তোমার বিশ্বাসে বিষ ছিল, আমার নিঃশ্বাসে প্রেম (পঞ্চম পর্ব)

লেখক রহমান ফাহমিদা –(পঞ্চম পর্ব):পরের দিন মায়াবী মাকে বলে,ফাহিম যেভাবে বলেছে সেইভাবে সেজেগুজে বেনুদের বাসায় গেল।মা কিছু বলল না কারণ মায়াবী মাঝে মাঝেই শাড়ি পরে।শাড়ি ওর খুব প্রিয়।তাছাড়া ইন্ডিয়া বেড়িয়ে এসেছে বান্ধবিদের তো সব শেয়ার করবে,মা তাই কোন কিছু মনেও করলনা।মায়াবী বেনুদের বাসায় পৌঁছনোর দশ মিনিটের মধ্যে ফাহিম বেনুদের বাসার কাছে বাইক নিয়ে গিয়ে দাঁড়াল।মায়াবীকে কল দিল যেন বের হয়।তারপর ফাহিম দূর থেকে দেখল,মায়াবী ধীর পায়ে হেঁটে আসছে ওর দিকে।মায়াবীকে এত সুন্দর লাগছিল যে ফাহিম মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইল।মায়াবীর সিল্কি চূলগুলো ছেড়ে রাখছে,মাথার সাইডে একটি বড় লালা গোলাপ,হালকা আকাশি রঙের শাড়ি পড়েছে,ওর গায়ের রংটা ফর্সা না হলেও কালো না,উজ্জল শ্যামলা।তাই আকাশি রংটা ওকে মানিয়েছে।মায়াবী ফাহিমের কাছে আসার পর ফাহিম বলল,আজকে তোমাকে ঠিক ইন্ডিয়ার সিরিয়ালের নায়িকাদের মত লাগছে।কি ব্যাপার!ইন্ডিয়া গিয়ে আবার ইন্ডিয়া্র সিরিয়ালে নায়িকার নাম লিখিয়ে আসনি তো?    

মায়াবী হাল্কা করে ওর পিঠে থাপ্পড় মেরে বলল,অসভ্যতা রাখো কোথায় যাবে তা বল?

ফাহিম বলল,অসভ্যতা কখন করলাম এখনো তো তোমাকে টাচই করিনি বরং তুমি আমাকে মারলে!তাহলে?

মায়াবী বলল,তুমি কি যাবে?না আমি বাসায় চলে যাব।

ফাহিম বলল,যাবই তো কিন্তু তাঁর আগে তোমাকে ভালো করে দেখে নেই।

মায়াবী বলল,রাস্তায় দাঁড়িয়ে আর দুস্টুমি করা লাগবেনা।আশেপাশের মানুষ দেখছে।

ফাহিম  বলল,দেখুক!তাতে কি?আমরা তো আর পর না!মন থেকে দুজন দুজনকে ভালবেসেছি।মুখে মুখে তিনবার কবুল বলেছি আর কি চাই!কাগজ কলমে লিখলেই কি স্বামী স্ত্রী হয়!মন থেকেও গ্রহন করতে হয়।আমি আর তূমি তো অনেক আগেই স্বামী স্ত্রী হয়ে গেছি তাইনা?মন থেকে তো গ্রহণ করেছি দুজন দুজনকে।

মায়াবী বলল,বিয়েটাকে অত ছেলে খেলা ভেবো না।তোমার এসব কথা ধোপে টিকবেনা।কেননা ধর্ম কর্ম ও রীতি রেওয়াজ বলে কিছু একটা আছে।বিয়ের বিষয়ে স্পস্টভাবে কোরআন হাদিসে লেখা আছে।তুমি যেটাকে সিম্পল কাগজ বলছ,তা কিন্তু নয়।এটা একটি দলিল,যার মধ্যে স্বামী স্ত্রীর সুনিপুনভাবে অধিকারের কথা লিখা থাকে।তাছাড়া আমি তোমার মত বেহায়া নই,তুমি মানলেও আমি মানতে পারলাম না।যখন আমাদের বিয়ে হবে তখনি আমরা স্বামী স্ত্রী হবো তার আগে যেমন বন্ধু বা প্রেমিক প্রেমিকা আছি তাই রবো,বুঝলেন জনাব?

ফাহিম বলল,ঠিক আছে,এবার বকবক রেখে আমার বাইকে উঠে আমাকে কৃতার্থ করেন,জনাবা।

মায়াবী বাইকে বসে ফাহিমের কাঁধে হাত রেখে বসলো।ফাহিম বলল,আমার কোমর  ভালো করে ধরে বসো তানাহলে শাড়ি পেঁচিয়ে পড়ে যেতে পারো,শাড়িটা ভাল  করে গুছিয়ে রেখো।মায়াবী ভয়ে ফাহিমকে ধরে রাখল কারন ফাহিম অনেক স্পিডে বাইক চালায়।মায়াবী এত নিষেধ করে তারপরেও শুনেনা।মায়াবী ফাহিমকে ধরে বসলে ফাহিম খুশি হয় গেল এবং দুষ্টুমি করে বার বার বাইকে হার্ড ব্রেক কষল যেন মায়াবী হুমড়ি খেয়ে ওর পিঠের ওপর পড়ে,আর মায়াবীর শরীরের মিস্টি গন্ধ ওকে পাগল করে দেয়।দুজনে আশুলিয়ার কাছাকাছি ফ্যান্টাসি কিংডমে গেল।সারাদিন দুজনে ওখানে টাইমপাস করে সন্ধাবেলায় বাড়ি ফেরার সময় মায়াবী ফাহিমকে নিয়ে মার্কেটে গিয়ে দামি ব্রান্ডের একটি টিশার্ট কিনে দিল।ফাহিম নিতে চায়নি বলল,ইন্ডিয়া থেকে তো নিয়ে এসেছ এখন আবার কেন?  

মায়াবি বলল,ওটা তো  মা এনেছে।মায়ের সামনে তো তোমার জন্য টি সার্ট  কিনতে পারিনা তাই আজকে কিনলাম।যাও পড়ে আসো ট্রায়েল রুমে গিয়ে।ফাহিম পড়ে আসল,মায়াবীর শাড়ির সাথে মেচিং করেই এই টি সার্ট  কিনে দিয়েছে মায়াবী।ফাহিম ঐ টি সার্ট পড়েই বাসায় ফিরল।  

এদিকে এখনো ইন্ডিয়া থেকে কোন রিপোর্ট আসে নাই।অন্যদিকে মায়াবীর আবার থেকে থেকে জ্বর আসা শুরু হয়েছে।কয়েকদিন ভালই ছিল তেমন অসুবিধা হয় নাই।এর মাঝে দুই তিনবার নাক দিয়ে রক্ত পড়েছে কিন্তু মাকে বলে মায়াবী আর টেনশন দিতে চায়নি,তাই বলেনি।আজকাল অন্ধকার ওর খুব ভাল লাগে।তাই ঘরটাকে অন্ধকার করে বসে থাকে।ফেসবুকে কেউ অন্ধকার নিয়ে কিছু লিখলে ও সাথে সাথে ওটা কপি করে শেয়ার দেয়,সেজন্য অনেকের অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হয়।ও অবশ্য সবাইকে রামসাম যদুমধু বুঝিয়ে  উত্তর দেয়।ও নিজেও জানেনা ও কেন এত অন্ধকার ভালোবাসে!তবে ফাহিম যখন ওর সাথে কথা বলে তখন ও আলোর দিশা খুজে পায়।ফাহিমের কণ্ঠটা এত ভরাট যে মায়াবীর অসম্ভব প্রিয়।

তাইতো ফাহিম মাঝে মাঝে বিরক্ত হয় তবুও ও কথার পিঠে কথা বলে ওকে রাত জাগিয়ে রাখে আর মনে মনে ভাবে কবে  ফাহিমকে নিজের করে পাবে!ফাহিম অনেক সময় কথা বলে ভোর করে দেয় কিন্তু মাঝে মাঝে ওর কথার কোন মাথা মন্ডু থাকেনা,যখন যা মনে হয় তাই বলে।যেমন সেদিন ফাহিম মোবাইলে কথা বলতে বলতে বলল-ভাইবার অন কর।

মায়াবী বলল,কেন?এই তো বেশ কথা বলছি।

ফাহিম বলল,ভাইবার অন কর তাহলে এক ঢিলে দুই পাখি মারা হবে।

মায়বী বলল,-মানে? 

