নীরব ভোটারদের হাতে তৈমূরের ভাগ্য

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ বিএনপি দল হিসেবে মাঠে নেই, কিন্তু নেতাকর্মীরা সক্রিয় আছেন। জাতীয় পার্টি আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের অংশ। কিন্তু নির্বাচনে তারা ‘নিরপেক্ষ’ অবস্থান নিয়ে আছে। জামায়াত ও হেফাজতে ইসলাম নীরব। আওয়ামী লীগের প্রার্থী এক, কিন্তু দল বিভক্ত।

রাজনীতির এই চিত্র নিয়ে আগামীকাল রবিবার নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। রাজনীতির এই সমীকরণের বাইরে আরেকটি পক্ষ প্রশাসন। ভীতি ও ঝুঁকির আলোচনা সামনে আসছে এই সূত্রে। ফলে নির্বাচনে ভোটের চিত্র কী হবে তার জন্য শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত অপেক্ষায় থাকতে হবে।

গতকাল শুক্রবার দিনভর স্থানীয় রাজনৈতিক নেতাকর্মী, সুধীসমাজ, দলগুলোর কেন্দ্রীয় নেতা, প্রার্থীদের ঘনিষ্ঠজন এবং নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলে এই চিত্র পাওয়া গেছে।    

বিএনপির দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছেন তৈমূর আলম খন্দকার। তার পরও দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের ‘নৈতিক ও মানসিক’ সমর্থন পাচ্ছেন তিনি। স্থানীয় নেতাকর্মীরা আছেন তাঁর প্রচারে। প্রকাশ্যে প্রচারে না থাকলেও জামায়াত এবং হেফাজতে ইসলামের সমর্থনও তাঁর দিকে বলে মনে করছেন তৈমূরের নির্বাচনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা।  

ফলে তৈমূর নির্বাচনে জয়ী হওয়ার মতো জোয়ার তুলতে পরেছেন কি না সে প্রশ্ন থাকছে। গতকাল গণসংযোগের শেষদিনেও তৈমূর সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন। বহিরাগতদের এলাকায় আনার অভিযোগও করেছেন প্রতিদ্বন্দ্বী প্রার্থীর বিরুদ্ধে। আশঙ্কা জানিয়েছেন আগামী দুটি দিন গ্রেপ্তার ও ভয়ভীতিমুক্ত থাকবে কি না, তা নিয়ে। ভোটের আগের রাতের পরিবেশ নিয়েও চলছে নানা আলোচনা।

আওয়ামী লীগ কেন্দ্রীয় নেতাদের সরব উপস্থিতি, নৌকার প্রার্থী সেলিনা হায়াত আইভীর ব্যাপক গণসংযোগের বিপরীতে তৈমূরের ‘আওয়াজ’ তুলনামূলক কম। বিএনপি প্রকাশ্যে না থাকায় জোট শরিকরাও প্রকাশ্যে নেই।

তবে তৈমূরের গণসংযোগে সক্রিয় নেতারা বলছেন, তাঁদের কর্মী-সমর্থকের বাইরে তৈমূরের ভোট ব্যাংক হচ্ছেন হকার, রিকশাওয়ালা ও গার্মেন্টকর্মীরা। এর বাইরে তাঁর মাথার ওপর ওসমান পরিবারের ‘ছায়া’ আছে বলে পুরো শহরে আলোচনা আছে। ফলে এই ভোট ব্যাংক কেন্দ্রে আনতে পারলে ভোটের হিসাব পাল্টেও যেতে পারে।   

২০১১ সালের নির্বাচনে বিএনপির সমর্থন পেয়ে জয়ী হওয়ার পর দলটির স্থানীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে মেয়র আইভীর সখ্য তৈরি হয়। ২০১৬ সালের নির্বাচনে বিএনপির বড় একটি অংশ দলীয় প্রার্থীর বিষয়ে নিষ্ক্রিয় থেকে সমর্থন দেয় আইভীকে। কিন্তু এবারের প্রেক্ষাপট ভিন্ন। তাই নৌকার প্রার্থী আইভী বিএনপির ওই অংশের ভোট পাবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে।  

