ডলারের দাম আরও বাড়ল, খোলা বাজারে ১০২ টাকা

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ বাংলাদেশের বাজারে মার্কিন ডলারের দাম হু হু করে বাড়ছে। বেশকিছু দিন ধরেই লাগামহীন ভাবে বাড়ছিল দাম। এবার কার্ব মার্কেট বা খোলা বাজারে ডলারের দাম ১০০ টাকা ছাড়িয়ে গেছে।

মঙ্গলবার (১৭ মে) রাজধানীর ব্যাংক পাড়া মতিঝিল, পল্টন ও বায়তুল মোকাররম এলাকায় খোঁজ নিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।

গত এক সপ্তাহের ব্যবধানে ডলারের দাম ১ টাকা ৫ পয়সা বেড়েছে। আর মাসের ব্যবধানে তিন বারে ডলারের দাম ১ টাকা ৩০ পয়সা বেড়েছে।

আজ মঙ্গলবার এক্সচেঞ্জ হাউজগুলোতে খুচরা ডলার ১০০ টাকা থেকে ১০২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। একদিন আগেও এ দর ছিল ৯৬ থেকে ৯৮ টাকা।

খুচরা বাজারে ডলার বিক্রিতে জড়িতদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, আজকে রেট ১০২ টাকা। গতকাল এই দাম ছিল ৯৭ থেকে ৯৮ টাকায়। বাজারে ডলারের চাহিদা থাকলেও জোগান কম। কাল আরও বাড়ার আশঙ্কা করছেন সংশ্লিষ্টরা।

মতিঝিলের ডলার ব্যবসায়ী আব্দুল জাব্বার বলেন, আজকে ১০১ টাকা ৫০ পয়সা দরে বিক্রি করছি। মানুষ বিদেশ যাচ্ছে। এখন নগদ ডলারের প্রচুর চাহিদা। ব্যাংকগুলোতেই ডলারের সংকট। এখন প্রতিদিনই দুই-তিন টাকা করে বাড়ছে। সামনে হজ মৌসুম আসছে, আরও দাম বাড়বে।

এদিকে বাংলাদেশ ব্যাংক সর্বশেষ সোমবার (১৬ মে) ডলারের দর বেঁধে দিয়েছে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। কিন্তু তাদের বেঁধে দেওয়া এ রেট বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোও মানছে না। এখন ব্যাংকে এলসি করতে গেলে ডলারের বিপরীতে নেওয়া হচ্ছে ৯২ থেকে ৯৩ টাকা। আবার কোনো কোনো ব্যাংক ৯৫/৯৬ টাকাও নিচ্ছে বলে জানিয়েছে ব্যবসায়ীরা।

ব্যাংকারদের সঙ্গে আলাপকালে তারা জানান, আমদানি দায় পরিশোধ করতে হয় ডলারের মাধ্যমে। আগের চেয়ে দেশে আমদানি বাড়ার কারণে দায় পরিশোধের পরিমাণও বেড়ে গেছে। এই আমদানি দায় পরিশোধের চাহিদা বাড়ার কারণে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়ছে। তবে বাজার স্থিতিশীল রাখতে দেশে কার্যরত ব্যাংকগুলোর নিকট কেন্দ্রীয় ব্যাংক চাহিদার বিপরীতে ডলার বিক্রি করছে। এতে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে।

ডলারের দাম পর্যালোচনায় দেখা গেছে, চলতি বছরের ৬ জানুয়ারি পর্যন্ত আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কেনাবেচা হয়েছিল ৮৫ টাকা ৮০ পয়সা। যা ৯ জানুয়ারি বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮৬ টাকা। গত ২৩ মার্চ তা বেড়ে ৮৬ টাকা ২০ পয়সায় বেচাকেনা হয়। ফের ২৭ এপ্রিল ডলার প্রতি ২৫ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে।

গত ১০ মে ডলার প্রতি আরও ২৫ পয়সা বেড়ে ৮৬ টাকা ৭০ পয়সায় বেচাকেনা হয়েছে। আর আজ (১৬ মে) আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কেনাবেচা ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা নির্ধারণ করে দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাতে এক সপ্তাহের ব্যবাধনে ডলারের দাম ১ টাকা ৫ পয়সা বেড়েছে। এক মাসের ব্যবধানে প্রতি ডলারের দাম বেড়েছে ১ টাকা ৩০ পয়সা।

এদিকে ডলারের বিপরীতে দিনে দিনে মান হারাচ্ছে টাকা। গত এক দিনেই ডলারের বিপরীতে টাকার মান ক‌মে গে‌ছে ৮০ পয়সা। আর গত ২০ দিনের ব্যবধা‌নে ডলারের বিপরীতে টাকার দরপতন হয়েছে এক টাকা ৩০ পয়সা।

সোমবার (১৬ মে) আন্তঃব্যাংক মুদ্রাবাজারে প্রতি ডলার কিনতে খরচ করতে হচ্ছে ৮৭ টাকা ৫০ পয়সা। এক‌দিন আ‌গেও এক ডলা‌রে কিনতে লেগেছিল ৮৬ টাকা ৭০ পয়সা। আর গত ১০ মে ছিল ৮৬ টাকা ৪৫ পয়সা এবং ২৭ এপ্রিল ছিল ৮৬ টাকা ২০ পয়সা।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বেঁধে দেওয়া রেটের চেয়ে বাজারে বেশি দামে ডলার বিক্রি হচ্ছে বিষয়টি স্বীকার করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম।

 তিনি বলেন বলেন, আমাদের কাছেও এ ধরনের অভিযোগ এসেছে। তবে আমাদের রপ্তানি আয়ের তুলনায় আমদানি বেশি, এ কারণে ডলারের ওপর চাপ প‌ড়ে‌ছে। এ কারণে ব্যাংকগুলোর চাহিদা অনুযায়ী বাংলাদেশ ব্যাংক ডলার সরবরাহ করছে। এখন পর্যন্ত ব্যাংকগু‌লোর চা‌হিদার বিপরী‌তে ৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি বিক্রি করা হয়েছে। যখনই প্রয়োজন আরও ডলার সরবরাহ করা হবে।

SHARE THIS ARTICLE