ফাহিম বলল,ভিডিওতে তোমাকে দেখতে পাব আর মোবাইলের পয়সাও খরচ হবেনা।

মায়াবী বলল,তোমার তো পয়সা খরচ হচ্ছেনা!আমি কল দিয়েছি।

ফাহিম বলল,তোমার খরচ হওয়া মানে তো আমার খরচ হওয়া।এখন রাখো রেখে নেট ওপেন কর,আমি রাখছি বলেই ফাহিম লাইন কেটে দিল।

মায়াবী আর কি করে নেট ওপেন করে দেখল ফাহিম নেট ওপেন করে বসে আছে।ফাহিম মায়াবীকে ভিডিও কলে দেখেই বলে,তোমার টানাটানা হরিণের মত চোখগুলো আমকে পাগল করে দেয়।তাই তো তোমার চোখে চোখ রেখে আমি কথা বলতে চাই।তুমি এই চোখ দুটোতে শুধু কাজল পড়বে কিন্তু ঐ সব মেকি মেকআপ দিবেনা।আর শোন তোমার জন্য কালকে সারপ্রাইজ গিফট আছে।

মায়াবী বলল,বলেই তো দিলে তাহলে আর সারপ্রাইজ কেমন করে হল।  

ফাহিম বলল,এত বেশি বুঝ না,আমি কি বলেছি তোমাকে কি গিফট দিব?গিফট দিব তা বলেছি।যাও তোমার রাতের ঘুম হারাম করে দিলাম।সারা রাত বসে বসে ভাব।

মায়াবী আগ্রহ নিয়ে বলল,কখন আসবে?

ফাহিম বুঝল মায়াবী ওর কথায় এখন থেকেই ভাবতে শুরু করেছে তাই রহস্য করে বলল,তাতো বলব না!যখন ইচ্ছে হবে তখন আসব।   

মায়াবী বলল,তুমি যদি এসে দেখ আমি নেই?

ফাহিম বলল,তুমি নেই মানে?তুমি কোথায় যাবে?কথায় আছেনা মোল্লার দৌড়  মসজিদ পর্যন্ত!তেমনি তোমার দৌড় বেনুদের বাড়ি পর্যন্তও।শোন এখন আমি ঘুমাব কারণ আমার অনেক ঘুম আসছে।তুমিও না ভেবে ঘুমাও লক্ষ্মীটি।হেভ আ নাইস স্লিপ!এই বলে ও নেট অফ করে দিল।

মায়াবী ভাবতে লাগল,ফাহিম ওকে কি গিফট দিবে নিশ্চয়ই একটা কিস দিয়ে বলবে এইতো তোমার গিফট!নয় তো কোথায়ও ঘুরতে নিয়ে যাবে।ওর সাথে ঘুরতে যাওয়া। মানে সারা রাস্তায় যা পাবে তাই খাবে আর মায়াবীকে ঐ সমস্থ রাস্তার খাবার যেমন ঝালমুড়ি,চটপটি,ফুস্কা,আর সাথে আম,জাম পেয়ারা ভর্তাসহ তেতুলের আচার সব খাবে।কৎবেল কিনবে একটা সাথে একটা কাথি নিয়ে দুজনে এক কাঠিতে খাবে আর না খেতে চাইলে বলবে আমার মুখেরটা ঘৃণা করছ,মায়াবী আর কি করবে অগ্যতা খেতে হয় ওসব ছাই ভস্ম।      

ইতিমধ্যে ইন্ডিয়া থেকে ওরা এসেছে প্রায় পনের দিন হয়ে গেল কিন্তু এখন পর্যন্ত মায়াবীর ব্লাড টেস্টের রিপোর্ট এসে পৌঁছল না তাই মায়াবির বাবা মা খুব চিন্তিত হয়ে পড়ল।একদিন ফাহিমের বাবা,ডাক্তার ফয়েজ কল করে জানাল আজকে দুপুরে  ওনার অফিসে রিপোর্ট আসছে।আজকে বিকেলেই সে আসবে মায়াবীর বাবা মার সাথে কথা বলতে।বিকেল বেলা যখন ডাক্তার রফিক এল মায়াবীদের বাসায় তখন মায়াবী ঘুমাচ্ছিল।ড্রইংরুমে বসে সবাই মায়াবীর রিপোর্ট দেখছিল,ডাক্তার ফয়েজ যখন বলল,মায়াবীর ব্লাড ক্যান্সার ধরা পড়েছে।যেহেতু রিপোর্ট ভালো আসেনি তাই ফোনে মায়াবীর বাবাকে জানায়নি নিজে এসেছে।

মায়াবীর বাবা বলল,বন্ধু,এটা কেমন করে হল?ব্লাড ক্যান্সারটা কিভাবে হয়?আমরা তো অনেক টেস্ট করিয়েছি।

ডাক্তার ফয়েজ বললেন,ব্লাড ক্যানসার হঠাৎ করেই ধরা পড়ে।আগের থেকে জানা যায় না।ক্যান্সারের একটি ধরণ হোল ব্লাড ক্যান্সার।রক্ত যে কোষ দিয়ে তৈরি সেই কোষে এই কর্কট রোগ বাসা বাঁধে।এটি প্রধাণত হাড়ের অস্থিমজ্জা থেকেউৎপন্ন হয়।এই রোগ হলে রক্তে শ্বেত কণিকা তৈরিতে অসুবিধা হয়,ফলে রক্তের ভারসাম্য নষ্ট হয়।একে লিউকোমিয়া বলে।এই রোগ হলে দীর্ঘদিন ধরে জ্বর,শারীরিক দুর্বলতা,মুখ-নাক দিয়ে রক্ত পড়া,গাঁটে ব্যথা ইত্যাদি হতে পারে।এর মধ্যে মায়াবীর এই সিমটমগুলো মোটামুটি আছে।ব্লাড ক্যানসারে আক্রান্ত হওয়ার পরে নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত তা ধরা পড়েনা,অনেক সময় শেষ পর্যায়ে এসে ধরা পড়ে।ফলে চিকিৎসা করা দুরুহ ব্যাপার হয়ে পড়ে।মায়াবীর সময় তাই হয়েছে,মাত্র তিনমাস সময় আছে ওর জন্য।আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে,এমন কিছু হতে পারে তানাহলে এত টেস্ট করাচ্ছ কিন্তু কিছু ধরা পড়ছেনা কেন!তাই তো তোমাকে বলেছিলাম বন্ধু-রাকিব,ওকে ইন্ডিয়া নিয়ে টেস্ট করাও।এমন সময় গেলে!যাক চিন্তা করনা বলবোনা,কারণ তোমাদের মনের অবস্থা বুঝতে পারছি।মায়াবির মাকে বলল,ভাবি,এভাবে কাঁদবেন না ওর সামনে।যে কটা দিন আছে ওকে ওর মত করে থাকতে দিন।