গত দুই ধাপের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের ফলাফলের দিকে ইঙ্গিত করে স্থানীয় বিএনপি ও এর অঙ্গ দলের তিনজন নেতা কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘কারচুপির পরও অর্ধেকের বেশি জায়গায় নৌকা হেরেছে। কোথাও কোথাও জামানত বাজেয়াপ্ত হয়েছে। অর্থাৎ নৌকার বিপরীতে যিনি প্রার্থী হয়েছেন তিনি কোন দলের তা মুখ্য হয়নি। নৌকার প্রার্থীকে হারাতে হবে—এমন মনোভাব ছিল। এখানেও ভোটাররা সুযোগ পেলে তা-ই করবে।’

নারায়ণগঞ্জ মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ও তৈমূর আলমের প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট এ টি এম কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, নির্বাচনের পরিবেশ ঠিক থাকলে, মানুষ ভোট দিতে পারলে, ভোটের ফলাফল তাদের পক্ষে যাবে। তিনি দাবি করেন, ২০ দলীয় জোটের সবাই তাঁদের সঙ্গে আছেন।

সুষ্ঠু ভোট নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে এ টি এম কামাল বলেন, ‘এত দিন তো পরিবেশ ভালো ছিল। এখন নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার, বাড়িতে তল্লাশি ও এজেন্টদের হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তার পরও আমরা মাঠ ছাড়ব না। শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত নির্বাচনে থাকব।’

বিএনপির একজন নীতিনির্ধারক বলেন, ‘রাজনৈতিক কারণে আমরা তৈমূরকে প্রার্থী করিনি। কিন্তু তাঁর প্রতি মানসিক সমর্থন তো আছে। বিএনপি তো নৌকার প্রার্থীকে সমর্থন দেবে না।’

তৈমূরের পক্ষে নির্বাচনী মাঠে আছেন এমন নেতারা বলছেন, পর পর দুটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। ২০১৬ সালের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিএনপি নামেমাত্র প্রার্থী দিয়েছিল। ওই সময় রাজনৈতিক পরিস্থিতি একেবারে প্রতিকূল ছিল। ফলে এবার ভোটাররা পরিস্থিতি বুঝে কেন্দ্রে যেতে পারে বলে তাদের আশা।  

তবে ভোটের মাঠে ভিন্ন বিশ্লেষণও আছে। অনেকেই বলছেন, নির্বাচনটা যে আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে, সেই বিষয়টিকে ভালোভাবে সামনে আনতে পারেননি তৈমূর। কারো কারো বক্তব্য হচ্ছে, বিএনপি মাঠে থাকলে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা বেপরোয়া থাকত। প্রশাসন ভিন্নভাবে সক্রিয় হতো। 

জামায়াত ও হেফাজত কী বলে?

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক জামায়াতের কেন্দ্রীয় একজন নেতা বলেন, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট তাঁদের ভোটের মাঠ থেকে দূরে রেখেছে। কিন্তু পরিবেশ ঠিক থাকলে তাঁদের ভোটাররা তৈমূরকে ভোট দেবেন। হেফাজতে ইসলাম দাবি করে, তাদের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা নিকট অতীত ভুলে যায়নি।

হেফাজতের কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব আবদুল আউয়াল এবং জমিয়তে উলামা ইসলামীর নারায়ণগঞ্জ জেলা সাধারণ সম্পাদক মাওলানা ফেরদাউসুর রহমান অভিন্ন বক্তব্য দেন। কালের কণ্ঠকে দুই নেতা বলেন, তাঁদের সাংগঠনিক কোনো সিদ্ধান্ত নেই। তাঁরা কাউকে সমর্থন দেননি। কাউকে ভোট দিতে নিষেধও করেননি। তাঁদের নেতাকর্মী ও সমর্থকরা ‘বিচার-বিশ্লেষণ’ করে ভোট দেবেন।

জাতীয় পার্টি সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়ে আগেই বলেছে, ‘১৬ জানুয়ারির নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জাতীয় পার্টি কোনো প্রার্থী দেয়নি।’ দলের এক কেন্দ্রীয় নেতা বলেছেন, নেতাকর্মীদের প্রতি এখনো পর্যন্ত বিশেষ কোনো নির্দেশনা নেই।

ফলে শেষ জানতে হলে ভোট পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে।

SHARE THIS ARTICLE