জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠের গুরুত্ব

মাইমুনা আক্তারঃ পবিত্র কোরআনের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি সুরা হলো সুরা কাহফ। এই সুরা এতটাই বরকতপূর্ণ যে এটি তিলাওয়াত করলে মহান আল্লাহর বিশেষ রহমত অবতীর্ণ হয়। বারা বিন আজিব (রা.) বর্ণনা করেছেন, জনৈক ব্যক্তি (নামাজে) সুরা কাহফ তিলাওয়াত করছিল। তখন বাড়ির একটি চতুষ্পদ জন্তু লাফাতে শুরু করে। অতঃপর সে সালাম বলল।  তখন কুয়াশা বা একখণ্ড মেঘ তাকে আবৃত রাখে। বারা বিন আজিব (রা.) বর্ণনা করেছেন যে সে বিষয়টি রাসুল (সা.)-এর কাছে বর্ণনা করেন। তিনি তাঁকে বলেন, ‘হে অমুক, তুমি সুরাটি তিলাওয়াত করো। কারণ এটি আল্লাহর রহমত বা প্রশান্তি, যা কোরআন তিলাওয়াতের কারণে অবতীর্ণ হয়েছিল।’ (বুখারি, হাদিস : ৩৬১৪; মুসলিম, হাদিস : ৭৯৫)

বিশেষ করে জুমার দিন এই সুরাটির তিলাওয়াতের ফজিলত অপরিসীম। পবিত্র কোরআন ও হাদিসে জুমাবারের অনেক আমল বর্ণিত হয়েছে। জুমাবার সপ্তাহের শ্রেষ্ঠতর দিন। সুরা কাহফ তিলাওয়াত এই দিনের অন্যতম আমল। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, মুআজ (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফের শুরু ও শেষ তিলাওয়াত করবে তার পায়ের নিচ থেকে মাথা পর্যন্ত নূর প্রজ্জ্বলিত হবে। আর যে ব্যক্তি পুরো সুরা তিলাওয়াত করবে তার জন্য আসমান থেকে জমিন পর্যন্ত নূর প্রজ্জ্বলিত হবে।’ (মুসনাদে আহমদ : ৪৩৯/৩)

সুবহানআল্লাহ, পবিত্র এই সুরা এর পাঠকারীকে কিয়ামতের দিনও নূর দিয়ে আলোকিত করে রাখবে। ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ পাঠ করবে, তার পায়ের নিচ থেকে আসমান পর্যন্ত নূর প্রজ্জ্বলিত হবে এবং কিয়ামতের দিন তার জন্য উজ্জ্বল হবে। আর দুই জুমার মধ্যবর্তী সব গুনাহ ক্ষমা করা হবে।’ (সূত্র : তাফসিরে ইবনে কাসির: ৬/৩৯৮)

তাই আমাদের উচিত, প্রতি জুমার দিন এই সুরার তিলাওয়াত করাকে অভ্যাসে পরিণত করা। কারণ এই সুরাটি নিয়ম করে প্রতি জুমায় তিলাওয়াতের উপকারিতা হলো, কেউ প্রতি জুমায় এই সুরা তিলাওয়াত করলে এক জুমা থেকে অন্য জুমার মধ্যবর্তী সময় তার জন্য নূর প্রজ্জ্বলিত করে রাখা হয়। আবু সাইদ খুদরি (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি জুমার দিন সুরা কাহফ তিলাওয়াত করবে, তার জন্য দুই জুমা পর্যন্ত নূর প্রজ্জ্বলিত হবে।’ (সুনানে দারিমি, হাদিস : ৩৪০৭)

সম্ভব হলে এই সুরাটি মুখস্থ করে ফেলা উত্তম। কারো পক্ষে পুরো সুরা মুখস্থ করা সম্ভব না হলে কমপক্ষে হাদিসে বর্ণিত বিশেষ আয়াতগুলো মুখস্থ করা যেতে পারে। আবু দারদা (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফের প্রথম ১০ আয়াত মুখস্থ করবে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে।’ (মুসলিম, হাদিস : ৮০৯)

আরেক বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফের শেষ ১০ আয়াত পড়বে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে।’ (মুসনাদে আহমদ, ৪৪৬/৬)

আরেক বর্ণনায় এসেছে, ‘যে ব্যক্তি সুরা কাহফের ১০ আয়াত পড়বে সে দাজ্জালের ফিতনা থেকে রক্ষা পাবে।’ (তিরমিজি, হাদিস : ২৮৮৬)

কেউ যদি সুরা কাহফ পুরোটাই মুখস্থ করে ফেলে, তাহলে সে এই তিনটি হাদিসেরই ফজিলত অর্জন করতে পারবে। তা সম্ভব না হলে কমপক্ষে শুরু ও শেষের ১০টি আয়াত মুখস্থ করলেও হাদিসে বর্ণিত ফজিলত পাওয়ার আশা করা যায়। মহান আল্লাহ সবাইকে সুরা কাহফের এই ফজিলতপূর্ণ আমল করার তাওফিক দান করুন। আমিন।

SHARE THIS ARTICLE