মায়াবীর মা,ডুকড়ে কেদে উঠল বলল,ভাই,আমি কি করে ওর সামনে যাব!কিভাবে বলব,এই পৃথিবীতে ওর জন্য মাত্র তিন মাস সময় বরাদ্দ আছে।

এরি মধ্যে মায়াবীর ঘুম ভেঙ্গে গেল,ও ঘুম থেকে উঠে দরজা খুলে শুনতে পেল ড্রয়িংরুমে সবার কথার ফিসফিস শব্দ শোনা যাচ্ছে তাই ও,কে এসেছে দেখার জন্য উঠে সেদিকে গেল।গিয়েই ওর মায়ের কথাগুলো শুনতে পেল।ওর মনে হল সমস্ত পৃথিবী ঘুরছে!ও তাড়াতাড়ি করে নিজের ঘরে চলে গেল কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে কারণ ওর মা বাবা বুঝতে পারলে,ওনারা নিজেরাই শেষ হয়ে যাবে!তার চেয়ে এই ভাল যতক্ষণ কেউ কিছু না বলছে ততক্ষণ ও জেনেও মিথ্যে অভিনয় করে যাবে সবার সাথে যেন ও কিছুই জানেনা।

এদিকে মায়াবীর বাবা ডাঃ ফয়েজকে বললেন,বন্ধু,আর কি কিছু করা যায়না?

ডাঃ ফয়েজ বললেন,আর কি করবে?ওর ওসুখটা তো শেষ পর্যায়ে ধরা পড়েছে!ওর রক্তের গ্রুপও রেয়ার,ওনেগেটিভ।যা পাওয়া না।তোমার তো ওপজিটিভ।প্রথম পর্যায় রোগটা ধরা পড়লে যেভাবেই হক,রক্ত জোগাড় করে এবং রক্ত চেঞ্জ করে অনেকদিন বাঁচিয়ে রাখা যায়।

মায়াবীর বাবা বলল,আমরা এখন কি করব বন্ধু?ওকে কি করে জানাব?

ডাঃফয়েজ বললেন,তোমরা এখন আর ওকে কিছু জানিওনা।কেননা এখনো তিনমাস বাকি আছে,ওকে ওর মত থাকতে দাও।সবার ওর সাথে ভাল ব্যাবহার করতে হবে শারীরিকভাবে ভেঙ্গে পরলেও মানসিকভাবে যেন না ভেঙ্গে পড়ে কারণ অনেক সময় মানসিকভাবে স্ট্রং হলে,বেশীদিন বেঁচে থাকতে পারে মানুষ।আমি বুঝতে পারছি তোমাদের কষ্ট!বন্ধু কিন্তু সমবেদনা জানানো ছাড়া আমার আর কিছুই করার নেই!আল্লাহ তোমাদের সহায় হউন,আমিন।

মায়াবির বাবা বললেন,আমি কি ওকে ব্যাংকক নিয়ে গিয়ে আরেকবার সবকিছু  টেস্ট করিয়ে দেখবো?

ডাঃফয়েজ বললেন,যেতে পারো তবে আমার মনে হচ্ছে একই রেজাল্ট হবে।দেখ,কি করবে অন্তত ওকে নিয়ে একটু ঘোরাঘুরি তো হল!

মায়াবীর বাবা বললেন,তুমিও চলো না আমাদের সাথে!তাহলে আমি অনেক সাহস পাই।তবে তোমার কাজের ক্ষতি হলে থাক।

ডাঃফয়েজ বললেন,না কাজের তেমন ক্ষতি হবেনা কারণ জুনিয়ার ডাক্তার আর আমার অ্যাসিস্ট্যান্ট আছে।ঠিক আছে তুমি ভিসা কর।ফাহিমকেও নিয়ে নিব তাহলে মায়াবীর বেড়াতে ভালো লাগবে,তানাহলে তো আমাদের বুড়বুড়িদের সাথে বোর হয়ে যাবে।

মায়াবীর বাবা বলল,ভাল প্রস্তাব।ঠিক আছে আমি কালকে লোক পাঠিয়ে তোমাদের পাসপোর্টগুলো জমা দিয়ে দিব।

ডাঃ ফয়েজ বললেন,আমি তাহলে আসি।

মায়াবির মা এতক্ষণ শুধু কাঁদছিলে আর দুই বন্ধুর কথা শুঞ্ছিলেন এবার বললেন, ফয়েজ ভাই আজকে ডিনারটা না হয় করে যান আমাদের সাথে।

ডাঃফয়েজ বললেন,না ভাবি আজকে না,আরেকদিন এসে খেয়ে যাব।আজকে ওরা খাবার নিয়ে বসে থাকবে।ভাল থাকবেন আর আল্লাহ্‌র উপর ভরসা রাখবেন।সব ঠিক হয়ে যাবে।

