দ্বিতীয়বারের মতো ইউরোপ সেরার মুকুট চেলসির

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ চ্যাম্পিয়নস লিগের ফাইনালে কাই হার্ভাটজের করা একমাত্র গোলে ম্যানচেস্টার সিটির বিপক্ষে ১-০ ব্যবধানে জিতে ইউরোপ সেরার মুকুট জয় করেছে চেলসি। এটি অল ব্লুজদের ইতিহাসের দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা। 

২০১১/১২ মৌসুমে বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়ে প্রথমবার ইউরোপসেরার মুকুট জিতেছিল চেলসি। অন্যদিকে প্রথমবারের মতো ফাইনাল উঠেও শিরোপা ছুঁয়ে দেখা হলো না ম্যানচেস্টার সিটির।

শনিবার রাতে পর্তুগালের পোর্তোতে উয়েফা চ্যাম্পিয়নস লিগ ২০২০/২১ মৌসুমের ফাইনালে মাঠে নামে দুই ইংলিশ ক্লাব ম্যানচেস্টার সিটি এবং চেলসি। ম্যাচের শুরু থেকেই পেপ গার্দিওলার দল বল দখলে রাখে। তবে প্রতি-আক্রমণে ঠিকই সিটির রক্ষণকে পরীক্ষা নিচ্ছিল চেলসি। ম্যাচের ৮ মিনিটের মাথায় প্রথম সুযোগ আসে সিটির কাছে। এডারসনের বাড়ানো বল পেয়ে চেলসির ডি বক্সে ঢুকে পড়েন স্টার্লিং। সেখানে অবশ্য রিচ জেমস স্টার্লিংকে শট নিতে জায়গা না দেওয়ায় দুর্বল শট নিতে বাধ্য হয় এই স্ট্রাইকার। তার দুর্বল শট সহজেই ফিরিয়ে দেন চেলসি গোলরক্ষক মেন্ডি।

দুই মিনিট পরে দুর্দান্ত এক সুযোগ পান চেলসির জার্মান স্ট্রাইকার টিমো ভার্নার। মেসন মাউন্ট মাঠের বাঁ-প্রান্ত থেকে দুর্দান্ত এক বল বাড়ান ভার্নারের উদ্দেশ্যে তবে সহজ এই সুযোগও হাতছাড়া করনেন ভার্নার। এর মিনিট চারেক পরে আবারও আক্রমণে যায় চেলসি। এবার বেন চিলওয়েলের ক্রস সিটির রক্ষণ থেকে ফিরে আসলে বল পান হার্ভাটজ। বল পেয়েই সতীর্থ ভার্নারের উদ্দেশ্যে আবারও বল বাড়ান, এবার বল পেয়ে শটও নিয়েছিলেন এই স্ট্রাইকার তবে তা সহজেই রুখে দেন সিটি গোলরক্ষক এডারসন।

টানটান উত্তেজনার ম্যাচে সিটি প্রথম বড় সুযোগ তৈরি করে ম্যাচের ২৭তম মিনিটে। স্টার্লিংয়ের উদ্দেশ্যে দুর্দান্ত এক বল বাড়ান গুন্দোয়ান, সেখানে স্টার্লিং পাস করেন পেছনে থাকা ডি ব্রুইনের উদ্দেশ্যে। ডি ব্রুইনের কাছ থেকে পাস পেয়ে গোলের দিকেই এগোচ্ছিলেন ফোডেন। তবে সেখানে স্লাইডিং ট্যাকেলে বল কেড়ে নেন রুডিগার আর তা সহজে লুফে নেন চেলসি গোলরক্ষক।

খেলার সময় আধা ঘণ্টা পেরুতে না পেরুতেই চোট পান থিয়াগো সিলভা। এরপর তাকে তুলে আন্দ্রেয়াস ক্রিশ্চিয়ানসেককে নামান থমাস তুখেল। প্রথমার্ধের খেলা ঠিক যখনই গোলশূন্যের দিকে এগোচ্ছিল ঠিক তখনই গোল করে চেলসিকে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে নেন কাই হার্ভাটজ।

