প্রতারণার ফাঁদে নিঃস্ব ইংল্যান্ড প্রবাসী মিনহাজ

আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্কঃ ২০১৪ সালে গ্রামের এক দূরসম্পর্কের আত্মীয় শহীদুল হকের মাধ্যমে আইনজীবী-রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব পরিচয় দেওয়া নিশাতের সঙ্গে পরিচয় হয় প্রবাসী মিনহাজুর রহমানের। তিনি ইংল্যান্ডপ্রবাসী বাংলাদেশি ও ইতালির নাগরিক।

ওই সময় প্রবাসী মিনহাজের বাংলাদেশে জমিজমা সংক্রান্ত মামলাসহ সম্পত্তির দেখাশোনা ও ভাড়া সংগ্রহের জন্য একজন লোক দরকার ছিল। মামলা নিয়ে আলাপের ফাঁকে নিশাত এ ব্যাপারে তাকে সাহায্য করার আগ্রহ প্রকাশ করলে তাকে সেই দায়িত্ব দেন তিনি। তখনও তিনি জানতেন না নিশাত আসলে তদারকির নামে মিনহাজের সব সম্পত্তি দখলের ফন্দি আঁটছিলেন। আর তাকে সেই কাজে সঙ্গ দেন শহীদুল হক।

অভিযুক্ত নিশাত একসময় কুমিল্লা দক্ষিণ মহিলা আ.লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন। দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের কারণে ২০২১ সালে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তিনি ব্রাহ্মণবাড়িয়ার কসবার মৃত খাজা আহম্মেদ খানের মেয়ে।

২০১৭ সালে মিনহাজ দেশে এসে পাসপোর্টের আবেদন করতে চাইলে নিজের লোক আছে দাবি করে সেই দায়িত্বও লুফে নেন নিশাত। এটিই ছিল নিশাতের প্রতারণার প্রধান কৌশল। নিশাত পাসপোর্টে নিজেকে মিনহাজের স্ত্রী বলে ভুয়া তথ্য দেন। এরই মধ্যে মিনহাজ ইংল্যান্ডে ফিরে যান। পরে নিশাত ঢাকায় ধানমন্ডির ৯নং রোডের ৪নং বাড়ির ফ্ল্যাটের ভাড়া দিতে গড়িমসি শুরু করলে নিশাতকে তার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি নিতে বলেন মিনহাজ। এরপর ওই দায়িত্ব দেন নিজের ভাগ্নে বোরহান উদ্দিনকে।

২০২১ সালে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও বন্ধু জাকির হোসেনের মাধ্যমে মিনহাজ জানতে পারেন নিশাত অজ্ঞাতনামা একজনকে মিনহাজ সাজিয়ে ভুয়া কাবিননামা বানিয়েছেন। এদিকে ধানমন্ডির ফ্ল্যাটের ভাড়াটিয়াদের ভয়ভীতি দেখিয়ে বের করে দিয়ে দখল করে নেন নিশাত। এরপর থেকে ফ্ল্যাটটিতে নিশাতের লোকজনের উৎপাতে অতিষ্ঠ হয়ে পড়েন আশপাশের মানুষ। অভিযোগ রয়েছে, ফ্ল্যাটটিতে অসামাজিক কার্যকলাপ চলে। এ নিয়ে ভবনের সভাপতি ও ম্যানেজার আপত্তি করলে তাদেরও হুমকি দেন নিশাত।

এমন পরিস্থিতিতে এপ্রিলে দেশে আসেন মিনহাজ। এরপর নিজের ফ্ল্যাটে গেলে নিশাত, তার মেয়ে ও মেয়ের জামাই প্রবেশে বাধা দেয়। পরে অস্ত্রশস্ত্রসহ ১০/১২ জন লোক এসে তাকে মারধরের হুমকি দেয়। বলে, ৮০ লাখ টাকা দিলে ফ্ল্যাট ছাড়বে তারা। এরপর মিনহাজ ধানমন্ডি থানায় গিয়ে সহযোগিতা চাইলে পুলিশ সেখানে যায়। কিন্তু কোনও এক প্রভাব খাটিয়ে পুলিশকে ফিরে যেতে বাধ্য করে নিশাত। মামলা দিতে চাইলেও পুলিশ অপারগতা প্রকাশ করে। এরপর ২৮ এপ্রিল নিশাত তার দলবল নিয়ে কুমিল্লা হাউজিংয়ে মিনহাজের বাড়িতে হামলা চালায়। বাড়ির তালা ভেঙে ভেতরে ঢুকে জমির সব দলিল ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে যান তিনি। এসময় মিনহাজের কেয়ারটেকার গোলাম জিলানীকে মারধর করে। পরে উলা জিলানীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা করে। মিনহাজকে নানাভাবে সহযোগিতা করায় তার বন্ধু ওয়ার্ড কাউন্সিলর জাকিরের বিরুদ্ধেও দুটি মিথ্যা মামলা করেন নিশাত।