মায়াবীর বাবা বললেন,তাইই যেন হয় বন্ধু।

ডাঃ ফয়েজ বললেন,ইনশাআল্লাহ্‌!তাহলে আসি,আল্লাহ হাফেজ।

মায়াবীর মা বাবাও বললেন,আল্লাহ হাফেজ।

অন্যদিকে মায়াবী সবকিছু শোনার পর কাউকে কিছু বুঝতে না দিয়ে নিজের ঘরে যেয়ে দরজা লক করে দিল।তারপর ওয়াস রুমে গিয়ে অঝরে কাঁদল।ওর তো কিছু ভাল লাগছেনা!কোথায় যাবে,কি করবে কিছুই ভাবতে পারছেনা।বার বার ভাবছে যেই বাবা মা ভাইয়া ওর সামান্য একটু জ্বর হলে অস্থির হয়ে পরে,তাঁরা কিভাবে এত বড় খবরটা হজম করবে!একটি খবর যে,মায়াবীর জীবনের সব স্বপ্ন ধুলিৎসাত করে দিল।এই তিন মাস ওর কিভাবে কাটবে?ওর তো সেকেন্ড,মিনিট আর ঘন্টা গুনতে গুনতেই সময় যাবে,দিন মাস কখন গুনবে!ভাবতে পারছেনা আর কিছু।এরই মধ্যে বুয়া এসে ডেকে গেল কিন্তু মায়াবী দরজা খুলল না।কত দিন আছে ও এই পৃথিবীতে!ওপারে যেতে তিনমাসই লাগবে তাতো নয়,নিশ্চয়ই আগে পিছে হবে!এমন সময় ভাইয়ার গলার আওয়াজ পাওয়া গেল,মায়াবীর  নাম ধরে ডাকছে।মায়াবী তখনও দরজা খুলল না।ওর যাওয়ার সময় হয়ে গেছে পৃথিবী ছেড়ে তাই হয়তো অন্ধকার ওর  এত ভাল লাগে।এই মুহূর্তে ফাহিমের কথা খুব মনে হচ্ছে।ফাহিম কি করবে ওর এই খবরটা পেয়ে!ফাহিমের সাথে ও কিভাবে তাকিয়ে কথা বলবে?যে চোখ দুটো ফাহিমের এত প্রিয় সেই চোখ দুটি তো বুজে যাবে আজীবনের জন্য।তখন ফাহিম কি করবে?ও ভাবতেই পারছে না,নানান ধরনের প্রশ্ন ওর সামনে ঘুরপাক খাচ্ছে।ফাহিম যে ওর নিঃশ্বাসে নিশ্বাসে।আবার এরকম সন্দেহও ওর মনে দানা বাঁধতে শুরু করেছে,মনে হচ্ছে ফাহিম কি এই খবর শুনে ওর পাশে থাকবে, না চলে যাবে!সেদিন বেনু বলছিল,প্রেমিককে কখনই নিজের অসুস্থতার কথা বলতে হয় না তাহলে বিরুপভাব নিয়ে ওরা আরেকদিকে টার্ন নেয়।তাই এক অজানা ভয় ওকে গ্রাস করে ফেলছে।মায়াবীর আয়ু মাত্র তিন মাস।এর মাঝে অনেক কিছু করতে হবে।মায়াবী ঠিক করলো ওর চোখ দুটি দান করে দিয়ে যাবে, যেন হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ ও মারা যাওয়ার পর ওর চোখ দুটি নিয়ে নেয়।অন্তত ফাহিমের জন্য মায়াবীর চোখ দুটো পৃথিবীতে বেঁচে থাকুক অন্য কারো মাধ্যমে।তাহলেই মায়াবী কোন না কোনভাবে ফাহিমকে দেখতে পাবে।মায়াবী  মনে মনে আরও ভাবছে বাবা মা এবং ভাইয়াকে বুঝতে দেয়া যাবেনা যে,ক্যানসারের কথা ও জানে!আল্লাহ্‌র কাছে সে জন্য প্রার্থনা করল যেন ও সুনিপুনভাবে তাদের সাথে, না জানার অভিনয় করে যেতে পারে।যখন এই কথা ভাবছে ঠিক তখুনি মা বাবা এক সাথে এসে মায়াবীকে ডাকছে।সচরাচর বাবা ডাকতে আসেনা কিন্তু আজকের বিষয়টা অন্যরকম তাই এসেছে,মায়াবী বুঝলেও তাদের বোঝানো যাবেনা,মায়াবী সব জানে!তাই মায়াবী হাই দিতে দিতে দরজা খুলল,এমন ভাব দেখাল যেন এই মাত্র ঘুম থেকে উঠছে।দরজা খুলে বলল,কি ব্যাপার তোমরা দুজন একসাথে!  

মায়াবীর মা আর বাবা একে অপরের দিকে তাকিয়ে অপ্রস্তুত হয়ে গেল।তারপর মা বলল বুয়া,তোর ভাইয়া ডেকে গেল তুই উঠছিস না দেখে তোর বাবাও এল।তাছাড়া তুই সেই সন্ধ্যায় ঘুমিয়েছিস আর ডিনারের সময় হয়ে গেল এখনও ঘুমাচ্ছিস!এত ঘুমাচ্ছিস তো রাতে কি করবি?

মায়াবী হেসে বলল,আজকে সারারাত গল্প করব সবাই মিলে,তোমরা আজকে রাতে ঘুমাতে পারবেনা।

মা বলল,ঠিক আছে এখন চল!এমন সময় ভাইয়ার গলার আওয়াজ শোনা গেল।ভাইয়া বলল,মা শেষ হল তোমাদের ক্লাইম্যাক্স।

মায়াবী বলল,ভাইয়া দেখছি মামার সাথে থাকতে থাকতে ফিল্মি ডায়লগ দিতে শুরু করছে,চল মা।

বাবা হেসে বলল,চল,চল!

ডাইনিং টেবিলে এসে মায়াবী দেখল টেবিলে বেশিরভাগ খাবারই ওর পছন্দের।বুঝল,ওর ক্যানসার তাই ওকে সব খাওয়াতে চাচ্ছে মা।মায়াবী খুশি হয়ে বলল,ওয়াও!মা কি ব্যাপার,আজকে ম্যাক্সিমাম আমার পছন্দের খাবার।আজকে তো আমার জন্মদিন না।

যদি ধরা পড়ে যায় তাই মা বলল,কে বলেছে সব তোর পছন্দের খাবার!মেঘও তো এগুলো পছন্দ করে।

বাবা বলল,মায়া।আবার জ্বর এসেছিল তোমার?অসময়ে এত বড় ঘুম দিলে যে!

বাবা সবসময় ভাইয়াকে আর মায়াবিকে তুমি তুমি করেই বলে।মায়াবী বলল,না বাবা।এত দিন পরীক্ষা আর পড়ালেখা নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম তাই,ক্লান্ত হয়ে গিয়েছিলাম।এজন্য এত বড় ঘুম হল।

ভাইয়া বলল,তুই মনে হয় রেজাল্ট নিয়ে অনেক চিন্তায় ছিলি?

মায়াবী বলল,তা নয় তো কি,আমি তো আর তোমার মত অত ভাল স্টুডেন্ট না যে,ফার্স্ট হব!

ভাইয়া বলল,তুই বা খারাপ কিসে?প্লেসেই তো থাকিস।

মা বলল,তোদের বকবক থামবে!সব খাবার ঠাণ্ডা হয়ে গেল।

বাবা বলল,তোমার অসুবিধা কোথায়?দুই ভাইবোন খুনসুটি করছে,করুক না ভালই তো লাগছে।

মা বলল,তোমার যত্ত সব কথা!বুয়া এগুলো গুছিয়ে খেয়ে শুতে যাবেনা!কত রাত হয়ে যাচ্ছে।বুয়া তো আবার সেই ভোরে উঠবে।

বাবা বলল,ঠিক আছে,ঠিক আছে।তারপর ভাইয়াকে বাবা বলল,মেঘ,তোমার পরীক্ষা কবে শুরু হবে?

ভাইয়া বলল,সামনের মাসে দুই তারিখে।কেন বাবা?

বাবা বলল,ভাল।আমি তাহলে তোমার মা আর মায়াবীকে নিয়ে একটু ব্যাংকক থেকে ঘুরে আসি।ফয়েজও যাবে।   

মায়াবী না জানার ভান করে বলল,ব্যাংকক কেন যাবে,বাবা?

