আইরিশ বাংলা পোস্ট ডেস্কঃ গতকাল রবিবার ১৯শে সেপ্টেম্বর’২১ বাংলাদেশ স্পোর্টস এসোসিয়েশন আয়ারল্যান্ডের (বি এস এ আই) উদ্যোগে কাউন্টি কিলকেনীতে বিডি সি ফুড গোল্ড কাপ টুর্নামেন্ট অত্যন্ত গোলযোগ এবং দ্বন্দ্ব পূর্ন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়েছে। টুর্নামেন্টের সার্বিক আয়োজন দর্শদের হতাশ করেছে।
আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন থেকে তিনটি দল, লিমেরিক থেকে একটি দল এবং কিলকেনী থেকে একটি দল এই টুর্নামেন্টে অংশগ্রহণ করে। বিভিন্ন কাউন্টী থেকে বিপুল সংখ্যাক দর্শক এই খেলাগুলো উপভোগ করতে কিলকেনির ওয়াটারশেড স্পোর্টস গ্রাউন্ডে সমবেত হন।
দেরীতে খেলা শুরু করা হলেও প্রথম দুটি ম্যাচ সৌহার্দপূর্ন পরিবেশে অনুষ্ঠিত হয়। দুপুর একটার দিকে বেলুন উড়িয়ে এবং কবুতর মুক্ত করার মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে টুর্নামেন্টের উদ্বোধন করেন কিলকেনির স্থানীয় টি ডি জন মেকগিনিস এবং কাউন্টি লিমেরিকের মেয়র এন্ড্রু মেকগিনিস। অনুষ্ঠানে বি এস এ আই নেতৃবৃন্দ ছাড়াও উপস্থিত ছিলেন লিমেরিকের ডেপুটি মেয়র জনাব আজাদ তালুকদার এবং টুর্নামেন্টের স্পন্সর বিডি সি ফুডের সত্ত্বাধিকারী জনাব সাইদ বাবু।
চমৎকার আবহাওয়ায় খেলা শুরু হলে দর্শকদের মধ্যে এক ধরনের উৎসাহ উদ্দীপনা পরিলক্ষিত হয়। ডাবলিনের একটি দলের সাথে লিমেরিক দলের খেলার এক পর্য্যায়ে একটি অখেলোয়াড়সুলভ আচরণকে কেন্দ্র করে দুই দলের মধ্যে দ্বন্দ্ব পরিলক্ষিত হয়। এই দ্বন্দ্ব ধাক্কাধাক্কির পর্য্যায়ে উপনীত হয়।
দলের ম্যানেজার, খেলোয়াড় এবং কিছুসংখ্যক সমর্থক মাঠে প্রবেশ করে ধাক্কাধাক্কিতে জড়িত হয়ে পড়েন। উপস্থিত অনেকেই এই ঘটনায় হতাশ হন এবং বিভিন্ন নেতৃবৃন্দের সমঝোতার উদ্যোগ তাৎক্ষনিক সমাধানে ব্যার্থ হয়। দীর্ঘ আলোচনার মাধ্যমে সমঝোতা অর্জন করে ২ ঘণ্টারও বেশী সময় পর খেলাটি পুনরায় শুরু করে সমাপ্ত করা সম্ভব হয়।
একই সময়ে অন্য মাঠে অনুষ্ঠিত হচ্ছিলো ডাবলিনের দ্বিতীয় দল এবং কিলকেনীর মধ্যে খেলা। সেখানেও এক খেলোয়াড় অন্য খেলোয়াড়কে ধাক্কা দিলে দুই দলে ধাক্কাধাক্কির ঘটনা ঘটে এবং মাঠের বাহির থেকে দর্শকরাও মারামারিতে অংশগ্রহণ করেন। এখানে একজন খেলোয়াড় আহত হন। সমঝোতার পর এই খেলাটিও পুনরায় শুরু করে সমাপ্ত করা হয়।
এরপর বেশ উৎসাহব্যাঞ্জক পরিবেশে খেলা অনুষ্ঠিত হচ্ছিলো। ডাবিলনের একটি দল এবং কিলকেনী দল ফাইনাল খেলায় অংশগ্রহণ করেন। ফাইনাল খেলার প্রথমার্ধ মোটামুটিভাবে সম্পন্ন হলেও শেষের দিকে কিলকেনী দল দুই গোলে অগ্রগামী থাকা অবস্থায় পুনরায় অখেলোয়াড় সুলভ আচরণ পরিলক্ষিত হয় এবং দ্বান্দিক ঘটনার সূত্রপাত হয়। এই সময় লাইনস ম্যান কর্তৃক দেয়া একটি অফসাইডকে কেন্দ্র করে ডাবলিন দল প্রতিবাদ জানায় এবং খেলা অসমাপ্ত রেখেই খেলার মাঠ পরিত্যাগ করে।
