যেভাবে মেসিদের বরণ করলো আর্জেন্টিনা (ভিডিও)

চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর আর ঘুমানোর ফুরসত মেলেনি লিওনেল মেসির। দোহায় শিরোপা জেতার রাতটা উদযাপনেই কেটে গেছে। এরপর বুয়েনস এইরেসের ফ্লাইট ধরা। প্রায় ১৪ হাজার কিলোমিটার উড়ে মেসিরা যখন দেশে পা রেখেছেন, তখন মধ্যরাত।

হলে কী হবে, বীরদের বরণে বুয়েনস এইরেস পুরো জেগে আছে। ছাদ খোলা বাসে সেই ভালোবাসার উষ্ণতা মেখে ঘরে ফিরে কিছু সময়ের ঘুম খুদে জাদুকরের।

ঘুম থেকে উঠে যে ছবিটা শেয়ার করেছেন, এমন একটা মুহূর্তের স্বপ্নই এত দিন লালন করেছেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে পোস্ট করা ছবিতে দেখা যায়, বিছানায় ঘুম ঘুম চোখের মেসি জড়িয়ে ধরে আছেন সোনালি বিশ্বকাপ। ক্যাপশনে লিখেছেন ‘শুভ সকাল’। গত দুই দিনে যা হয়ে গেছে তা যদি স্বপ্ন ভেবেও বিভ্রম হয়ে থাকে কিছু সময়ের জন্য। তবে সোনালি সে পরশেই বুঝে গেছেন, বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবেই নতুন দিন শুরু হয়ে গেল তাঁর।

সেই ১৯৮৬ সালের পর থেকেই তো অপেক্ষায় আর্জেন্টিনা। সোনালি সেই কাপ ক্রমে যেন প্রহেলিকাই হয়ে উঠছিল আলবিসেলেস্তেদের জন্য। কাতারে অবশেষে সেই অপেক্ষা ফুরানোর পর আবেগের বাঁধ ভেঙেছে তাতে। তিন দিন ধরেই জনসমুদ্র রাজধানীর ওবেলিস্ক স্কয়ার। রাত আড়াইটায় মেসিদের বিমান নামে এজেইজা বিমানবন্দরে। কাপ হাতে প্রথমেই বেরিয়ে আসেন মেসি, পেছনেই লিওনেল স্কালোনি, এরপর একে একে সবাই। দোহা থেকে রওনা হয়ে যাত্রাবিরতি ছিল ইতালিতে। সেই উড়োজাহাজ চ্যাম্পিয়নদের শহরে পৌঁছে রাত ২টা পেরিয়ে। বিমান থেকে নেমেই ছাদ খোলা বাসে ওঠেন মেসিরা। হাঁটার গতিতে সেটি চলে মানুষের ঢল কেটে কেটে।

মেসিদের বরণ করতে আর্জেন্টিনায় জাতীয় ছুটি ঘোষণা – Protidin Shebok  Newsportal

রাতটা এজেইজা বিমানবন্দরের পাশেই আর্জেন্টিনা ফুটবল ফেডারেশনের ট্রেনিং কমপ্লেক্সে কাটিয়েছেন মেসিরা। ট্রফি জড়িয়ে মেসির ঘুমের ছবিটা সেখানকারই। বিছানাতেই ট্রফি পাশে নিয়ে মাতের (এক ধরনের চা, যা আর্জেন্টাইনদের নিত্যসঙ্গী) আস্বাদ নিচ্ছেন। শহরে তখন নতুন করে উৎসবের প্রস্তুতি। দুপুরের পর সেই ট্রফি নিয়েই ছাদ খোলা বাসে হয়েছে ‘চ্যাম্পিয়ন প্যারেড’। সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয় এদিন। লাখো আর্জেন্টাইন ঘর ছেড়ে রাস্তায় বেরিয়ে আসে। নেচেগেয়ে উদযাপন করে তারা ৩৬ বছর পর ফিরে পাওয়া শ্রেষ্ঠত্ব। মেসিদের অপেক্ষায় প্রায় পুরো রাত বিমানবন্দরে কাটিয়ে দেওয়া কলেজ পড়ুয়া এইর্তন কেরদোসাস দুপুরেই আবার ওবেলিস্কের জনসমুদ্রে, ‘আজ কারো কোনো কাজ নেই, কেউ আর কোথাও যায়নি।

জাতীয় দল থেকে এখনই অবসর নয় : মেসি

সবার গন্তব্য এই একটাই। চ্যাম্পিয়নদের সঙ্গে উদযাপন। ’ ৬৫ বছর বয়সী রিকার্দো গ্রানফেলদ বলছিলেন, ‘ছিয়াশির বিজয় আমি দেখেছি। কিন্তু পরশুর বিজয় আরো বেশি আবেগে ভাসিয়েছে আমাকে। অনেক উৎকণ্ঠার পর শেষ হাসিটা হাসতে পেরেছি আমরা। ’ মেসিদের প্যারেডে সঙ্গী হতে সকাল থেকে এএফএ ট্রেনিং সেন্টারের সামনেই জড়ো হতে থাকে আর্জেন্টাইনরা।

/যে যে রাস্তা প্রদক্ষিণ করবে করবে মেসিদের বাস, তার আশপাশে এবং শহরের মূল উৎসবস্থল ওবেলিস্ক ঘিরে আকাশি-সাদার ঢল নেমেছিল যেন। হাতে ড্রাম, বাঁশি, খাবার  পানি… সারা দিনের প্রস্তুতি ছিল তাদের। রাস্তার মোড়ে মোড়ে চ্যাম্পিয়নদের ছবি, কোথাও বিশাল পতাকা, ব্যানারে ’৮৬-র নায়কও আছেন সগৌরবে। এদিনের নায়ক চোখের সামনেই—মেসি, সর্বকালের সেরা বিতর্ক থামিয়ে যিনি বিশ্বকাপের ট্রফি হাতে তুলে ধরেছেন।

একটা সময় তিনি আর্জেন্টাইন কি না, সেই প্রশ্নও উঠে গিয়েছিল। বার্সেলোনার জার্সিতে এত এত অর্জনের পরও আকাশি-সাদায় যে ছিল তাঁর শূন্য হাত। মেসি সেই সংশয়ই ভালোবাসায় ভরিয়ে দিয়েছেন, ২৮ বছর পর আলবিসেলেস্তেদের জিতিয়েছেন কোপা আমেরিকা, ৩৮ বছর পর ঘোচালেন বিশ্বকাপের অপূর্ণতাও।

SHARE THIS ARTICLE