বাবা বলল,একটু শপিং করব,মিলার জন্য আর তোমাকে চেকাপ করতে যাব।কারন তোমার জ্বরটা কোথায় থেকে আসছে তা টেস্ট করতে। 

মায়াবী না জানার ভান করে আবারও বলল,ইন্ডিয়ার রিপোর্টটা আগে আসুক তারপর যাওয়া যাবে।

বাবা,মা আর ভাইয়া একজন আরেকজনের দিকে তাকাতে লাগল।মা বলল,তোর কলেজ বন্ধ আছে তাই ঘুরতে যাব।  

মায়াবী বলল,ওহ!খুব মজা হবে মা,মিলা আপুর বিয়ের কসমেস্টিক্স কিনে আনা যাবে।

মা,দীর্ঘ একটা নিশ্বাস ফেলল।আর মায়াবী মনে মনে চিন্তা করল,ভাইয়ার বিয়ে কি খাওয়া হবে!মাত্র তিন মাস বাকি।

মায়াবী জানে,ওর অসুখটা একদম শেষ পর্যায় ধরা পড়েছে।অসুখটা ব্লাড ক্যান্সার বা লিউকমিয়া,তাই প্রায়ই ওর নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়ে কিন্তু ভয়ে মাকে বা বাবাকে এমনকি ভাইয়াকেও বলেনি।প্রথম প্রথম মায়াবী ভেবেছে এই জ্বরটা হয়তো টাইফয়েড বা ম্যালেরিয়া হবে,কিন্তু সেদিন ফয়েজ আঙ্কেলের কাছ থেকে জানতে পেরেছে এটা  ক্যানসারের একটি সিমটম।ফয়েজ আঙ্কেল যখন বললেন,যে অসুখটা শেষ পর্যায়ে ধরা পড়েছে এবং মাত্র তিন মাস বাঁচবে!কথাটি শুনে মায়াবী স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল।ভাগ্যিস এক মাস বলেনি!মায়াবী বুঝে পেলনা,এক মাস বা তিনমাস হলে ওর এমনকি সুবিধা হবে?ওর তো চলে যেতেই হবে।তিন মাসেই বা একজন মানুষ কতটা কাজ করে যেতে পারবে।অনেক সময় যা সারাজীবনেও হয় না।

ফাহিম হয়তো ওর বাবার কাছ থেকে এতক্ষণে সব জেনে গেছে।আজকে নিশ্চয়ই ওকে সিম্পেথি দেখিয়ে অনেক কিছু বলবে।কিন্তু ফাহিম এখন কল করছেনা কেন!নিশ্চয়ই খবরটা শুনে নিজেকে প্রস্তুত করছে,কেমন করে মায়াবীর কাছে আসবে।

অন্যদিকে ফাহিম যখন কথাটি জানতে পেরেছে তখন থেকেই মায়াবীর জন্য ওর ভীষণ খারাপ লাগছে।কেমন করে মায়াবীর সামনে যাবে তাই ভেবে ভেবে অস্থির হয়ে পড়ছে।বাবা বলেছে ওর সাথে স্বাভাবিক আচরণ করতে কিন্তু এত কিছু জানার পর কিভাবে সম্ভব!মায়াবীকে জানানো হয়নি ও হয়তো স্বাভাবিক থাকবে কিন্তু ফাহিম,ফাহিম কি করে ওর চোখের দিকে তাকিয়ে কথা বলবে?ওর চোখ দুটি ফাহিমের খুব প্রিয়,যে চোখের দিকে তাকিয়ে ও কথা বলার জন্য অস্থির থাকতো সেই চোখের দিকে কেমন করে তাকাবে!ফাহিম আর ভাবতে পারছেনা।মায়াবী নিশ্চয়ই ওর কলের অপেক্ষা করছে কিন্তু ও কল করে প্রথমে কি বলবে?ভেবে কুল কিনারা পাচ্ছেনা।শেষ পর্যন্ত নিজেকে সংযত করে কল করল।কল করে বলল,আমার লক্ষ্মী সোনা পাখিটা কি করছে?

মায়াবী বলল,আজকে এত তাড়াতাড়ি!প্রতিদিন তো কল করতে করতে বারোটা বেজে যায়।

ফাহিম কপট রাগের ভঙ্গীতে,ফাহিম সচরাচর যা মায়াবীর সাথে করে এবং মায়াবি যেন বুঝতে না পারে ফাহিম কিছু লুকাচ্ছে তাই বলল,আজকে তাড়াতাড়ি কাজ শেষ, তাই কল করলাম,তোমার কোন অসুবিধা আছে?তাহলে রেখে দেই। 

মায়াবী বলল,না,আমার কি অসুবিধা হবে!

ফাহিম বলল,তাহলে বল কি অবস্থা তোমার?

মায়াবী বলল,অবস্থা কিছু না,তোমার অবস্থা বল?

ফাহিম বলল,আমার অবস্থা তোমারি মত ।

মায়াবী বলল,বালাই ষাট!আমার মত তোমার অবস্থা হবে কেন?

ফাহিম বলল,তোমার মত অবস্থা বলতে কি বুঝাচ্ছো?

মায়াবী ওর নিজের অসুখের কথা আড়াল করে বলল,এই যে,সারাক্ষণ জ্বর আসে।এটা কি ভাল?

ফাহিম মায়াবীকে সহজ করার জন্য মজা করে বলল,কি আর করা!তুমি একটা নাদুসনুদুস ভাল্লুকের মত তাই জ্বরটা তোমার কাছে এসে মজা পায় বা তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছে।তাই আঁশটেপিষ্টে বেঁধে ফেলেছে।

মায়াবী বলল,তুমি পারও!বানিয়ে বানিয়ে কথা বলতে।

ফাহিম বলল,হাঁসে পাড়ে,মোরগ পাড়ে আর আমি পারবোনা,তা কি হয়! এই বলে হাসতে লাগলো।

মায়াবী বলল,তুমি না একটা।

ফাহিম বলল,আমি একটা কি?

মায়াবী বলল,ঘোড়ার ডিম ।

ফাহিম আবার মজা করে বলল,তাই নাকি?দেখ,আবার ভুল করে ডিম ভেবে আমাকে ভেজে খেয়ে ফেল না!

মায়াবী আর কিছু বলতে গেল না কারণ ফাহিম এখন কি দিয়ে কি বলবে ওর মেজাজ খারাপ হয়ে যাবে।তাই চুপ করে রইল।বড় একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে ফাহিমকে বলল,আমরা এ সপ্তাহে ব্যাংকক যাচ্ছি।

ফাহিম বলল,বাবা মা আর আমি,আমরাও যাচ্ছি।

মায়াবী বলল,মানে কি!মিলা আপুর না পরীক্ষা সামনে!

ফাহিম বলল,ওর জন্যই তো যাচ্ছি।ওর বিয়ের শপিং করতে।সামনের মাসেই তো বিয়ে।তাই ওকে খালার কাছে রেখে তারপর যাবে।খালা কালকেই চলে আসবে আমাদের বাসায়।তোমরা আর আমরা একসাথে সবাই যাচ্ছি।

মায়াবি বলল, তাহলে তো অনেক মজা হবে।

ফাহিম বলল,হুম!তোমাকে অনেক কাছে পাবো।

মায়াবী বলল,তোমার ভাব দেখে মনে হচ্ছে,আমরা হানিমুন করতে যাচ্ছি।একই হোটেলের একই রুমে থাকব!

ফাহিম হাসতে হাসতে বলল,তা কেন?তবে এমন হলে ভালোই হত,সুযোগের সদব্যবহার করা যেত!

মায়াবী বলল,কি অসভ্যরে বাবা!নিজেরটা খুব ভালোই বুঝ?

ফাহিম বলল,তোমার শরীর এখন কেমন?কারণ এতদুর জার্নি করবে!

মায়াবি বলল,আমার জন্যেই তো বিশেষ করে ব্যাংকক যাচ্ছে।আমাকে ওখানে চেকাপ করাবে।

ফাহিম বলে ভালোই তো হবে!এরকম সুযোগ কজন পায়?

