প্রতিবাদে উত্তাল রাজধানীসহ সারাদেশ, ফ্রান্স দূতাবাস ঘেরাও সোমবার

আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্কঃ ফ্রান্সে মহানবী হজরত মুহাম্মদ সা.-এর ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শনের প্রতিবাদে বিক্ষোভে উত্তাল হয়ে উঠে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা। শুক্রবার জুমার নামাজের পর জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমসহ রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে ব্যাপক বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।

এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা ফ্রান্সবিরোধী বিভিন্ন স্লোগান দেন। তারা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁর কুশপুতুল দাহ করেন এবং তার বিচার দাবি করেন। তারা ফ্রান্সের সঙ্গে সবধরনের সম্পর্ক ছিন্নের দাবি জানান।

বায়তুল মোকাররমকেন্দ্রিক সবচেয়ে বড় বিক্ষোভটি হয় সমমনা ইসলামী দলগুলোর ব্যানারে। এতে নেতৃত্ব দেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলামের মহাসচিব মাওলানা নূর হোসাইন কাসেমী। মাওলানা মামুনুল হকসহ শীর্ষ ইসলামি রাজনীতিকরা এতে বক্তব্য দেন।

জুমার নামাজ শেষে বায়তুল মোকাররম থেকে একটি বিশাল মিছিল বের হয়। এ সময় পল্টন ও আশপাশের এলাকায় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। মিছিলটি বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে। এ সময় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শত শত সদস্য পল্টন এলাকায় অবস্থান নেন।

বিক্ষোভকারীরা ফ্রান্সের সবধরনের পণ্য বয়কট, দেশটির সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনৈতিকসহ সব ধরনের সম্পর্ক ছিন্ন করার আহ্বান জানান। পাশাপাশি এ বিষয়ে জাতীয় সংসদে নিন্দা প্রস্তাব উপস্থাপনের দাবিও জানান তারা। দাবিগুলো মানা না হলে পরবর্তী সময়ে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আরও বড় জমায়েতের ঘোষণা দেন বিক্ষোভকারীরা।

এদিকে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম ছাড়াও রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভ মিছিলের খবর পাওয়া গেছে। ঢাকার বাইরে চট্টগ্রাম, সিলেটসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে বিক্ষোভের খবর পাওয়া গেছে।

চট্টগ্রামে হেফাজতে ইসলাম বিশাল বিক্ষোভ করেছে। এতে নেতৃত্ব দেন সংগঠনটির মহাসচিব মাওলানা জুনায়েদ বাবুনগরী। হেফাজতে ইসলাম ঢাকা মহানগরী আগামী সোমবার ফ্রান্স দূতাবাস ঘেরাওয়ের ঘোষণা দিয়েছে।

গত ১৬ অক্টোবর ফ্রান্সের একটি সড়কে শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে হত্যা করে এক তরুণ। ওই শিক্ষক ক্লাসে মহানবীর কার্টুন দেখিয়ে মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ব্যাখ্যা দিয়েছিলেন। তখনই শিক্ষকের ওপর হামলাকারী আবদৌলখ নামের ওই তরুণ ঘটনাস্থলেই পুলিশের গুলিতে নিহত হন। এরপরই ইসলাম ধর্ম ও বিশ্বনবী হজরত মুহাম্মদ সা.কে নিয়ে ব্যঙ্গচিত্র প্রদর্শন বন্ধ করা হবে না বলে সাফ জানান প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোঁ। এমনকি বিশ্বনবীকে নিয়ে একটি বিতর্কিত কার্টুন দেখানোর জেরে খুন হওয়া ফরাসি শিক্ষক স্যামুয়েল প্যাটিকে সম্মান জানাতে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়ে ম্যাক্রোঁ ইসলামিক বিচ্ছিন্নতাবাদের বিরুদ্ধে লড়াই চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেন। বলেন, এই বিচ্ছিন্নতাবাদ ফ্রান্সের মুসলমান সম্প্রদায়গুলোতে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করতে চাইছে।

মহানবী (সা.)-এর বিতর্কিত ছবি প্রদর্শনীর কারণে তুরস্ক, ইরানসহ মুসলিম বিশ্বের বিভিন্ন দেশ ফ্রান্সের নিন্দা ও সমালোচনা করছে। বাংলাদেশ রাষ্ট্রীয়ভাবে কোনো প্রতিক্রিয়া না জানালেও এখানকার জনগণ ব্যাপক প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে। ইসলামবিরোধী অবস্থানের প্রতিবাদে বিশ্বজুড়ে মুসলিমরা ফ্রান্সের পণ্যসামগ্রী বর্জনের ডাক দিয়েছে। প্যারিস থেকে রাষ্ট্রদূত প্রত্যাহার করে নিতে পাকিস্তানের পার্লামেন্টে একটি প্রস্তাবনা পাস হয়েছে। বিশ্বের বেশির ভাগ মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশে ফরাসি পণ্য বর্জনের ডাক দেয়া হয়। সৌদিতেও বর্জনের অন্যতম টার্গেটে পরিণত হয়েছে ফরাসি সুপার মার্কেট চেইন ক্যারেফোর। ফরাসি এই সুপারমার্কেট চেইনের পণ্য বর্জনের ডাক সৌদি আরবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ট্রেন্ড হয়েছে। ভোক্তাদের এই মার্কেটের পণ্য কেনা থেকে দূরে থাকার আহ্বান জানাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।

SHARE THIS ARTICLE