রেফারী পরিশেষে কিলকেনী দলকে বিজয়ী ঘোষণা করেন। আসন্ন সন্ধ্যার আধো আলো আধো অন্ধকারের মধ্যে পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠিত হয়। ডাবলিন দলের পক্ষ থেকে ম্যানেজার কিংবা ক্যাপ্টেন পুরষ্কার গ্রহণ করতে মাঠে উপস্থিত থাকেন নি।
পুরষ্কার বিতরণীতে বি এস এই আই এর নেতৃবৃন্দ ছাড়াও বিডি সি ফুডের সত্ত্বাধিকারী এবং লিমেরিকের ডেপুটি মেয়র উপস্থিত ছিলেন। কিলকেনী দলের পক্ষ থেকে দলের ক্যাপ্টেন এবং ম্যানেজার চ্যাম্পিয়ন ট্রফি গ্রহণ করেন। খেলায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় কিলকেনী দলকে নগদ ৫০০ ইউরো পুরস্কারের অর্থ প্রদান করা হয়। রানার আপ দলের জন্য ছিল নগদ ৩০০ ইউরো। এছাড়াও সর্বাধিক গোলদাতা, সবচেয়ে ভালো খেলোয়াড় এবং বেস্ট কেপ্টেইনকেও ট্রফি প্রদান করা হয়।
পুরো টুর্নামেন্ট জুড়ে এই দ্বন্দ্ব, দর্শকদের মনে দিয়েছে বেদনা এবং হতাশা। আমাদের প্রতিনিধি খেলায় উপস্থিত দুটি শিশুকে খেলা সম্পর্কে তাদের মন্তব্য জানতে চাইলে তারা উভয়েই আগামীতে ফুটবল খেলার সাথে সংযুক্ত হবেন না বলে মতামত প্রকাশ করেন।
এর কারণ জানতে চাইলে তারা দুজনেই জানায় যে তারা আজকের খেলায় দ্বান্দিক পরিবেশ দেখে ভীত হয়েছে। এছাড়া খেলার মাঠে উপস্থিত বেশ কয়েজন সম্মানিত দর্শক আমাদের প্রতিনিধির সাথে আলাপ করে ভবিষ্যতে এ ধরনের খেলা আয়োজনে সাবধানতা অবলবনের কথা ব্যাক্ত করেন। তারা অনেকেই আজকের এই পরিবেশের জন্য তাদের ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
কয়েকজন দর্শক জানান যে, যারা এই বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি সৃষ্টিতে অংশগ্রহণ করেছেন তাদেরকে ভবিষ্যতে কোন অনুষ্ঠানাদিতে অংশগ্রহণের সুযোগ যেন প্রদান করা না হয়। কেউ অবশ্য নিদারুণ হতাশায় ভবিষ্যতে আর কোন খেলায় অংশগ্রহণ করা থেকে বিরত থাকার কথাও ব্যাক্ত করেন।
উল্লেখযোগ্য যে, প্রবাসের মাটিতে সামাজিক, সাংস্কৃতিক এবং স্পোর্টস অনুষ্ঠানাদি আয়োজনের মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে পারস্পরিক সম্প্রীতি অর্জন। দর্শকরা বিমল আনন্দ উপভোগ করার উদ্দেশ্য নিয়েই খেলা উপভোগ করতে যান। অনেক ক্ষেত্রেই এই লক্ষ্য অর্জনে সফলতা অর্জন সম্ভব হয় নাই।
এই বিফলতার কারণ কি এবং কিভাবে এই সমস্যা সমাধান করা যায় এই সম্পর্কে চিন্তা ভাবনা করে সমাধানের উদ্যোগ নেয়ার এখনি সময়। এই সকল সমস্যা সমাধান করেই ভবিষ্যতে অনুষ্ঠানাদি আয়োজনের উদ্যোগ নেয়া উচিৎ হবে বলে অনেকেই মনে করেছেন।