যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার সম্পর্কে নূতন টানাপোড়নঃ রাশিয়ার ১০ জনকে কূটনীতিককে বহিষ্কার


আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ রাশিয়ার উপর নূতন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র। নির্বাচনে হস্তক্ষেপ, সাইবার এটাক এবং ইউক্রেনের বিরুদ্ধে আগ্রাসনের জন্য দায়ী করে সন্দেহভাজন গুপ্তচরসহ ১০ জন রাশিয়ার কূটনীতিককে বহিষ্কার করেছে যুক্তরাষ্ট্র। 

মার্কিন রাষ্ট্রপতি জো বাইডেন তার দেশের আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলিকে নতুন রুবেল-বিশিষ্ট রাশিয়ান রাষ্ট্রীয় ঋণ কিনতে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছেন, যার ফলে দেশটির মুদ্রা এবং বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দার সময় বিশ্বের বাজারে অর্থ সংগ্রহের ক্ষমতাকে দুর্বল করতে পারে।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র মারিয়া জাখারোভা এই নিষেধাজ্ঞাকে “দ্বিপাক্ষিক সম্পর্ক নষ্ট করার প্রচেষ্টা” হিসাবে বর্ণনা করে বলেন যে কঠোর আলোচনার জন্য মস্কোয় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে মন্ত্রণালয়ে ডেকে পাঠানো হয়েছে।

ইউক্রেনের পূর্বাঞ্চলীয় সীমান্তের নিকটে এবং দখলকৃত ক্রিমিয়ায় রাশিয়া নূতন করে সৈন্য সমাবেশ করার প্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিকমহলে উদ্বেগ ছড়িয়ে পড়লে জো বাইডেন দুই দিন আগে প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হওয়ার পর প্রথম রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সাথে টেলিফোনে আলোচনা করে একটি শীর্ষ বৈঠকের প্রস্তাব দিয়েছিলেন। 

জো বাইডেন বলেন যে, “মার্কিন নির্বাচনের ক্ষেত্রে রাশিয়ার হস্তক্ষেপ, বিদ্বেষী সাইবার কার্য্যক্রম, বিদেশী সরকারদের কারসাজিতে দুর্নীতির ব্যবহার, সমালোচকদের লক্ষ্যবস্তু করা এবং রাশিয়ার মিত্রদের অস্থিতিশীলকরণ “মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তা, পররাষ্ট্রনীতি এবং অর্থনীতিতে অস্বাভাবিক ও অসাধারণ হুমকির কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।”

বাইডেন প্রশাসন স্পষ্ট করে দিয়েছে যে আমেরিকা রাশিয়ার সাথে এমন সম্পর্ক চায় যা স্থিতিশীল এবং অনুমানযোগ্য। “তবে, প্রকাশ্যে এবং একান্তভাবে আমরা পরিষ্কার যে আমাদের জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় আমরা বদ্ধপরিকর এবং রাশিয়ার সরকার আমাদের জন্য ক্ষতির কারণ হলে তার জন্য তাকেও ক্ষয় ক্ষতি স্বীকার করতে হবে।”

২০২০ সালের মার্কিন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে হস্তক্ষেপের জন্য এবং মস্কোর পক্ষে “গুজব ছড়ানো ও প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টির জন্য জন্য” ৩২টি ব্যাক্তি এবং প্রতিষ্ঠানকে এবং “ক্রিমিয়ায় রাশিয়ার চলমান দখল ও দমন-অভিযানের সাথে জড়িত” থাকার অভিযোগ ৮ জনকে বিধি নিষেধের আওতায় এনেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র রাশিয়ার প্রতিরক্ষা সংস্থাকে সহায়তা প্রদানকারী ছয়টি প্রযুক্তি সংস্থাকেও লক্ষ্যবস্তু করেছে এবং মস্কোর এসভিআর বিদেশী গোয়েন্দা সংস্থাকে গত বছরের তথাকথিত সোলারওয়াইন্ড হামলার পিছনে থাকার জন্য অভিযুক্ত করে বলেছে যে, “বিশ্বব্যাপী ১৬০০০ এরও বেশি কম্পিউটার সিস্টেমে গুপ্তচরবৃত্তি বা ব্যাহত করতে সহায়তা করেছিল”।

রাশিয়ার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র এম জাখারভ এক প্রতিক্রিয়ায় জানান, “আমরা বারবার মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রকে তাদের প্রতিকূল পদক্ষেপের পরিণতি সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছি, যা আমাদের দেশগুলির মধ্যে সংঘাতের সম্ভাবনাকে বিপজ্জনকভাবে বাড়িয়ে তুলেছে। এ জাতীয় আক্রমণাত্মক আচরণ নিঃসন্দেহে প্রত্যাখ্যান করা হবে। ওয়াশিংটনের বুঝতে হবে যে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের অবক্ষয়ের জন্য তাকে দণ্ড দিতে হবে। যা ঘটছে তার দায় পুরোপুরি মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রেরই।” 

ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন যে, “মিঃ পুতিন মিঃ বাইডেনের শীর্ষ সম্মেলনের প্রস্তাব গ্রহণ করবেন কিনা সে বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেননি, তবে তিনি জোর দিয়ে বলেন যে, নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ কোনভাবেই একটি শীর্ষ সম্মেলনের সিদ্ধান্তের জন্য সহায়ক ভূমিকা পালন করবেনা।”

তথ্যসূত্রঃ আল জাজিরা, বিবিসি, স্কাই নিউজ, আল জাজিরা, আইরিশ টাইমস 

SHARE THIS ARTICLE