের পাঁচ মাস পরই বার্সা ছেড়ে পিএসজিতে যোগ দেন মেসি। প্রতিপক্ষ থেকে এমবাপ্পের সতীর্থ হন তিনি। পিএসজিতে প্রথম মৌসুমে তেমন ভালো করতে পারেননি আর্জেন্টিনার অধিনায়ক। ৩৪ ম্যাচে করেন ১১ গোল। এবার বিশ্বকাপের আগে সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে ১৯ ম্যাচে করেছেন ১২ গোল।

গত মৌসুম থেকে এ পর্যন্ত ৪৮ ম্যাচে একসঙ্গে মাঠে নেমেছেন পিএসজির দুই তারকা। এমবাপ্পের পাস থেকে মেসি করেছেন ১১ গোল। আর মেসির পাস থেকে ১৫ গোল করেছেন এমবাপ্পে। ফরাসি তারকার সঙ্গে পিএসজিতে লিগ ও ফ্রেঞ্চ সুপার কাপ জিতেছেন মেসি। এবার দুজন মুখোমুখি বিশ্বমঞ্চে।

দেশকে শ্রেষ্ঠত্বের মুকুট এনে দেয়ার চ্যালেঞ্জ যেমন রয়েছে, তেমনি এমবাপ্পে ও মেসির ব্যক্তিগত অর্জনের লড়াইও এটি। চলতি টুর্নামেন্টে দুজনই করেছেন সমান ৫টি করে গোল। অ্যাসিস্ট করায় মেসি ৩-২-এ এগিয়ে। দুজনই আছেন গোল্ডেন বল ও গোল্ডেন বুট জয়ের রেসে। আজ ফাইনালে একে অন্যকে ছাড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ গোলে কিংবা পারফরম্যান্সে।

আজ মেসির হাতেই শিরোপা দেখতে চান আর্জেন্টিনার অধিনায়ক লিওনেল স্ক্যালোনি। তিনি বলেন, আশা করি, সে-ই ট্রফিটা তুলে ধরবে। তবে তার আগে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, মেসিকে খেলাটা উপভোগ করতে হবে এবং এটা বিশ্বকাপ ফাইনাল।

মেসি ও এমবাপ্পেকে নিয়ে উন্মাদনা তৈরি হলেও স্ক্যালোনি এটিকে দেখছেন ভিন্নভাবে। তিনি বলেন, ম্যাচটি আর্জেন্টিনা বনাম ফ্রান্স, এটি শুধু মেসি ও এমবাপ্পের মধ্যেই সীমিত নয়। আমাদের অস্ত্র আছে, আমাদের শক্তি আছে এবং এ ম্যাচটির ভাগ্য নির্ধারণ হবে আমাদের প্রতিটি খেলোয়াড় দ্বারা। কেবল ওই দুজন খেলোয়াড়ের ব্যাপার নয়। মেসি ভালো করছে এবং আশা করি আমরাই ম্যাচটি জিতব। কিন্তু এটা আর্জেন্টিনা ও ফ্রান্সের ম্যাচ এবং আরো অনেক খেলোয়াড় আছে যারা এর ভাগ্য নির্ধারণ করতে পারে।
আর্জেন্টিনার গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্তিনেজ তার বিখ্যাত সতীর্থ মেসিকে নিয়ে বলেছেন, আমি দেখতে পাচ্ছি মেসি খুবই সুখী একজন মানুষ। মাঠে সে ভালো করছে। আমি কোপায় দেখেছি অনবদ্য এক মেসিকে। সে ছিল অবিশ্বাস্য, কোপায় অন্যতম সেরা। বিশ্বকাপে সে ভালো খেলছে এবং আমাদের গোটা দলের মধ্যে এনার্জি এনে দিচ্ছে, কারণ আমরা পেয়েছি সেরা খেলোয়াড়টিকে। সে নিজেও শিহরিত, খুবই আনন্দিত, এটি আমাদের কাজটা সহজ করে দিচ্ছে।

এদিকে, আজ মাঠে নামলেই বিশ্বকাপে সর্বোচ্চ ম্যাচ খেলার রেকর্ড গড়বেন মেসি। ২৫ ম্যাচ খেলে এ মুহূর্তে যুগ্মভাবে জার্মানির লোথার ম্যাথিউসের সঙ্গে রেকর্ড ভাগাভাগি করছেন তিনি। আজ ২৬ ম্যাচ নিয়ে তিনি এককভাবে শীর্ষে উঠে যাবেন। এছাড়া প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্ব, শেষ ষোলো, কোয়ার্টার ফাইনাল, সেমিফাইনাল ও ফাইনালে গোল করার অনন্য কীর্তিরও সামনে তিনি।

১৯৩০ বিশ্বকাপের পর দ্বিতীয়বারের মতো ১৯৭৮ বিশ্বকাপে ফ্রান্সের সঙ্গে দেখা হয় আর্জেন্টিনার। গ্রুপ পর্বের ম্যাচটিতে আর্জেন্টিনা ২-১ গোলে ফ্রান্সকে বিশ্ব আসরে দ্বিতীয়বারের মতো হারের তেতো স্বাদ দেয়। 

আর বিশ্বআসরে তৃতীয়বারের মতো সাক্ষাত হয় ২০১৮ সালে রাশিয়া বিশ্বকাপে। যেখানে আর্জেন্টিনাকে ৪-৩ গোলে প্রথমবারের মতো পরাজিত করে ফ্রান্স।

ফ্রান্স কোনো প্রকার বাধা ছাড়াই বিশ্বকাপের ফাইনালে জায়গা করে নিলেও আর্জেন্টিনার পথচলাটা সুখকর ছিল না। বিশ্বকাপের প্রথম ম্যাচেই সৌদি আরবের কাছে হেরে গ্রুপপর্ব থেকে বিদায়ের শঙ্কা জাগে। সেখান থেকে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে আর্জেন্টিনা এখন টুর্নামেন্টের ফাইনালে। গ্রুপ পর্বের দ্বিতীয় ও তৃতীয় ম্যাচে যথাক্রমে মেক্সিকো এবং পোল্যান্ডের বিপক্ষে ২-০ গোলে জয় নিয়ে গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হিসেবে শেষ ষোলোতে জায়গা করে নেয়। 

শেষ ষোলোর ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ২-১ গোল জয় নিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে পা রাখে। সেখানে নেদারল্যান্ডসকে টাইব্রেকারে ৪-৩ গোলে পরাজিত করে সেমিফাইনাল নিশ্চিত করে। 

সেমিফাইনালে গতবারের রানার্সআপ ক্রোয়েশিয়াকে ৩-০ গোলের ব্যবধানে উড়িয়ে ফাইনাল নিশ্চিত করে আলবিসেলেস্তেরা। 

এই বিশ্বকাপই আর্জেন্টাইন তারকা মেসির শেষ বিশ্বকাপ। তাই ট্রফিটা নিজেদের করে নিতে মরণপণ লড়বে স্কালোনিশিষ্যরা।

SHARE THIS ARTICLE