আয়ারল্যান্ডে অভিবাসীবিরোধী বিক্ষোভ

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ গত সপ্তাহান্তে রাজধানী ডাবলিনে অভিবাসী বিরোধী মিছিল করেছে আয়ারল্যান্ডের নাগরিকেরা। ইইউ থেকে বেরিয়ে যেতে ব্রিটেনের পক্ষে প্রচারণা চালানো কট্টর ডানপন্থি ব্রিটিশ রাজনীতিবিদ নাইজেল ফারাজ ১৮ জানুয়ারি টুইটারে লিখেন, “আইরিশরা কথা প্রতিবাদ করছে। বিপুল সংখ্যক পুরুষ আশ্রয়প্রার্থীর বিরুদ্ধে রাস্তায় নেমেছে তরুণ প্রজন্ম।”

ব্রিটেনের দ্য গার্ডিয়ান পত্রিকা জানিয়েছে, বিক্ষোভকারীরা ‘আয়ারল্যান্ড আইরিশদের জন্য’ এবং ‘আইরিশদের জীবন গুরুত্বপূর্ণ’ এমন স্লোগান দিয়েছে।

একজন ব্যক্তি গার্ডিয়ানকে বলেন, বিক্ষোভটি বর্ণবাদ নিয়ে নয়। তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এখান তাদের [অভিবাসীদের] জন্য কোনো জায়গা নেই। তিনি এটি মানবেন না।”

অন্যান্য অনেক দেশের মতো, আয়ারল্যান্ডও করোনা মহামারী পরবর্তী অর্থনৈতিক মন্দা এবং জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির সম্মুখীন হয়েছে৷ আবাসন এবং গৃহহীনতার সংকট রয়েছে৷ ফলে ইউক্রেনীয়দের এবং অন্যান্য আশ্রয়প্রার্থীদের স্থান দিতে নাভিশ্বাস উঠছে৷

গার্ডিয়ান জানিয়েছে, অভিবাসীরা অগ্রাধিকারমূলক আচরণ পায় এমন অভিযোগকে সাম্প্রতিক সময়ে রাজনৈতিক মহল থেকে উসকে দেয়া হয়েছে।

দেশটিতে অল্পবয়সী পুরুষ শরণার্থীর সংখ্যাও কিছু প্রতিবাদকারীদের ভাষ্যে সমস্যা হিসেবে উঠে এসেছে। তাদের দাবি, এর ফলে তারা ‘নিরাপদ”’নয়।

বিক্ষোভে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আরেকজন বলেছেন, অনেক অঞ্চলের ক্ষেত্রে রাতে মেয়েরা বাইরে যেতে ভয় পায় কারণ তাদের ধারণা এত বেশি সংখ্যক যুবক ঘুরে বেড়ানো তাদের জন্য বিপজ্জনক হতে পারে।

যদিও আয়ারল্যান্ড অভিবাসীদের জন্য নিজেকে একটি স্বাগত এবং উন্মুক্ত দেশ হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করার চেষ্টা করেছে। দেশটির নিজস্ব অভিবাসনের ইতিহাসের কারণে এটি হয়ে থাকতে পারে।

কারণ শতাব্দীর পর শতাব্দী ধরে কয়েক হাজার আইরিশ মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ডসহ সারা বিশ্বের নানা জায়গায় অভিবাসী হয়েছে।

বর্তমানে, আয়ারল্যান্ড প্রায় ৭৩ হাজার অভিবাসীর বাসস্থান। তাদের মধ্যে প্রায় ৫৪ হাজার ইউক্রেন থেকে আসা শরণার্থী এবং ১৯ হাজার অন্যান্য দেশ থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থী ও অভিবাসী।

২০২১ সালের তুলনায় অভিবাসীদের সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১০ গুণ। জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) মন্তব্য করেছেন, “আয়ারল্যান্ডের বর্তমান আশ্রয় ব্যবস্থা উদ্বেগজনক।”

বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারি, ইউএনএইচসিআর এর আয়ারল্যান্ড প্রধান এন্ডা ও’নিল টুইট করে বলেন, আশ্রয় ব্যবস্থা ভেঙে পারে বলে মনে হচ্ছে। দ্রুত কোনো উদ্যোগ না নেয়া হলে অনেক আশ্রয়প্রার্থী গৃহহীন হয়ে পড়বেন।

ও’নিল সরকারের ঊর্ধ্বতন স্তর থেকে একটি জরুরি হস্তক্ষেপের আহ্বান জানিয়েছেন।

সমতা, একীকরণ এবং যুবকল্যাণ দপ্তরের আইরিশ মন্ত্রী, রডারিক ও’গর্মানও গত সপ্তাহে স্বীকার করেছেন, আগামী কিছু দিনের মধ্যে আশ্রয়কেন্দ্রগুলি ভর্তি হয়ে যাবে।

ও’গর্মান আরও যোগ করেছেন, উপযুক্ত আবাসন খোঁজার ক্ষেত্রে সরকারকে শিশুদের এবং প্রতিবন্ধী ব্যক্তিদের পরিবারকে অগ্রাধিকার দিতে হবে। অন্যান্য আশ্রয়প্রার্থীরা খাবার খেতে বিশেষ ভাউচার বা টিকিট পাবেন এবং বাসস্থানে জায়গা খালি হলে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হবে।”

মন্ত্রী আশা করছেন, ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে নতুন আবাসন পাওয়া যাবে৷ মার্চ এবং এপ্রিল থেকে একটি নতুন সমস্যা দেখা দিতে পারে। কারণ এই সময়ে অনেক হোটেল সরকারের সঙ্গে তাদের চুক্তি নবায়ন করতে অস্বীকার করে পর্যটকদের জন্য হোটেলগুলি খুলে দিতে পারে। সূত্র: ইনফোমাইগ্রান্টস।

SHARE THIS ARTICLE