মায়াবী জেনেও বলল,ইন্ডিয়ার রিপোর্টটা দেখে তারপর গেলেই তো ভাল হত।কি যেন এতা আতঙ্ক মনের মদ্ধে ঘুরপাক কাচ্ছে।

ফাহিম বলল,ওনারা যা করছে বুঝেই করছে,তোমার ওতো আতঙ্ক হওয়ার কিছুই নেই।আমি তো সব সময় তোমার পাশেই আছি।শোন ওসব আজাইরা ভাবনা বাদ দাও,আমার আর তোমার মাঝে ওখানে কেউ থাকবেনা।না আমার বোন না তোমার ভাই।ওদের জ্বালায় তো শান্তি মত প্রেমও করতে পারিনা!কাঁঠালের আঠার মত দুজন আমাদের পিছে লেগে থাকে।নিজেদের তো পারমিশন পেয়ে গেছে এখন আমাদেরটা বাগড়া দিতে আসে।

মায়াবী বলল,তুমি আমাকে কত ভালোবাসো?আমাদের যদি মিল না হয় তখন!আর আমি যদি মরে যাই।

ফাহিম বলল,এসব কথা বোল না তো।অন্য কথা বলি।

তারপর ওরা অনেক রাত পর্যন্ত নানান বিষয় নিয়ে কথা বলে রাত পার করে দিল।এক সময় যার যার মত বিদায় নিয়ে ঘুমাতে গেল।

এরই মধ্যে ভিসা টিকেট হয়ে গেল।মায়াবী আর ফাহিমদের পরিবার সবাই একসাথে ব্যাংকক গেল।ডাক্তার ফয়েজ আগের থেকেই ব্যাংকক হাসপাতালে এ্যাপোয়েন্টমেন্ট করে রেখেছিল।সেই অনুযায়ী ওরা রওনা হল।হাসপাতালে যাওয়ার আগে ওদের হাতে যথেষ্ট সময় ছিল,সে কারণে ওরা বিয়ের শপিং করে ফেলল।কারণ মায়াবীর যেহেতু শারীরিক কনডিশন ভালো না তাই ওর ইচ্ছাটা পূরণ করার জন্যেই এই বিয়ের আয়োজন।কারণ ভাইয়ের বিয়ে নিয়ে মায়াবীর অনেক আশা।তাই দুই পরিবার মিলে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।মেঘ আর মিলার বিয়েটা দিয়ে দিবে।

ব্যাংককে ফাহিম আর মায়াবীর সময়টা ভালই কেটেছে।দুজনে একসাথে ঘুরে বেড়ালো এবং এক ফাঁকে গিয়ে মায়াবী হাসপাতালে নানান  ধরনের টেস্ট করালো।রিপোর্ট  দিতে দুইদিন দেরি হবে তাই ওরা আরও দুদিন বেশি ব্যাংককে থাকল কারণ ওদের সবার বারতি ভিসাও ছিল।তাই সমস্যা হলনা।সবাই মিলে ঘোরাঘুরি আর শপিং করতে করতে দুইদিন পার হয়ে গেল।মায়াবির বাবা আর ফাহিমের বাবা দুজনে মিলে রিপোর্ট আনতে হাসপাতালে গেল।এদিকে ফাহিম আর মায়াবী ওদের বন্ধুদের জন্য গিফট কিনতে কাছের একটি শপিংমলে গেল।এর মধ্যে মায়াবীর বাবা আর ফাহিমের বাবা রিপোর্ট নিয়ে আসলো।এবারো খারাপ রেজাল্ট এসেছে।কোন সম্ভাবনাই নেই!মায়াবীর বাবাও হোটেল রুমে এসে কেঁদে দিল।ডাক্তার ফয়েজ আর ফাহিমের মা ওদের শান্তনা দেয়ার ভাষা খুঁজে পেলনা।শুধু বলল,তোমাদের মনের অবস্থা বুঝতে পারছি কিন্তু মায়াবীর দিকে তাকিয়ে ভেঙ্গে পড়লে চলবেনা।যে কদিন আছে,সেই কদিন আনন্দে কাটাতে দাও।মুখ ধুয়ে ফেলো ও এসে দেখলে মনে কস্ট পাবে।এত ছোট একটা মানুষ  কি করে এতবড় খবর সহ্য করবে!মেঘদের বিয়ে হয়ে যাবার পর জানালেই হবে।সবাই মিলে তাই ঠিক করল।এখন শুধু রামছাম বুঝিয়ে দিলেই হবে।

ব্যাংকক থেকে আসার পর ভালই ছিল কিন্তু হঠাৎ করে একদিন রাতে ওর নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়তে শুরু করল।মায়াবী ঘাবড়ে গেল।তখনি মার গলার আওয়াজ পাওয়া গেল,মা মায়াবী মায়াবী করে ডাকছে।মায়াবী তখন হদিস না পেয়ে ক্ষীণ স্বরে বলল, মা,আমি আমার ওয়াস রুমে।মা মায়াবীর ওয়াস রুমে ঢুকে দেখল,বেসিনে রক্ত!মা এক চিৎকার দিল,হায় আল্লাহ্‌!এই কি হলো?বুয়া দৌড়ে এল মায়াবীর মায়ের চিৎকার শুনে।মায়াবীর মা,মায়াবীর হাতমুখ ধুতে সাহায্য করল তারপর ওকে ওর বিছানায় নিয়ে এসে নিজের কোলের অপর ওর মাথাটা রাখল।তারপর বলল,কিরে মায়া কখন থেকে এই রকম হচ্ছে।আমাকে ডাকিস নাই কেন?   

মায়াবী বলল,মা আমি কিভাবে ডাকব!    

মা বলল,তাইতো!তুই কিভাবে ডাকবি?আমার মাথা খারাপ হয়ে গেছে।তারপর মা বুয়াকে বল্ল,বুয়া আমাকে আমার মোবাইল দিয়ে যাও তারপর ওয়াস রুম পরিস্কার করে মায়াবীর জন্য এক গ্লাস দুধ নিয়ে আসো।

মায়াবী জেনেছে,কারো লিউকমিয়া হলে নাক মুখ দিয়ে রক্ত পড়ে তাই মায়াবী মাকে বুঝতে না দিয়ে,মাকে শান্ত করার জন্য বলল, মা,আমার মনে হয় এটা সাইনাস থেকে হয়েছে কারণ আমার ভীষণ ঠাণ্ডা লেগেছে,দেখছোনা কাশছি।

মা বলল,তা হোক,তারপরেও ডাক্তার দেখাতে হবে!তোর বাবাকে বলছি ছুটির সময় যেন,ফয়েজ ভাইকে নিয়ে আসে।তিনি ওষুধ দিলে তোর ভাল লাগবে।মায়াবীর মা মায়াবীর বাবাকে কল দিয়ে সমস্ত ঘটনা বলল এবং ডাক্তার ফয়েজকে নিয়ে বাসায় আসতে বলল।মায়াবির বাবা বলল তাকে নিয়ে আসবেন।মায়াবীকে স্যুপ খাওয়াতে বললেন।মায়াবীর মা,স্যুপ আনতে গেল।এরি মধ্যে মায়াবির ঘুম এসে গেল হঠাৎ  করে কপালে হাতের আলতো ছোঁয়া পেয়ে উঠে বসল।দেখল,ভাইয়া মাথায় হাত বুলাচ্ছে।

ভাইয়া বলল,কিরে তুই উঠে বসলি কেন?আমি তর মাথাটা টিপে দেই।মার কাছে সব শুনলাম।মা আসছে তোর স্যুপ নিয়ে।

এমন সময় মা ঘরে ঢুকে বলল,মায়া এখন স্যুপ খেয়ে রেস্ট নে।রাতে আর তোকে ভাত দিবনা কারণ জ্বরটা আসতে পারে।রুটি,সব্জি আর মুরগির মাংস রান্না আছে তা খেয়ে ওষুধ খাবি।

ভাইয়া বলল,ঠিকমত খাওয়াদাওয়া করলে এবং টাইম মত ওষুধ নিলে ভালো হয়ে যাবি,ইনশাআল্লাহ!