৪২তম মিনিটে চেলসি গোলরক্ষক এডুয়ার্ড মেন্ডির কাছ থেকে বাঁ-প্রান্তে বল পান মেসন মাউন্ট। সেখানে বেশ আয়েসি ভঙ্গিতেই বল নিয়ে জায়গা খুঁজে সিটির গোলের দিকে দৌড় দেওয়া কাই হার্ভাটজকে সিটির রক্ষণের খেলোয়াড়দের মধ্য দিয়েই থ্রু পাস দেন। বল পেয়ে হার্ভাটজ যখন ডি বক্সের দিকে ঢুকছেন তখন সামনে কেবল গোলরক্ষক এডারসন। তাকে মাটিতে শুইয়ে বল বাঁ দিক দিয়ে কাটিয়ে পাঠিয়ে দিলেন জালে। তাতেই সিটির বিপক্ষে ১-০ গোলের ব্যবধানে এগিয়ে অল ব্লুজরা।

বিরতি থেকে ফিরে কিছুটা গোছালো ফুটবল খেলতে শুরু করেছিল সিটি। আর ঠিক তখনই সিটির দলে বড় ধাক্কা। দলের সেরা খেলোয়াড় কেভিন ডি ব্ররুইনের সঙ্গে ধাক্কা খান অ্যান্তোনিও রুডিগার। এরপর ম্যাচের ৫৯তম মিনিটে ডি ব্রুইনকে তুলে নিতে বাধ্য হন পেপ গার্দিওলা। খেলার সময় ঘণ্টার কাটা স্পর্শ করতেই ডি ব্রুইনের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন গ্যাব্রিয়েল জেসুস।

দ্বিতীয়ার্ধের খেলার নিয়ন্ত্রণ নিজেদের দখলে নেয় সিটি। দুর্দান্ত আক্রমণে চেলসির রক্ষণের পরীক্ষা নেওয়ার চেষ্টা করলেও ব্লুজদের জমাট বাধা রক্ষণকে কিছুতেই ভেদ করতে পারছিল না সিটিজেনরা। ৬৮তম মিনিটে রুডিগারের সামনে থেকে বল নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ডান দিকে থাকা রিয়াদ মাহারেজের দিকে বাড়িয়ে দেন ফিল ফোডেন। মাহারেজ বল পেয়ে ছয় গজের ভেতরে গ্যাব্রিয়েল জেসুসকে পাস দেন, দূরের পোস্টে দাঁড়ানো জেসুস বল পাওয়ার জন্য অপেক্ষা করছিলেন আর ঠিক তখনই দৃশ্যপটে হাজির আজপিলিকুয়েটা। দুর্দান্ত স্লাইডিং ট্যাকেলে বল বিপদমুক্ত করেন অল ব্লুজ অধিনায়ক।

৭৩তম মিনিটে প্রতি-আক্রমণে কাই হার্ভাটজ মধ্যমাঠে বল পেয়ে থ্রু বল দেন পুলিসিচকে উদ্দেশ্য করে। বল পেয়ে সিটি গোলরক্ষক এডারসনের ওপর দিয়ে বল চিপ করলেও তা গোলপোস্টের বাইরে দিয়ে বেরিয়ে যায়। এরপর ম্যাচের বাকিটা সময় রক্ষণকে দৃঢ় করে রাখে রুডিগার-ক্রিশ্চিয়ানসেক-আজিপিলিকুয়েটা মিলে। এর মধ্যে অধিকাংশ সময় বল দখলে রেখেও সেভাবে আক্রমণ করতে পারেনি সিটি। তবে ম্যাচের একদম শেষ মুহূর্তে রুবেন দিয়াজের ক্রস সিটির কেউ ধরতে না পারলে তা বিপদমুক্ত করেন চিলওয়েল। তবে বল পেয়ে যান রিয়াদ মাহারেজ। সেখান থেকে ফোডেনের উদ্দেশ্যে বল বাড়ালেও চেলসির জমাট রক্ষণকে ভেদ করতে না পারলে বিপদমুক্ত হয়।

শেষ পর্যন্ত আর কোনো গোল না হওয়ায় কাই হার্ভাটজের করা একমাত্র গোলে ম্যানচেস্টার সিটিকে ১-০ ব্যবধানে হারিয়ে দ্বিতীয় বারের মতো ইউরোপসেরার মুকুট জয় করে চেলসি। ২০১১/১২ মৌসুমে বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়ে প্রথমবার চ্যাম্পিয়নস লিগ জেতে চেলসি।

SHARE THIS ARTICLE