সবার সচেতনতা করোনা মোকাবেলা সম্ভব

এ,কে,আজাদ – সম্পাদকঃ লকডাউনের কারনে অর্থনৈতিক ক্ষতি অনেক দেশের জন্য সামাল দেয়া সম্ভব না, বিশেষ করে দরিদ্র দেশগুলো চাইলেই তার জনগণকে মাসের পর মাস বসিয়ে খাওয়াতে পারবেনা এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসা সেবা দিয়ে যেতে পারবেনা। অপরদিকে লকডাউন না থাকলে এই মহামারিতে অসংখ্য মানুষ আক্রান্ত হবে এবং চিকিৎসা ব্যবস্থা পুরোপুরি ভেঙ্গে পড়বে। মানুষ তখন কোভিড-১৯ কিংবা সাধারণ রোগের চিকিৎসা পাবেনা। অর্থনৈতিক হতাশার পাশাপাশি মাহামারি অনিয়ন্ত্রিত হলে গেলে আমরা সবাই কমবেশি পরিবারের সদস্য, নিকট আত্মীয় বা পরিচিত মানুষকে হারাবো। বেশিরভাগ মানুষ প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে মৃত্যুর শোকে সামিল হবে। পুরো সমাজ একটা অনির্দিস্ট সময়ের জন্য এই শোকের মধ্যে দিয়ে যাবে। মানুষ হারিয়ে ফেলতে পারে সাহস এবং দেখা দিবে হতাশার রোগ, পারিবারিক কলহ ও আত্মহত্যার মত ঘটনা। পৃথিবীর সকল বিজ্ঞানী হিমসিম খেয়ে যাচ্ছে এর প্রতিষেধক আবিস্কার করার জন্য। ভাইরাস দ্রুত বংশবিস্তার করে বলে তার জেনেটিক উপাদানের দ্রুত পরিবর্তন হয়। এই পরিবর্তনের কারনে সামনে ভাইরাসটি আরও অনেক শক্তিশালী হয়ে যেতে পারে এবং একই সাথে এই সম্ভাবনাও আছে ভাইরাস আস্তে আস্তে দূর্বল হয়ে যাবে। যেহেতু ভাইরাসের ভবিষ্যৎ ভাইরাস নিজেই নির্ধারন করবে তাই ভাইরাস সম্পর্কে আগামী কালের ভবিষ্যৎবাণীও ভুল হতে পারে। তাই আজ নিজে সচেতন থাকা ও অন্যকে সচেতন করা এবং সরকারী নির্দেশনাগুলো মেনে চলাই সবচেয়ে নিরাপদ সিদ্ধান্ত হবে প্রতিটি নাগরিকের। কোভিড-১৯ ভাইরাস মানুষের শরীরের বাইরে বাঁচতে পারেনা। তাই এটা বেঁচে থাকার জন্য একজন থেকে আরেকজনের শরীরে ছড়ায়। লকডাউন আরোপ করলে এই ভাইরাসের মানুষ থেকে মানুষে ছড়ানোর সুযোগ কমে যায়। আশা করা হয় যদি নতুন কাউকে আক্রান্ত করতে না পারে তাহলে ভাইরাসটি কোন নির্দিস্ট্য এলাকা থেকে বিদায় নিবে বা তার প্রকোপ কমে যাবে। সাধারণত কোভিড-১৯ এ আক্রান্ত কোন ব্যক্তি ১৪ দিনের মধ্যেই শরীর থেকে ভাইরাসটিকে পরিষ্কার করে ফেলতে পারে তার প্রাকৃতিক রোগ প্রতিরোধ ব্যবস্থার মাধ্যমে, এর ব্যতিক্রম হলে মৃত্যু হয়। তাই কোন এলাকার সকল মানুষ একসাথে লকডাউনে গেলে কয়েক সপ্তাহের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির সংখ্যা কমিয়ে আনা সম্ভব। কিন্তু একেকজন যদি একেক সময় আক্রান্ত হয় তাহলে লকডাউন কয়েক সপ্তাহ থেকে কয়েক মাস এমনকি বছর পর্যন্ত চলতে পারে। লকডাউনের সময় কোন জনগোষ্ঠীর এক অংশ কোভিড-১৯ ভাইরাস প্রতিরোধে সচেতন আবার অন্য অংশ অসচেতন থাকলে লকডাউনের সময় দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হবে। আবার সবাই একসাথে লকডাউন মেনে চললে যে খুব দ্রুত ফলাফল পাওয়া যায় তার সাম্প্রতিক উদাহরণ হচ্ছে নিউজিল্যান্ড, কানাডা, চিন ইত্যাদি। এইসব দেশ লকডাউনের মাধ্যমে কোভিড-১৯ নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসলেও সহসাই লকডাউন পুরোপুরি তুলে দিতে পারছে না। কারন লকডাউন তুলে দিলে আবার ভাইরাসের সংক্রামণ আগের অবস্থায় চলে যাবার সম্ভাবনা আছে। কিন্তু এইসব দেশ কোভিড-১৯ টেস্টিং ও সামাজিক দূরত্বের বিষয়গুলো গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করে ধীরে ধীরে অর্থনীতি সচল করার চেষ্টা করে যাচ্ছে। সচেতন্তার কারনে ভিয়েতনামের মত দেশে আক্রান্তের হার প্রায় শুন্যের কোঠায় এসেছে। এই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নাই যে, কোভিড-১৯ ভাইরাসকে সচেতনতা দিয়ে দূরে রাখা সম্ভব এবং বাঁচানো সম্ভব হাজার হাজার প্রাণ। সবার সাধ্যমত চেষ্টা করে গেলে আমরা কমাতে পারবো আপনজনের মৃত্যু এবং চিরতরে পৃথিবী থেকে বিদায় করতে পারবো এই প্রাণঘাতী ভাইরাসকে।

SHARE THIS ARTICLE