সংকটের আবর্তে থাকা লেবাননে নূতন প্রধানমত্রী মোস্তফা আদিব

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ লেবাননের রাজধানী বৈরুতের নৌবন্দরে দীর্ঘদিন থেকে জমিয়ে রাখা এমোনিয়াম নাইট্রাইটের গুদামে গত ৪ঠা আগস্ট ভয়াবহ বিস্ফোরন ঘটে। এই বিস্ফোরণে বৈরুতের অধিকাংশ ইমারত ও স্থাপনা ভেঙে পড়লে ২০০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হন। দীর্ঘ রাজনৈতিক সংকটে থাকা এই রাষ্ট্র ইতিমধ্যে কোভিড-১৯ মহামারীতে পঙ্গু থাকা অবস্থায় আকস্মিক এই বোমা বিস্ফোরণে ভেঙে পড়ে লেবাননের অর্থনীতি এবং রাষ্ট্রীয় কাঠামো। বোমা বিস্ফোরণের পর সংকট উত্তরণে ব্যর্থতার কারনে জনসাধারণের চাপের মুখে প্রধানমন্ত্রী হাসান দিয়াব পদত্যাগে বাধ্য হন। � লেবাননের পঙ্গু অর্থনৈতিক সঙ্কট মোকাবেলা এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত বৈরুতের পুনরুদ্ধারে নতুন সরকারের নেতৃত্বের জন্য মোস্তফা আদিবকে লেবাননের প্রধানমন্ত্রী হিসাবে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। যতটুকু জানা যায় নূতন প্রধানমন্ত্রী মোস্তফা আদিব আইনশাস্ত্র এবং রাজনীতিতে পি এইচ ডি এবং তিনি এক সময় লেবানন এবং ফ্রান্সে শিক্ষকতা করেছেন।

৪৮ বছর বয়স্ক জনাব আদিব উত্তর ত্রিপলিতে জন্মগ্রহন করা একজন সুন্নি মুসলিম হিসেবে, লেবাননের ধর্মীয় ক্ষমতা ভাগাভাগির চুক্তির ভিত্তিতে এই নিয়োগ পেয়েছেন। মোস্তফা আদিব, তার প্রথম ভাষণে দ্রুত সরকার গঠন করার এবং আইএমএফের সাথে সমন্বয় করে “দ্রুত মৌলিক সংস্কার” করার জন্য সংসদের সাথে কাজ করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। মোস্তফা আদিব ২০১৩ সাল থেকে জার্মানিতে লেবাননের রাষ্ট্রদূত হিসাবে দায়িত্ব পালন করেছেন এবং এর আগে তিনি প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী নাজিব মিকাতির পরামর্শদাতা ছিলেন। সোমবার হিজবুল্লাহ, শিয়া ইসলামবাদী দল ও আধাসামরিক দল সহ লেবাননের পার্লামেন্টের সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্যের সমর্থন পাওয়ার পরে রাষ্ট্রপতি মিশেল আউন তার প্রধানমন্ত্রী নিয়োগের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।অপেক্ষাকৃত অপরিচিত মোস্তফা আদিব লেবাননে কয়েক দশকের ব্যর্থ নেতৃত্বের পরে জনসাধারণের আস্থা পুনর্নির্মাণের চ্যালেঞ্জিং কাজটির মুখোমুখি। গত বছর অক্টোবরে ব্যাপক বিক্ষোভ শুরু হবার পর, কয়েকদফা বিক্ষিপ্ত অস্থিরতা চলছিলো, এমতাবস্থায় এই বিস্ফোরণ হলে গত চার সপ্তাহ ধরে নাগরিক অস্থিরতা ও বিক্ষিপ্ত ঘটনা অব্যাহত রয়েছে। এদিকে বিস্ফোরণের পর দ্বিতীয়বারের মতো সোমবার ফরাসী প্রেসিডেন্ট ইমানুয়েল ম্যাক্রোনের বৈরুত পৌঁছানোর কয়েক ঘন্টা আগে মিঃ আদিবের মনোনয়ন ঘোষণা করা হয়। তিন সপ্তাহ আগে তাঁর সফরকালে মিঃ ম্যাক্রন লেবাননের নেতৃত্বের প্রতি জনগণের জন্য “নতুন রাজনৈতিক চুক্তি” করার আহ্বান জানিয়েছিলেন এবং স্পষ্ট করে দিয়েছিলেন যে, আন্তর্জাতিক সমর্থন পেতে হলে লেবাননের সংস্কারের প্রয়োজন। বিক্ষোভকারীরা তাদের প্রবীণ নেতাদের ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার নিন্দা জানিয়ে সংস্কার ও সরকারী দুর্নীতির অবসান ঘটানোর আহ্বান জানিয়েছেন।ফরাসি উদ্যোগের প্রতিক্রিয়া হিসাবে, রবিবার হিজবুল্লাহর প্রধান হাসান নাসরাল্লাহ বলেছেন যে তাঁর দল “যে কোনও সংলাপের জন্য উন্মুক্ত” থাকবে।গত রবিবার রাতে একটি বিরল লাইভ টেলিভিশন অনুষ্ঠানে প্রেসিডেন্ট মিঃ আউন একটি “ধর্মনিরপেক্ষ” বা “নাগরিক” রাষ্ট্রের দিকে পরিবর্তনের আহ্বান জানান। অনেকেই মনে করেন, কয়েক দশক ধরে লেবাননের রাজনৈতিক ব্যাবস্থা ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষমতা ভাগাভাগি করার কারণে দুর্নীতি ও জবাবদিহিতার অভাব পরিলক্ষিত হয়েছে ।অটোমান সাম্রাজ্যের পতনের পরে ১৯২০ সাল থেকে ১৯৭৩ সাল পর্যন্ত লেবানন শাসন কারী ফ্রান্স এই ক্রান্তিকালে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের নেতৃত্বে এগিয়ে আসে এবং রাষ্ট্র পরিচালনার নীতিতে প্রয়োজনীয় সংস্কার করা হলে আন্তর্জাতিক আর্থিক সহায়তার প্রতিশ্রুতি দেয়।� আইএমএফের কাছ থেকে লেবাননের বেলআউট নিয়ে আলোচনা চলাকালীন অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ এবং এর দায়ভার কে বহন করবে তা নিয়ে অভ্যন্তরীণ মতবিরোধের কারণে আলোচনা রুদ্ধ হয়ে পড়ে। লেবাননের আইএমএফ আলোচনায় দলের তৃতীয় সদস্য তালাল সালমান রবিবার পদত্যাগ করেন।আগস্টের বিস্ফোরণের কারণে লেবাননের ভঙ্গুর অর্থনৈতিক পরিস্থিতি আরও অবনতি হয়েছে। সোমবার প্রকাশিত বিশ্বব্যাংকের একটি মূল্যায়ণ অনুমান করেছে যে বৈরুত বিস্ফোরণে ৪.৬ বিলিয়ন ডলার ক্ষতি হয়েছে এবং ব্যাবসা বাণিজ্যে লোকসানের মোট পরিমাণ ৩.৫ বিলিয়ন ডলার বলে অনুমিত হয়েছে।

সংবাদ সূত্রঃ বিবিসি, আলজাজিরা,

SHARE THIS ARTICLE