আইরিশ বাংলাপোস্ট ডেস্কঃ কোভিড মহামারিতে অমিক্রনের সংক্রমণ বৃদ্ধির সময়ে পূর্বনির্ধারিত প্রত্যক্ষ অনুষ্ঠান পরিবর্তন করে পরোক্ষ ডিজিটাল পদ্ধতিতে “জুম” এপ্লিক্যাশন ব্যাবহার করে ক্লোনডালকিন মসজিদ (আই এম সি সি) আয়োজিত ১৮তম বার্ষিক ওয়াজ মাহফিল অনুষ্ঠিত হলো। প্রাথমিক অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন মনসুর আহমেদ। অনুষ্ঠানের প্রথম পর্বে শিশু কিশোরদের অংশগ্রহণে সুললিত কণ্ঠে কোরান পাঠ, হামদ, নাথ ও গজল পরিবেশন করেন বেশ কয়েকজন শিশু ও কিশোর। রাইয়ান, সুফিয়া, রাকিন, আদিবা, আলিশা মানসুর, আহমদ হুসাইন জারিফ, তাহমিদ জামান, আফিফা মানসুর, আইয়ান, ফারিক আলমগির, সারা, মাহফুজ ও রাসেল মুসা সহ অন্যান্যরা এই পর্বে অংশগ্রহণ করেন।
মূল অনুষ্ঠান শুরু হয় বিকাল ২ টা ২০ মিনিটে। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জনাব মিজানুর রহমান জাকির এবং আই এম সি সির পক্ষ থেকে স্বাগত ভাষণ দেন জনাব সোলায়মান হোসেন রনী। অনুষ্ঠানের অতিথি বক্তা লন্ডন থেকে আগত ডঃ আব্দুস সালাম আজাদির পরিচিতি প্রদান করেন জনাব মিজানুর রহমান জাকির।
ডঃ আব্দুস সালাম আজাদি শুরুতে বলেন, আজ ২৫শে ডিসেম্বর বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্তে ক্রিসমাস পালিত হচ্ছে। এই সময়ে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে মুসলিমরা ধর্মীয় আলোচনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছেন। সুরা আল ইমরানের আয়াত ৩৩-৩৭ পাঠ করে সেই আয়াতের সূত্র ধরে তিনি কোরানের আলোকে পরিবারের রূপরেখা সম্পর্কে বক্তব্য উপস্থাপনা শুরু করেন।
তিনি বলেন, বাংলা শব্দ স্বামী এবং স্ত্রী এই শব্দগুলোর অর্থ করলে দাড়ায় প্রভু এবং দাসী। তিনি বলেন কোরানে কোথাও স্বামী স্ত্রী শব্দ উচ্চারিত হয়নি বরং বলা হয়েছে “যাওজ” যার অর্থ “জোড়া”। আদম ও হাওয়াকে “জোড়া” বলে দিয়ে আল্লাহ একটি বন্ধনের উল্লেখ করেছেন। এই বন্ধনে কোন প্রভু কিংবা দাসীর সম্পর্কে কোথাও প্রকাশিত হয়নি বরং এই সম্পর্ককে সহযোগী উল্লেখ করাই সমীচীন। অন্যদিকে আদমের ত্রুটির কথা উল্লেখ করা হলেও কোথাও হাওয়ার কোন সমালোচনা প্রকাশিত হয়নি।
সুরা আল ইমরানের ৩৩ নাম্বার আয়াতে উল্লেখিত হয়েছে, “আল্লাহ্ নিশ্চয়ই আদম ও নূহ্ ও ইব্রাহীমের বংশধর, আর ইমরানের পরিবারকে মানবগোষ্ঠীর মধ্যে উচ্চ মর্যাদা দিয়েছিলেন।” এই আয়াতের সূত্রে তিনি এই চারটি পরিবারের ঐতিহাসিক দিকগুলো তুলে ধরে ইসলামে পরিবারের গুরুত্ব সম্পর্কে সকলকে গভীর গুরুত্ব দেয়ার আহবান জানান।
হজরত ইব্রাহিম (আঃ), হজরত সারা ও হাজেরার পরিবারের উল্লেখ করে তিনি বলেন, বিবি হাজেরার মাধ্যমে ইব্রাহিম যখন ইসমায়েলের পিতা হলেন। সেই পরিবারকে ইব্রাহিমের মাধ্যমে পাঠিয়ে দিলেন আরব মরুভূমিতে। সেই মরুভূমিতেই পরিবার গড়ে উঠলো। পরিবারের পর পরিবার সেই আরব ভূমিতেই নবী মুহাম্মদের জন্ম হলো। প্রজন্ম তৈরি করা হলো। ইব্রাহিম আঃ পরিবারের বিসর্জন জন্ম দিয়েছিলো এক নূতন পারিবারিক ধারাবাহিকতার, যার মাধ্যমেই শেষ নবী মুহাম্মদ সাঃ এর আগমন এবং মুসলিম জাতির অভ্যুদয়।
তিনি বলেন এটি অবধারিত যে, একটি সন্তান আগমনের সাথে সাথেই একটি পরিবারে পরিবর্তন চলে আসে। এই পরিবর্তনের সূত্রে হাজেরাকে যখন ইব্রাহিম রেখে চলে আসছিলেন তখন হাজেরা বলেছিলেন, “আল্লাহ আমাদেরকে ধ্বংস হতে দিবেন না।” এই পারিবারিক সূত্রের ধারাবাহিকতায় আরবে গড়ে উঠে আরবি, কিবতিয়ান,ফিনিকিয়া এই তিনটি ভাষা থেকে নূতন আরবি ভাষার উৎপত্তি। তিনি বলেন, আমাদেরকে কোরানের আলোকে নবিদের জীবন থেকে এই পরিবারের গুরুত্ব উপলব্ধি করে গড়ে তুলতে হবে নূতন ধারার সমাজব্যাবস্থা।
অনুষ্ঠানটি ক্লনডালকিন (আই এম সি সি) মসজিদ থেকে সরাসরি প্রচার করা হয়। মসজিদে বেশ কিছু দর্শক শ্রোতা প্রত্যক্ষভাবে উপস্থিত ছিলেন বলে অনুভূত হয়েছে। ফেইসবুকে লাইভে প্রচারিত এই অনুষ্ঠানের সাথে অনলাইনে এক পর্য্যায়ে ১৭৮ জন পর্য্যন্ত যুক্ত হতে দেখা গিয়েছে। ৩:৪৫ মিনিটে বক্তব্য সমাপ্ত করে তিনি ক্লনদালকিন মসজিদের জন্য সকলকে অর্থ প্রদানের আহবান জানালে অনেকেই মাসিক কিংবা বাৎসরিক চাঁদা প্রদানের অঙ্গীকার করেন। এরপর মাঘরিবের নামাজের পর অনুষ্ঠিত হয় প্রশ্নোত্তর পর্ব।