জি-২০ সম্মেলনের প্রথম দিনের কার্যসূচী সম্পন্ন

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ কোভিড মহামারি শুরু হওয়ার পর এই প্রথম জি-২০ নামের ১৬টি দেশ এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের নেতারা ইতালির রোম নগরীতে প্রত্যক্ষ বৈঠকে বসেছেন গতকাল ৩০শে অক্টোবর।চীনের শিন জিনপিং এবং রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন প্রত্যক্ষ অংশ নিচ্ছেন না, তারা ভিডিও লিঙ্কের মাধ্যমে ভার্চুয়ালি যোগ দেবেন এই সম্মেলনে। সম্মেলনে আলোচনার প্রধান বিষয়বস্তু হতে চলেছে জলবায়ু পরিবর্তন ও কোভিড-১৯।  

কপ-২৬ নামের আবহাওয়া পরিবর্তন বিষয়ক সম্মেলনের ঠিক দুই দিন আগে এই সম্মেলন হওয়ায় বিশ্বের অন্যতম গুরুত্ত্বপূর্ন সমস্যা “কার্বন নিঃসরণ” নিয়ে আলোচনা প্রাধান্য পাচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখনই যদি কার্বন নিঃসরণের পরিমাণ কমাতে জরুরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা না হয় তাহলে বিশ্বব্যাপী চরম দুর্ভোগ নেমে আসবে। বৈশ্বিক কার্বন নিঃসরণের পেছনে ৮০% দায়ী এই জি-২০ এর সদস্যরাই। জি-২০ তে ১৯টি দেশ এবং ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন রয়েছে।

উদ্বোধনী ভাষণে ইতালীয় প্রধানমন্ত্রী মারিও ড্রাঘি বিশ্বের সবচেয়ে গুরুতর হুমকির “একমাত্র সম্ভাব্য উত্তর” হিসাবে বিশ্বব্যাপী সহযোগিতার আবেদন করেছেন। তিনি ব্রিটেন এবং ফ্রান্সের মধ্যে ক্রমবর্ধমান উত্তেজনা চলাকালীন জি২০ বিশ্ব নেতাদের এই শীর্ষ সম্মেলন সহযোগিতা বৃদ্ধির আহবান জানান।

জি২০ প্রতিনিধিদের স্বাগত জানিয়ে মিঃ ড্রাঘি বলেন যে মহামারী হওয়ার আগেও এটি "বিশ্ব সম্প্রদায়ের জন্য কঠিন কয়েক বছর ছিল, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি ডোনাল্ড ট্রাম্পের বহুপাক্ষিকতা থেকে পশ্চাদপসরণ এবং ব্রিটেনের ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন থেকে বেরিয়ে আসার সম্ভাব্য উল্লেখ ছিল। তিনি বলেন, "আমরা সুরক্ষাবাদ, একতরফাবাদ, জাতীয়তাবাদের মুখোমুখি হয়েছি, তবে আমরা আমাদের সমস্ত চ্যালেঞ্জের সাথে যতই এগিয়ে যাচ্ছি, ততই এটি স্পষ্ট যে বহুপক্ষীয়তাই আজ আমাদের সমস্যার সর্বোত্তম উত্তর।"

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন স্বীকার করেন যে, প্রারিস আর লন্ডনের মধ্যে সম্পর্ক বিঘ্নিত হয়েছে। তিনি বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের লাগাম টানতে এবং ভ্যাকসিন ইক্যুইটি বাড়ানোর বিষয়ে বিশ্বের বৃহত্তম অর্থনীতির মধ্যে চুক্তির প্রয়োজনীয়তার গুরুত্বপূর্ন।

মাছ ধরার লাইসেন্স নিয়ে লন্ডন এবং প্যারিসের মধ্যে ক্রমবর্ধমান দ্বন্দ্ব বাণিজ্যে বিঘ্ন ঘটার আশঙ্কা জাগিয়েছিল যা আয়ারল্যান্ডকে আঘাত করতে পারে বলে বরিস জনসন সতর্ক করার পরে তিনি “ব্রিটিশ স্বার্থ রক্ষার জন্য যা করা প্রয়োজন” তা করবেন বলেছিলেন, এদিকে ফরাসি প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ ব্রিটেনকে ফিরে যেতে চাওয়ার জন্য অভিযুক্ত করেছেন। ম্যাক্রো বলেন, “একটি স্বাক্ষরিত চুক্তি এবং দেশের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নবিদ্ধ।”

ঘনিষ্ঠ প্রতিবেশী এবং মূল প্রতিরক্ষা মিত্রদের মধ্যে পতনশীল সম্পর্ক নিয়ে গ্লাসগোতে ল্যান্ডমার্ক কপ ২৬ জলবায়ু শীর্ষ সম্মেলনের শুরুতে এই সম্মেলনের সাফল্য নিয়ে সংশয় দেখা দিয়েছে, বিশেষ করে যেখানে আয়োজক হিসাবে ব্রিটেন মোটামুটিভাবে আরও বেশি ভিন্ন গোষ্ঠী থেকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর বিষয়ে একটি অধরা ঐকমত্য অর্জনের চেষ্টা করবে।

G20 world leaders at the opening session Saturday.

দুই দিনের শীর্ষ এ সম্মেলনের আগে এক বক্তৃতায় যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেছেন, “কার্বন নিঃসরণের বিষয়ে এখনই উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করা হলে আমাদের সভ্যতা পিছিয়ে যাবে, ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য একটি সুন্দর জীবন দিতে হবে।”

তিনি এ কথাও স্বীকার করেছেন, “জি-২০ সম্মেলন কিংবা গ্লাসগোতে আগামী সোমবার থেকে শুরু হতে যাওয়া কপ-২৬ সম্মেলন, কোনোটিই বৈশ্বিক উষ্ণায়ন রোধ করতে পারবে না। তার মতে, “আমাদের পক্ষে কেবলই উষ্ণতা বৃদ্ধির গতিকে একটু কমানো সম্ভব।”

বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, একটি খসড়া বিবৃতিতে জি-২০ এর পক্ষ থেকে তাপমাত্রা বৃদ্ধির পরিমাণকে ১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াসে (২.৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট) এ মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হবে তবে এ বিষয়ে আইনগতভাবে বাধ্যতামূলক কোনো চুক্তি করা হবে না।

করোনাভাইরাসের ভ্যাকসিন বৈষম্য প্রসঙ্গেও যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন কথা বলবেন।

অপরদিকে ভবিষ্যৎ মহামারিসমূহ কীভাবে প্রতিরোধ করা সম্ভব, সে বিষয়ক পরিকল্পনা নিয়েও আলোচনা করবেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। তিনি অংশগ্রহণকারী দেশগুলোর প্রতি আহ্বান জানাবেন শক্তি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য। এছাড়া ইরানের পারমাণবিক চুক্তির বিষয়ে আলোচনার জন্য জনসনের পাশাপাশি ফ্রান্সের ইমানুয়েল এবং জার্মানির বিদায়ী চ্যান্সেলর সঙ্গে বৈঠক করার কথা রয়েছে।

সংবাদ সূত্রঃ রয়টার, দা ইকোনমিস্ট, দা গার্ডিয়ান, স্কাই নিউজ

SHARE THIS ARTICLE