রোজার প্রথম দিনেই জমজমাট চকবাজারের ইফতার বাজার

পবিত্র রমজানের প্রথম দিনেই জমে উঠেছে পুরান ঢাকার ঐতিহ্যবাহী চকবাজারের ইফতার বাজার। তবে শুরুতে অনুমতি ছাড়া ইফতার বাজার বসানোর অভিযোগে পুলিশের বাধার মুখে পড়লেও তা উপেক্ষা করে দোকান বসান ব্যবসায়ীরা। বেলা যত গড়িয়েছে ততই জমজমাট হয়ে উঠেছে ইফতার বাজার।

রোববার (৩ এপ্রিল) চকবাজার ঘুরে দেখা গেছে, প্রচলতি ইফতারির পাশাপাশি নানান স্বাদের বাহারি আয়োজন সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। বাহারি এসব ইফতারির স্বাদ নিতে দুপুরেই দূর-দূরান্ত থেকে ভোজনবিলাসীরা ছুটে এসেছেন। ঐতিহ্যবাহী খানদানি ইফতারি কিনতে দেখা গেছে দীর্ঘ জটলা।

প্রতিবছরের মতো এবারও চকবাজারের ইফতারির সবচেয়ে বড় আকর্ষণ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়’ নামের একটি বিশেষ ইফতারি। এটি কিনতে ক্রেতাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে দেখা গেছে। ‘বড় বাপের পোলায় খায়, ঠোঙা ভইরা লইয়া যায়’ তৈরিতে মাংস, সুতি কাবাব, মাংসের কিমা, ডাবলি, বুটের ডাল, ডিম, মগজ, আলু, ঘি, কাঁচা ও শুকনো মরিচসহ নানা পদের খাবার আইটেম ও হরেক ধরনের মসলা প্রয়োজন হয়। প্রতি কেজি ৪০০ থেকে ৪৮০ টাকা দরে এটি বিক্রি হচ্ছে। ৬৮ বছর আগে ১৯৪৫ সালে শাহী জামে মসজিদ চত্বরে বাণিজ্যকভাবে এ খাবার বিক্রি শুরু করেন এক ব্যক্তি। সেই খাবারটি এখন পুরান ঢাকাসহ গোটা রাজধানীতে একটি আকর্ষণীয় ইফতারির আইটেম হিসেবে পরিচিত।

দেশে দেশে ইফতারের গল্প বলে যাই

মোহাম্মদ নয়ন নামে এক বিক্রেতা বলেন, গত দুইবছর তো করোনার জন্য ব্যবসাই করতে পারিনি। এই বছরও বসতে বাধা দিয়েছিল, পরে আমরা অনুরোধ করার পর বসতে দিয়েছে। এই যে দূর দূরান্ত থেকে মানুষ আসছে ইফতারি কিনতে, এটা তো ঐতিহ্যবাহী। এটা সবাই খেতে চান। আমাদের কাছে অনেক ধরনের ইফতারি আছে। এখন পর্যন্ত বিক্রি করে কুলাতে পারছি না। এই ভিড় আরও বাড়বে।

চকবাজারের বসছে না ইফতার বাজার

আকর্ষণীয় সব আইটেমের পাশাপাশি প্রচলিত ইফতারির কদরও অনেক বেশি এই চকবাজারে। ইফতার বাজার ঘুরে দেখা গেছে, জিলাপি কালাই আইটেম ২৪০ টাকা, আটার জিলাপি ২০০ টাকা, বড় সাইজের জিলাপি ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। শিঙাড়া ৮ টাকা প্রতি পিস, সমুচা ৮ টাকা, চিকেন টোস্ট ৩০ টাকা, চিকেন পরোটা ৫০ টাকা, বিফ পরোটা ৬০ টাকা, নরমাল পরোটা ৩০ টাকা, বেগুনি ৫ টাকা, আলুর চপ ৫ টাকা, পিঁয়াজু ৫ টাকা, ভেজিটেবল পাকোড়া ৫ টাকা, ডিমচপ প্রতিটি ২০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। এছাড়াও ঘুমনি ৮০ টাকা কেজি, ছোলা ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা কেজি, সবজির বড়া ১০ টাকা প্রতিটি, গরুর টিকা ৩০ ও মুরগির টিকা ২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

চকবাজারের ইফতার : 'বড় বাপের বেটায় খায়'-এ মুগ্ধ ক্রেতা

জালি কাবাব প্রতি পিস ৫০ টাকা, সাসলিক ৫০ টাকা, টিকা কাবাব ৫০ টাকা, কোয়েল পাখির রোস্ট ৭৫ থেকে ১০০ টাকা পিস, চিকেন রোল ৬০ টাকা, আস্ত মুরগি ৩৫০ টাকা, পনির ৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।

এছাড়াও পানীয় আইটেমের মধ্যে পেস্তা শরবত ২০০ টাকা লিটার, মাঠা ৮০ টাকা লিটার, বোরহানি ১২০ টাকা লিটার, ফালুদা বড় বাটি ২০০ টাকা, ফালুদা ছোট বাটি ১০০ টাকা, দইবড়া বড় বক্স ২২০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

পানীয় আইটেম বিক্রেতা মো. বাবুল জানান, সবাই চায় মজার ইফতারি করতে। যুগ যুগ ধরে মানুষ পেস্তা শরবতের জন্য পাগল। এইখানের খুব জনপ্রিয় আইটেম এটা। ২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। এছাড়াও ফালুদা, বোরহানিসহ কয়েকটি আইটেম বিক্রি করছি। ভালো বিক্রি হচ্ছে। গত দুই বছর কোনো ব্যবসা করতে পারিনি। আশা করছি এ বছর ভালো ব্যবসা করতে পারবো।

SHARE THIS ARTICLE