ইসলামে নারীদের মর্যাদা ও অধিকার

মুহাম্মদ বিন ওয়াহিদ: ইসলাম পূর্ব যুগে নারীদেরকে সামাজিকভাবে অত্যন্ত হেয় ও লাঞ্ছিত করা হতো। তাদের সাথে একজন দাসদাসীর সাথে যে আচরণ করা হয়, তার চেয়েও নিকৃষ্ট আচরণ করা হতো। এমনকি কারো যদি মেয়েসন্তান জন্ম নিতো, তাকে জীবন্ত কবর দেয়া ছিল তৎকালীন যুগে একটি সাধারণ ব্যাপার।

ইসলাম এসে নারীদের সম্মান দিয়েছে। তাদের হৃত অধিকার ফিরিয়ে দিয়েছে। নবীজি সা. বলেছেন, তোমাদের মায়ের পায়ের নিচে তোমাদের জান্নাত। আরেক হাদিসে নবীজি সা. বলেন, ‘যার তিনটি কন্যা সন্তান থাকে বা তিনটা বোন থাকে বা দুটি কন্যা থাকে বা দুটি বোন থাকে; আর সে তাদের সঠিকভাবে লালন-পালন করে ও তাদের ব্যাপারে (অন্তরে) আল্লাহর ভয় রেখে কাজ করে; তার বিনিময় সে চিরস্থায়ী জান্নাতে পৌঁছে যাবে।’ (তিরমিজি)

নবীজি সা. বলেন, ‘যার তিনটি কন্যা সন্তান থাকবে আর সে তাদের লালন-পালনের কষ্ট সহ্য করবে এবং সামর্থ্য অনুযায়ী তাদের ভরণ-পোষণ দেবে; কেয়ামতের দিন ওই কন্যা সন্তান তার জন্য জাহান্নামের পথে প্রতিবন্ধক তথা বাধা হয়ে দাঁড়াবে।’ (ইবনে মাজাহ)

ফজিলতমূলক নসিহত পেশ করার পর যখন কন্যা শিশুর প্রতি সহিংসতা কিছুটা কমে আসে; তখন প্রিয়নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ঘোষণা করেন, ‘আমি তোমাদের গুরুত্বের সাথে এ নির্দেশ দিচ্ছি, তোমরা নারীদের সাথে ভালো ব্যবহার করো। তোমরা আমার এ নির্দেশ গ্রহণ করো।’ (বুখারি)

ইসলামে নারীর শিক্ষা

নারীদের শিক্ষা দেয়ার ব্যাপারে পবিত্র কোরআনে আছে, ‘তোমরা তাদের (নারীদের) সাথে উত্তম আচরণ করো ও উত্তম আচরণ করার শিক্ষা দাও।’ (সূরা-৪ নিসা, আয়াত : ১৯)।

মহানবী (সা.) ঘোষণা করেন, ‘যার রয়েছে কন্যাসন্তান, সে যদি তাকে (শিক্ষাসহ সব ক্ষেত্রে) অবজ্ঞা ও অবহেলা না করে এবং পুত্রসন্তানকে তার ওপর প্রাধান্য না দেয়; আল্লাহ তায়ালা তাকে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘তোমরা নারীদের উত্তম উপদেশ দাও (উত্তম শিক্ষায় শিক্ষিত করো)।’

নবীজি সা. বলেছেন, ‘ইলম শিক্ষা করা (জ্ঞানার্জন করা) প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরজ (কর্তব্য)।’ (উম্মুস সহিহাঈন, ইবনে মাজাহ শরিফ)।

তাই হাদিস গ্রন্থসমূহের মধ্যে হজরত আয়িশা (রা.) থেকে বর্ণিত হাদিসের সংখ্যা ২ হাজার ২১০, যা সব সাহাবায়ে কিরামের মধ্যে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ।

মা হিসাবে ইসলাম নারীদের যে মর্যাদা দিয়েছে

হজরত আবু হুরায়রা রা. বর্ণনা করেন, একবার এক লোক মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা.-এর দরবারে এসে জিজ্ঞেস করলেন, আমার সদ্ব্যবহার পাওয়ার বেশি অধিকারী কে? নবীজি সা. বললেন, ‘তোমার মা’। ওই লোক জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। ওই লোক আবারও জিজ্ঞেস করলেন, তারপর কে? এবারও তিনি উত্তর দিলেন ‘তোমার মা’। (বুখারি)।

বলার অপেক্ষা রাখে না, পৃথিবীর কোনো তন্ত্রমন্ত্র ইসলামের আগে বা ইসলামের মতো নারীকে এতো সম্মান ও মর্যাদা দিতে পারেনি।

আজকের এই নারী দিবসে আসুন আমরা শপথ নেই, ইসলাম নারীদের যে অধিকার ও মর্যাদা দিয়েছে, আমি সবার আগে তা আদায় করবো।

লেখক : তরুণ আলেম ও সংবাদকর্মী

SHARE THIS ARTICLE