চিত্রনায়ক শাহিন আলম আর নেই

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ এক সময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়ক শাহীন আলম সোমবার (৮ মার্চ) রাত ১০টা ৫ মিনিটে  মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর আগে তিনি চলচ্চিত্রকে বিদায় জানিয়ে ইসলাম ধর্মের অনুশাসন পুরোপুরি পালন শুরু করেন। মৃত্যুর কয়েকমাস আগে একটি ইউটিউব চ্যানেলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে এমনটাই জানিয়েছিলেন এ চিত্রনায়ক।

রাজধানীর আজগর আলী হাসপাতালে লাইফ সাপোর্টে ছিলেন এ অভিনেতা।

শাহীন আলমের মৃত্যুর খবর সময় সংবাদকে নিশ্চিত করেছেন বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী সমিতির সাধারণ সম্পাদক জায়েদ খান। এর আগে সন্ধ্যা তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলেও জানিয়েছিলেন জায়েদ খান।

এর আগে নিজের ফেসবুকে একটি ছবি শেয়ার করে ওমর সানী লেখেন, শাহীন আলম আমার বন্ধু। একসাথে পথচলা, অভিনয়ে ও অসাধারণ। দীর্ঘসময় ধরে চলচ্চিত্রে কাজ করছে না। কিছুদিন আগে কিডনিজনিত সমস্যায় ওকে দেখতে গিয়েছিলাম। পরে শুনলাম ওর কিডনি দুটিই বিকল, ডায়ালাইসিস করছে বেশ কিছুদিন যাবত। গতকাল (৭ মার্চ) ওর ছেলে ফোন দিয়েছিল। শুধু বলল, আঙ্কেল বাবা লাইফ সাপোর্টে, করোনা পজিটিভ। আল্লাহ তুমি সুস্থতা দান করো, বন্ধুকে ফিরিয়ে দাও।

শাহীন আলমের ছেলে ফাহিম জানান, আগে থেকেই তার বাবার কিডনি জটিলতার সঙ্গে ডায়াবেটিস ও উচ্চ রক্তচাপজনিত সমস্যা ছিল। ডায়ালাইসিস চলাকালে তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যায়। তারপর দ্রুত তাকে লাইফ সাপোর্টে নেওয়া হয়।

ঢাকায় বেড়ে ওঠা শাহীন আলম শুরুতে মঞ্চে অভিনয় করতেন। ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ১৯৮৬ সালে সিনেমায় পা রাখেন তিনি। ১৯৯১ সালে শাহীন অভিনীত ‘মায়ের কান্না’ সিনেমাটি মুক্তির পর নজরে আসেন তিনি। একসঙ্গে সাতটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হন শাহীন। এরপর দেড় শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন এ অভিনেতা।

ভিডিওঃ সময় সংবাদ

বেশ কয়েকবছর কিডনি জটিলতায় ভুগছিলেন এ অভিনেতা। করোনাকালীন কঠিন অর্থ সংকটে পড়েছিলেন তিনি। উপার্জনের একমাত্র পথ কাপড়ের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি বন্ধ থাকায় সংসারের সদস্যদের খাবার জোগাড় করতেই অসমর্থ হয়ে পড়েন। এর সঙ্গে যুক্ত হয় সপ্তাহে একদিন ডায়ালোসিসসহ ওষুধপত্রের খরচ।

অথচ ঢাকাই সিনেমায় বর্ণাঢ্য ক্যারিয়ার ছিল তার। অভিনয় করে দু’হাতে কামিয়েছেন টাকা। ২৭ বছরের অভিনয়ের ক্যারিয়ারে দেড়শোর বেশি সিনেমায় অভিনয় করেছেন।

রূপালি জগতের বিত্তবৈভব ছেড়ে হঠাৎ ধর্মে কেন ও কীভাবে মনোযোগী হলেন শাহীন আলম?

