মাস্টার ও সুকানির অসতর্কতায় পদ্মা সেতুতে ফেরির ধাক্কা: তদন্ত প্রতিবেদন

আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্কঃ মাস্টার ও সুকানির ‘অসতর্কতার কারণেই’ ফেরি শাহজালাল পদ্মা সেতুর পিয়ারে ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে করছে বিআইডব্লিউটিসির চার সদস্যের তদন্ত কমিটি।

দুর্ঘটনার জন্য ফেরির মাস্টার আব্দুর রহমান খান এবং সুকানি সাইফুল ইসলামকে দায়ী করে কমিটি রোববার তাদের তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যানের কাছে।

তদন্ত কমিটির আহ্বায়ক বিআইডব্লিউটিসির পরিচালক (বাণিজ্য) এসে এম আশিকুজ্জামান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে বলেন, “পদ্মা সেতুর পিয়ারে ধাক্কা লেগেছে চালকের অসতর্কতায়। এখানে মাস্টার ও সুকানি দায়ী।”

গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মাদারীপুরের বাংলাবাজারঘাট থেকে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়ায় যাওয়ার পথে ফেরি শাহজালাল পদ্মা সেতুর ১৭ নম্বর পিয়ারে ধাক্কা খায়।

তাতে ফেরির সামনের অংশে বড় ধরনের ছিদ্র হয়ে যায়। ফেরিতে থাকা ৩৩টি যানবাহন একটির সঙ্গে আরেকটি ধাক্কা খায়। ফেরির প্রায় দুই হাজার যাত্রীর অনেকেই আছড়ে পড়েন, তাদের অন্তত ২০ জন আহত হন।

তবে এই দুর্ঘটনায় সেতুর কোনো ক্ষতি হয়নি বলে সেদিন জানিয়েছিলেন পদ্মা সেতুর প্রকল্প পরিচালক শফিকুল ইসলাম।

তদন্ত কমিটির প্রধান আশিকুজ্জামান বলেন, “স্রোতের অনুকূলে কম গতিতে চালাতে গিয়ে চালক নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেললে ফেরিটি সেতুর পিয়ারে ধাক্কা দেয়।”

ভবিষ্যতে এই ধরনের দুর্ঘটনা এড়াতে তদন্ত কমিটি তিনটি সুপারিশ করেছে বলে জানান তদন্ত কমিটির প্রধান আশিকুজ্জামান।

প্রথমটি হচ্ছে পদ্মা সেতুকে এড়িয়ে চলতে শিমুলিয়া ঘাট পুরনো মাওয়া ঘাটে অথবা বাংলাবাজার ঘাট শরীয়তপুরের পুরোনো মাঝিকান্দি ঘাটে স্থানান্তর; দ্বিতীয়টি হচ্ছে শিমুলিয়া-বাংলাবাজার ঘাটে চলাচলকারী দুর্বল ফেরি সরিয়ে স্রোতের সঙ্গে পাল্লা দিতে সক্ষম দ্রুতগতির ফেরি চালু; তৃতীয়টি হচ্ছে পদ্মা সেতুর পাইল ক্যাপে ফেন্ডার (টায়ারের মতো রবার) স্থাপন করা।

সঠিকভাবে পরিচালনায় ‘ব্যর্থ হওয়ায়’ ওই ফেরির ইনচার্জ ইনল্যান্ড মাস্টার অফিসার আব্দুর রহমানকে সেদিনই সাময়িক বরখাস্ত করেছে বিআইডব্লিউটিসি। শনিবার পুলিশ মাস্টার ও সুকানিকে আটক করে।

ওই ফেরিতে আসা একজন যাত্রী সেদিন বলেছিলেন, পদ্মা নদী সকাল থেকেই উত্তাল ছিল, চ্যানেল থেকে মূল নদীতে প্রবেশ করার পর প্রচণ্ড স্রোতের কবলে পড়ে ফেরি। এর মধ্যে চালক ফেরির নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে ফেলেন। বড় বড় ঢেউ আর প্রচণ্ড বাতাসের মধ্যে ফেরিটি সেতুর পিয়ারে গিয়ে সজোরে ধাক্কা খায়।

পরে চালক ফেরি নিয়ন্ত্রণে আনতে সক্ষম হন এবং আর কোনো বিপদ ছাড়াই শিমুলিয়া ঘাটে ভেড়ান।

ফেরি শাহজালালের মাস্টার আব্দুর রহমান সেদিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, “ইলেকট্রনিক সার্কিট ব্রেকার পড়ে যাওয়ায় স্টিয়ারিং বিকল হয়ে যায়। সেটা দ্রুত ঠিক করতে পারলেও প্রবল স্রোতে ফেরির সমানের অংশ পদ্মা সেতুর খুঁটির সাথে ধাক্কা খায়। আঘাত পানির লেভেলের নিচে হলে ফেরি ডুবে যেত পারত। যাত্রীরা ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেছে।”

তবে তিন দিন আগে পদ্মা সেতুর আরেকটি পিয়ারে ফেরির ধাক্কা লাগার ঘটনা তুলে ধরে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের রোববার বলেছেন, এটি নিছক দুর্ঘটনা নাকি ‘উদ্দেশ্যমূলক ষড়যন্ত্রের অংশ’- তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

SHARE THIS ARTICLE