মায়াবী জানে ও আর ভাল হবেনা তবুও সবাইকে সান্ত্বনা দিয়ে বলল,তোমরা চিন্তা করোনা।আল্লাহ্‌ ভরসা!

মা আর ভাইয়া ওর খাওয়া হয়ে গেলে চলে গেল।ও একা একা বসে ফাহিমের কথা ভাবতে লাগলো।এমন সময় ফাহিম কল করল।মায়াবী অনেকবার পরীক্ষা করে দেখেছে ও যখনি ফাহিমের কথা ভাবে ঠিক তখনি ফাহিম কল করে।ফাহিম বলে এটা টেলিপ্যাথি।

ফাহিম বলল,কি ব্যাপার!আমার জান পাখিটা কেমন আছে?শুনলাম আবার ভল্লুকের জ্বরটা এসেছে!

মায়াবী বলল,তা জেনে তোমার কি হবে!ব্যাংকক থেকে আসার পর তো আপনার টিকিটাও দেখা যাচ্ছেনা।

ফাহিম বলল,আমি তো মহা ব্যস্ত!

মায়াবী বলল,কেন,ইলেকশনে দাড়িয়েছ নাকি?চেয়ারম্যান হবে?

ফাহিম বলল,ইলেকশন ছাড়া কি আর কাজ নেই?সামনে পরীক্ষা নোটগুলো গুছাচ্ছি।যেগুলো নেই তা কালেক্ট করতে হচ্ছে,একেক জন নিয়ে আমার নোটগুলো আর ফেরত দেয়নি!সেগুলো খুঁজে বের করছি।আমার থাকলে তো তোমারই লাভ!কষ্ট করে যোগার করতে হচ্ছেনা।

মায়াবী একটি দীর্ঘনিঃশ্বাস ফেলে বলল,আমার কি আর পরীক্ষা দেয়া হবে!

ফাহিম বুঝল মায়াবী এই কথা কেন বলছে,যদিও ফাহিম জানে  মায়াবী এখনো ওর অসুখের কথা কিছুই জানেনা তাই বলল,কেন হবেনা,আলবৎ হবে।আমি পাশে থাকলে তোমার আর কোন ভয় নেই।

মায়াবী বলল,তোমাকে আর পাচ্ছি কোথায়?

ফাহিম বলল,কেন পাবেনা?আমি তো তোমার সাথেই আছি।

যদিও ফাহিম এখন ইচ্ছে করে দূরে থাকে,কারণ ওর ভাল লাগেনা মায়াবীর চোখে চোখ রেখে কথা বলতে,যেই চোখ ওর এত প্রিয়,সেই চোখই একদিন বন্ধ হয়ে যাবে!  তাছাড়া আরেকটি কারণ আছে তা হল,মায়াবী নিষেধ করা সত্ত্বেও ফাহিম ফেসবুকে জেরিনের রিকুয়েস্ট একসেপ্ট করছে কারণ জেরিন নাছোড়বান্দা সারাক্ষণ ওর পোস্টে গিয়ে কমেন্ট দিচ্ছে।তাই নিজেকে অন্যদের কাছ থেকে সেভ করার জন্য ওকে ফ্রেইন্ড লিস্টে রেখেছে।ও জেরিনকে বন্ধু লিস্টে নিয়েছে ঠিকই তবে হাইড করে রেখেছে।ওকে ব্লক মারতে চেয়েছিল কিন্তু ও যে ধরনের মেয়ে হয়তো সবার সামনে অপমান করবে।জেরিন জানে ও অনেক স্মার্ট এবং দেখতেও অনেক সুন্দর।ছেলেরা ওর কথায় হাবুডুবু খাবেই।ফাহিম অবশ্য অন্য ছেলেদের মত না।ও মায়াবীকে অনেক ভালোবাসে।মায়াবী হয় তো জেরিনের মত সুন্দরনা তবে ওর চোখ দুটির মধ্যে কি যেন আছে যা ফাহিমকে পাগল করে দেয়।ও ভাবছে,জেরিনকে ফ্রেইন্ড লিস্টে রেখে,ও মায়াবীর সাথে বিশ্বাস ভঙ্গ করেছে।মায়াবি তো এক সময় থাকবেনা তাই ও যেন কোন দুঃখ না পায় সেই জন্যই লুকোচুরি।ফাহিম জানেনা মায়াবীর প্রতি এই ভালবাসা কতদিন ধরে রাখতে পারবে!ও চলে যাবার পর একদিন না একদিন হয়তো ও নতুন করে সংসার করবে।এটাই জীবন,এটাই বাস্তব।তবে মায়াবী থাকা অবস্থায় ও কাউকেই মন থেকে গ্রহন করতে পারবেনা।তারপরেও মায়াবী ওকে অনেক ভালোবাসে তাই ওর কাছ  থেকে দূরে থাকে মাঝে মাঝে।সেজন্য মায়াবী হয়তো ভুল বুঝে বা সন্দেহ করে।ফাহিম চায়,মায়াবী ওকে ঘৃণা করুক তাহলে ওর বাঁচার ইচ্ছাটা কম হবে এবং কষ্টও কম হবে।কারণ ও বলেছে ফাহিমের জন্যই ও বাঁচতে চায়।তাই ইচ্ছে করেই ওকে কষ্ট দেয়।   

মায়াবী বলল,আজকে সারাদিন কোথায় ছিলে?কি করেছো?

ফাহিম বলল,এত কিছু জেনে কি করবে?ছিলাম কোথাও আর কিছু একটা করেছি।সব কিছু কি তোমার কাছে হিসেব দিতে হবে?ছিলাম বন্ধুবান্ধবদের সাথেই।

মায়াবী মন খারাপ করে বলল,না তা নয়!তুমি এরকম করে কথা বলছ কেন?আমি এমনেই জানতে চেয়েছি।তুমি তো জানো সব সময়ই আমি জানতে চাই।

ফাহিম বলল,না জানতে চাইবেনা,তাতে মনে হয় আমি কোন অন্যায় করছি আর তুমি তাই জেরা করছ।এটা ঠিক না।আমি কিছুই করছিনা আর আমি তোমারই আছি।

মায়াবী বলল,ঠিক আছে,আর হবেনা।শোন,আজকে আমি তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পরবো,অনেক ক্লান্ত হয়ে গিয়েছি।তুমি সম্ভব হলে কালকে আমাদের বাসায় এসো তখন কথা বলবো।

ফাহিম বলল,ঠিক আছে।ঘুমাও জান।লাভ ইউ।বাই।এই বলে কল কেটে দিল,মায়াবীর উত্তরের অপেক্ষা করল না!