শুধু তাই নয়, নিশাত নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জে মিনহাজের সাড়ে ৩০ শতাংশ জায়গা নিজ নামে ভুয়া হেবা দলিল করে অন্যত্র বিক্রির চেষ্টা করেছিলেন। বর্তমানে তিনি মিথ্যা মামলা করে মিনহাজের পরিবারের লোকজনকে হয়রানি করছেন। মিনহাজ ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে নারী-শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা করেছেন। এ মিথ্যা মামলায় মিনহাজ ও তার ভাই জামিনে আছেন। দেশে থাকলে মেরে ফেলার হুমকি দিয়ে মিনহাজকে ইংল্যান্ড ফিরে যেতে বলছেন নিশাত ও তার লোকজন। এতে চরম নিরাপত্তাহীনতায় পালিয়ে বেড়াচ্ছেন মিনহাজ।

ভুক্তভোগী মিনহাজুর রহমান বলেন, এই নারী আমাকে স্বামী দাবি করছে। অথচ বিয়ের যে তারিখ বলা হচ্ছে, সেই সময় আমি ইংল্যান্ডে ছিলাম। মিনহাজ পরিচয়ে আরেকজনকে কাজির সামনে হাজির করে ভুয়া কাবিননামা তৈরি করেছেন। সেখানে নিজেকে তালাকপ্রাপ্তা বললেও তিনি তালাকপ্রাপ্তা নন। আবার সেই কাবিননামায় নিশাত ও মিনহাজের জন্মতারিখ দেখানো হয়েছে একই। এতে বোঝা যায়, এটি ভুয়া। তিনি বলেন, আমি একজন রেমিট্যান্স যোদ্ধা। আমার কষ্টার্জিত সম্পত্তি ফেরত চাই এবং সব মিথ্যা অভিযোগ থেকে মুক্তি চাই।

মিনহাজ জানান, দুর্নীতি ও অনৈতিকতার অভিযোগে বর্তমানে কারাগারে থাকা কাজী জাইদুল হোসাইন নিজের ভুল স্বীকার করে এই ভুয়া কাবিননামার কথা স্বীকার করেছেন।

অভিযোগে আরও জানা গেছে, ইব্রাহীম শাকিল ও ইউসুফ মিয়া নামে দুই তরুণকে কানাডা পাঠানোর নাম করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন প্রতারক নিশাত। এ নিয়ে তারা মামলা করলে নিশাতও উলটা তাদের বিরুদ্ধে মামলা করেন। এ ছাড়া মহিলা লীগের নেত্রী পরিচয়ে চাঁদাবাজি, দখল ও অনৈতিক কর্মকাণ্ডের নানা অভিযোগ রয়েছে নিশাতের বিরুদ্ধে।

জানা গেছে, নিশাতের দখলে থাকা মিনহাজের সম্পত্তির পরিমাণ ১২ কোটি টাকার বেশি। ১৯৮৯ সালে ইতালিতে নিজের প্রবাসজীবন শুরু করেন মিনহাজ। ২০০১ সালে ইতালি অভিবাসীদের মধ্যে সর্বোচ্চ পরিমাণ ট্যাক্স প্রদান করে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকেও পুরস্কৃত হন তিনি। ২০০২ সালে অভিবাসীদের মধ্যে সেরা হিসাবে পারসন অব দ্য ইয়ার নির্বাচিত হন তিনি। এরপর ইতালির পাসপোর্টের অধিকারী হয়ে ইংল্যান্ডে নিজের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন। তিনি ইংল্যান্ডের একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ‘রয়েল ক্যাস্ট’ নামে টনটনে বিখ্যাত ভারতীয় খাবারের রেস্টুরেন্ট রয়েছে তার। স্ত্রী-সন্তান ইংল্যান্ডে থাকলেও পরিবারের অন্য সদস্যরা দেশেই থাকেন।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে নিশাত আহম্মেদ খান জানান, তিনি হাসপাতালে আছেন। পরে কথা বলবেন। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগও মিথ্যা বলে দাবি করেন তিনি।

SHARE THIS ARTICLE