ইউটিউব চ্যানেলকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শাহীন আলম বলেন, আমি তো মুসলমান। পরকালে বিশ্বাসী। আমাকে একদিন না একদিন ওই সর্বশক্তিমানের কাছে ফিরতেই হবে। তখন কী জবাব দেব? একটা মানুষ কত দিন বাঁচে? ধরুন খুব বেশি হলে ১০০ বছর বাঁচব। এরপর তো আল্লাহর কাছে গিয়ে জবাবদিহি করতে হবে। তাই আমি বলব, আগে পরকালের হিসাবের খাতাটা ঠিক রাখতে হবে। এসব বিবেচনা করেই সিনেমা থেকে সরে এসেছি। আস্তে আস্তে নিজেকে গুটিয়ে নিয়েছি।

অথচ এক সময় এই শাহীন আলমের রন্ধ্রে রন্ধ্রে বয়েছিল অভিনয়ের নেশা।

সিনেমাজগত থেকে সরে আসার আরো তিনটি কারণ জানিয়েছিলেন শাহীন আলম। বলেছিলেন, ঢাকাই ছবিতে যখন অশ্লীলতা মহামারী আকার ধারণ করে আর সিনেমাজগতটা নির্মাতার হাতছাড়া হয়ে প্রযোজকদের হাতে চলে যায়, তখন আর অভিনয় চালিয়ে যেতে পারছিলাম না। আমাকে অশ্লীল দৃশ্যে অভিনয়ের জন্য চাপ দেওয়া হতো। আমি রাজি না হলে পরে দেখতাম কাটপিস জুড়ে দেওয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে আমার বড়ভাই হজ পালন করে এসে আমাকে অনুরোধ করেন, সিনেমাজগত ছেড়ে দিতে। আমিও পরে উপলব্ধি করি আর কতো। সিনেমা থেকে নিজেকে গুটিয়ে পারিবারিক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানটি দেখাশোনা শুরু করি।

শাহীন আলমের রূপালি পর্দাকে আর না বলার পেছনে আরও একটি ঘটনা জড়িয়ে আছে। সেটা হলো, তার প্রিয় মেয়ের আত্মহত্যার ঘটনা।

এসএসসি পরীক্ষায় ভালো ফলাফল না করলে শাহীন আলমের একমাত্র মেয়ে আত্মহত্যা করে। ওই ঘটনার পর পরই বদলে যেতে থাকেন তিনি। নামাজ আদায়ে মনোযোগী হন। আমূল পরিবর্তন  ঘটে তার।

উল্লেখ্য, ঢাকায় বেড়ে ওঠা শাহীন আলম শুরুতে মঞ্চে অভিনয় করতেন। ‘নতুন মুখের সন্ধানে’ প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ১৯৮৬ সালে সিনেমায় পা রাখেন তিনি। ১৯৯১ সালে শাহীন অভিনীত ‘মায়ের কান্না’ সিনেমাটি মুক্তির পর নজরে আসেন তিনি। একসঙ্গে সাতটি সিনেমায় চুক্তিবদ্ধ হন শাহীন। এরপর দেড় শতাধিক সিনেমায় অভিনয় করেছেন এ অভিনেতা।

শাহীন আলম অভিনীত সিনেমাগুলোর মধ্যে ‘ঘাটের মাঝি’, ‘এক পলকে’, ‘প্রেম দিওয়ানা’, ‘চাঁদাবাজ’, ‘প্রেম প্রতিশোধ’, ‘টাইগার’, ‘রাগ-অনুরাগ’, ‘দাগি সন্তান’, ‘বাঘা-বাঘিনী’, ‘স্বপ্নের নায়ক’, ‘আরিফ লায়লা’, ‘আঞ্জুমান’, ‘অজানা শত্রু’, ‘গরিবের সংসার’, ‘দেশদ্রোহী’, ‘আমার মা’, ‘পাগলা বাবুল’, ‘তেজী’, ‘শক্তির লড়াই’, ‘দলপতি’, ‘পাপী সন্তান’, ‘ঢাকাইয়া মাস্তান’, ‘বিগবস’, ‘বাবা’, ‘বাঘের বাচ্চা’, ‘বিদ্রোহী সালাউদ্দিন’, ‘তেজী পুরুষ’ ইত্যাদি অন্যতম।

SHARE THIS ARTICLE