ইরানের নেতৃস্থানীয় পারমানবিক বিজ্ঞানী ফখরেজাদেহ সন্ত্রাসী হামলায় নিহত

 

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ গত শুক্রবার ইরানের রাজধানী তেহরানের নিকটে সন্ত্রাসী আক্রমণে নিহত হয়েছেন ইরানের উচ্চ পদস্থ পারমানবিক পদার্থবিজ্ঞানী মোহসেন ফখরিজাদেহ। 

ইরানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক সংবাদে জানানো হয়, পূর্ব তেহরানের শহরতলির অ্যাবসার্ড নামক স্থানে ফখরিজাদেহ গাড়িতে করে যাওয়ার সময় গোপনে লুকিয়ে থাকা “সন্ত্রাসীরা” তাকে গুলি করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হলে তিনি মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন। হত্যাকারীদের কি হয়েছে সে সম্পর্কে এখনো কিছুই জানা যায়নি।

ইরানের এই নেতৃস্থানীয় বিজ্ঞানী তার দেশের সামরিক পারমানবিক কর্মসূচীর নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন, যদিও হত্যার দায় কেউ স্বীকার করে কোন ঘোষণা এখনো কেউ করেনি।

ইরানের সুপ্রিম লিডার আলী হোসেইন খামেনি  বলেন যে এই হত্যার পরে ইরানের প্রথম কাজ হ’ল “আদেশদাতা এবং হত্যাকারীদের যথার্থ শাস্তি নিশ্চিত করা”; রাষ্ট্রপতি হাসান রুহানি এই হত্যার পিছনে ইসরায়েলকে দায়ী করে এক বিবৃতিতে বলেন, “বিশ্বব্যাপী জায়ানিস্ট সরকারের ঔদ্ধত্যের দুষ্ট হাত ভাড়াটে দখলদার মাধ্যমে রক্তে রঞ্জিত হলো” ।

মোহসেন ফখরিজাদেহ ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচিতে দীর্ঘদিন গুরুত্ত্বপূর্ন দায়িত্ব পালন করলেও জনসমক্ষে তা কখনো প্রকাশিত হয়নি। ইরানে তিনি শুধুমাত্র একজন অধ্যাপক হিসেবেই পরিচিত ছিলেন। ইরানের পারমাণবিক অস্ত্র কর্মসূচি আনুষ্ঠানিকভাবে পরিত্যক্ত হওয়ার দীর্ঘ সময় পরে পশ্চিমা সংস্থাগুলি তাকে এই কর্মসূচীর একজন মূল ব্যক্তিত্ব হিসাবে চিহ্নিত করে। ২০১৮ সালে একটি অনুষ্ঠানে, ইস্রায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনজমিন নেতানিয়াহু ইরানের গোপন কর্মসূচি সম্পর্কে বলতে গিয়ে উপস্থিত সকলকে বলেছিলেন,”ফখরিজাাদেহ নামটি মনে রাখবেন।” তবে সাম্প্রতিক সময়ে, ফখরিজাদেহ ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনির সাথে কিছু অনুষ্ঠানে উপস্থিত হন। সম্ভবতঃ এটাই তার মৃত্যুর কারণ। 

সম্ভবতঃ ফখরেজাদেহ এমন একজন ব্যাক্তি ছিলেন যিনি ইরানের পারমানবিক কর্মসূচী সম্পর্কে সবচেয়ে বেশী জানতেন, তার মত একজন ব্যাক্তির নেতৃত্ব, জ্ঞান এবং প্রাতিষ্ঠানিক শক্তি হারিয়ে যাওয়া নিঃসন্দেহে ইরানের জন্য একটি মারাত্নক আঘাত। দীর্ঘদিন ধরেই গুজব ছিল যে নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও ইরানের অভ্যন্তরে ইসরায়েলি এজেন্টরা কাজ পরিচালনা করে আসছে।২০১২ সালে, চারজন ইরানি পারমাণবিক বিজ্ঞানীকে হত্যা করা হলে, অভিযুক্ত একজনকে বিচারে ফাঁসি দেওয়ার আগে – তিনি তেল আবিব ভ্রমণ করে, ইসরায়েলি গোয়েন্দা সংস্থা মোসাদের কার্য্যালয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছিলেন বলে স্বীকার করেছিলেন। 

২০২০ সালে, নিউইয়র্ক টাইমস মার্কিন গোয়েন্দা সূত্রে জানিয়েছে যে ইসরায়েলি এজেন্টরা ইরানের অভ্যন্তরে আল-কায়েদার সেকেন্ড-ইন-কমান্ডকে হত্যা করেছে। একই বছর ইরানে কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে ছয়টি রহস্যজনক ঘটনা ঘটলে, ইরানি কর্মকর্তারা এগুলো তাদের শত্রুদের কারসাজি বলে সন্দেহ পোষণ করেছিলেন। 

ইতিমধ্যে, সাম্প্রতিক সময়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ সহায়তায় ইসরায়েল তাদের দীর্ঘদিনের বৈরী , মধ্যপ্রাচ্যের দেশ সংযুক্ত আরব আমিরাত, বাহরাইন এবং আফ্রিকার দেশ সুদানের সাথে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনস্থাপন করেছে। এমনকি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী গোপনে সৌদী আরব সফর করেছেন বলেও সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। মনে করা হচ্ছে সহসাই এই দুই দেশের মধ্যে কূটনৈতিক সম্পর্ক পুনস্থাপনের সংবাদ ঘোষিত হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের ক্ষমতার পালা বদলের আগেই বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ গ্রহণের ব্যাপারে যুক্তরাষ্ট্র কাজ করছে। 

ইরান সর্বদাই ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের বৈরী। মধ্যপ্রাচ্যে ক্ষমতার বলয়ে ইরানের অবস্থান ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিকে সাম্প্রতিক সময়ে মারাত্নক দুর্বল করে দিয়েছে। বিশেষ করে সিরিয়া, ইয়েমেন এবং লেবাননের সাম্প্রতিক ঘটনাগুলো সকলের দৃষ্টি আকর্ষন করেছে। এদিকে যুক্তরাষ্ট্র গত চার বছর থেকে ইরানের উপর সর্বাত্নক চাপ প্রয়োগ করলে, ইরানের অর্থনীতি মারাত্নক চাপের মুখে আছে কিন্তু ইরান এই বিপদের মধ্যেও কোন প্রকার নতজানু হয়নি কিংবা তাদের আচার আচরণে তেমন কোন পরিবর্তনের আলামত পরিলক্ষিত হয়নি। এমতাবস্থায় বিশ্বে আমেরিকা আর ইসরায়েলের অবস্থান অনেকখানি দুর্বল হয়েছে সেটা অনস্বীকার্য্য। 

SHARE THIS ARTICLE