মায়াবি কষ্ট পেল কিন্তু আর কল ব্যাক করলনা।ও বুঝতে পারছে ফাহিম আজকাল কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে যদিও জান,ময়না,পাখি ইত্যাদি সব ডাক ডাকছে কিন্তু কোথাও যেন একটা ‘কিন্তু’আছে।মায়াবী বেশি কিছু বললেই রাগ হয়ে যায় তাই মায়াবীও আজকাল কিছু জানতে চায়না।জেনে কি হবে!ও তো বেশি দিন নেই।তারপরেও অভ্যাস!তাই মাঝে মাঝে জানতে চায়।আর মায়াবী জানে,ফাহিম যদি ওর বর্তমানে কিছু করে কারো সাথে,তা মায়াবী সহ্য করতে পারবে না।তাইতো ও এখনো ফাহিমের ফেসবুকের প্রোফাইলে গিয়ে চেক করে,ফাহিম নতুন কোন বান্ধবীকে এড করেছে কিনা।ফাহিম আজকাল ওর সাথে ভাইবারেও কম বসে,তাই চিন্তা হয়।মায়াবী নিজেকেই নিজে প্রশ্ন করে,মায়াবির অসুখের জন্য কি তাহলে ফাহিম দূরে সরে যাচ্ছে?হয়তো লুকিয়ে থাকছে।

মায়াবীর ঘরটা খুব ছিমছাম।বেডের পাশে একটি বড় জানালা আর ওর পড়ার টেবিলের পাশে একটি বড় জানালা।সাথে ছোট্ট একটি বেলকনি।ঘরে একটি বুকশেলফ, ড্রেসিংটেবিল,দেয়ালের সাথে এটাচ আলমারি ও এটাচ বাথরুম।ওর পুতুলের শখ,তাই বিভিন্ন পুতুল আছে ঘরটায়।ওর রুমটা ওর খুব প্রিয়।দিনের বেশীর ভাগ সময় ও রুমেই কাটায় বিশেষ করে অসুখ হওয়ার পর।কেন যেন একাকীত্ব ওকে গ্রাস করে ফেলছে।বান্ধবিদের সাথেও বেশি কথা বলেনা।কারণ এক এক জনের অনেক স্বপ্ন,সেগুলো শুনতে ভাল লাগেনা।কেননা ওর নিজেরও অনেক স্বপ্ন ছিল তাতো পুরন হবার নয়!তবে কেন আরেকজনের কথা শুনবে।ওর বেশীরভাগ স্বপ্ন ফাহিমকে ঘিরে ছিল।কারণ ওর প্রতিটি নিঃশ্বাসে ও ফাহিমের জন্য ভালোবাসা লালন করে।ফাহিমের প্রতি ওর অঘাত বিশ্বাস কিন্তু ইদানীং মনে হচ্ছে সেই বিশ্বাসে কোথায় যেন চির ধরছে,মায়াবী অসুস্থ হওয়ার পর।মাঝে মাঝেই ভাবে সত্যি কি ফাহিম বদলিয়ে যাচ্ছে, না ও ফাহিমকে ভুল বুচ্ছে!এই অসুখটা ওর শরীরের সাথে সাথে মনটাকেও কুড়ে কুড়ে খাচ্ছে।ইদানিং আয়না দেখতে ভাল লাগেনা!যে চোখ দুটির জন্য ফাহিম পাগল ছিল তা কোঠরে ঢুকে যাচ্ছে!কালি পড়ে যাচ্ছে চোখের চারিপাশে।চুল পড়ে যাচ্ছে এত পাওয়ারফুল ওষুধ খেয়ে এবং দিনকে দিন শরীরটাও ভেঙ্গে যাচ্ছে।তাইতো ফাহিমকে নিয়ে চিন্তা!ফাহিম নাদুসনুদুস ভাল্লুকের মত ফিগার পছন্দ করে,সেই জন্য মায়াবীকে ভাল্লুক বলে কারণ মায়াবী গোলগাল দেখতে।

দিন যত যাচ্ছে মায়াবীর শরীরও খারাপের দিকে যাচ্ছে।যেহেতু এর মধ্যে মায়াবীর ভাইয়া আর মিলা আপুর পরীক্ষাও শেষ,তাই দুই ফ্যামিলি থেকে ওদের বিয়ের আয়োজন করতে শুরু করল।মায়াবীর অনেক ইচ্ছা ভাইয়ার বিয়েতে অনেক মজা করবে।ওর ইচ্ছা পুরন করার জন্যই এই আয়োজন।এত কষ্টের মাঝেও দুই পরিবারের এই তোড়জোড়!হলুদের পর্ব দুই বাড়ি একই সাথে করল।ফাহিম গানের জন্য ওর পরিচিত ব্যান্ডশিল্পী নিয়ে আসলো যারা হিন্দি, বাংলা ও ইংলিশ বিভিন্ন শিল্পীদের গান গাইল।এই সময়ের সবচেয়ে ভাইরাল হওয়া গান আরমান আলিফের“অপরাধী”গানটি  মায়াবী শুনতে চাইল।কারণ এই গানটি মায়াবীর কেন জানি খুব ভাল লাগে।মেয়েটার জায়গায় মায়াবী ফাহিমকে চিন্তা করে হয়তো ফাহিম চলে যাবে কোন এক সময়!গানটি শুনলেই মায়াবীর চোখ দিয়ে পানি বের হয়ে আসে।ও মেনে নিতে পারেনা,ফাহিমকে ছেড়ে ওর চলে যেতে হবে।আজকেও গানটি শুনে চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ল।অন্যদিকে মায়াবীর সব বান্ধবী আসছে হলুদে ওদের সাথে জেরিনও আসছে।যদিও মায়াবী জেরিনকে  দাওয়াত দিতে চায়নি কিন্তু ফেসবুকের গ্রুপিংএ ও আছে,যেহেতু সবাইকে বলেছে তাই ওকে না বললে খারাপ দেখায়।কেননা সবাই তখন ভাববে,ও জেরিন কে হিংসা করে দাওয়াত দেয় নাই।ফাহিমও ওকে ছোট মনের ভাববে,তাই দাওয়াত দিয়েছে।কারণ ফাহিমের কাছে ও নিচু হতে চায়না।এদিকে মায়াবী জেরিনকে সহ্য করতে পারছেনা কারণ ফাহিম যেদিকে যাচ্ছে সেদিকেই ও যাচ্ছে।আর বার বার নিজেই গানের রিকোয়েস্ট দিচ্ছে।ফাহিমও ওর সাথে কথা বলছে,তবে মায়াবীকে আড়াল করে কিন্তু মায়াবীর চোখ এড়ায়নি ব্যাপারটা!মায়াবীর যেহেতু শরীর খারাপ,মায়াবী চেয়ারেই বেশি বসে ছিল।ওরা সবাই মিলে নাচগান করল।অবশ্য ফাহিম এসে ওকে নিয়ে একসাথে নাচলো।মায়াবী বসে পড়লে জেরিন বলল,আমি ফাহিমের সাথে নাচলে কি তুমি মাইন্ড করবে?

মায়াবি বলল,আমি কেন মাইন্ড করবো তবে ফাহিম যদি নাচে!

জেরিন হেসে এগিয়ে গেল ফাহিমের সাথে নাচতে,মায়াবী দেখল ফাহিম যেন কি বল্ল জেরিনকে এবং সোহেলকে ধরিয়ে দিল।সোহেল ফাহিমের বন্ধু।মায়াবি অনেক শান্তি পেল।যাক ফাহিম এখন ওর আছে।হলুদের রাতটা ভালোই কাটল মায়াবীর।অনেক রাতে রুটিন মাফিক ফাহিম ওকে কল করল এবং আগের মতই কিস দিয়ে বিদায় নিল কারন অনেক সকালে উঠতে হবে পরের দিন ভাইয়ার বিয়ে।

(চলবে……)।

SHARE THIS ARTICLE