৯ বছর ধরে আছেন ভারতে, দেশ থেকে নিয়েছেন বেতন

চরঈশ্বর ইউনিয়নের চরঈশ্বর রায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষিকা রিংকু মজুমদার- ছবি: সংগৃহীত

আইরিশ বাংলাপোষ্ট ডেস্কঃ ৯ বছর ধরে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন প্রতিবেশী দেশ ভারতে। অথচ মাস শেষে তার স্বজনরা অগ্রিম সই করে রাখা চেক বইয়ের চেক দিয়ে বেতন তুলে নিতেন দেশ থেকে। কয়েকমাস পর পর ৩-৪ দিনের জন্য দেশে এসে সই করে যেতেন কাগজপত্র।  কর্মস্থলে উপস্থিত ছিলেন মর্মে মাসিক রিপোর্টও জমা থাকত নিয়মিত।

অর্থের বিনিময়ে নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার প্রাথমিক শিক্ষা অফিসকে ম্যানেজ করে গত ৯ বছর ধরে এমন দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে সরকারি বেতন-ভাতা ও বাড়তি নানা সুবিধা নিয়ে আসছিলেন হাতিয়ার চরঈশ্বর ইউনিয়নের চরঈশ্বর রায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা রিংকু মজুমদার।

স্কুলটিতে বর্তমানে চারজন সহকারী শিক্ষক রয়েছেন এবং শিক্ষার্থীর সংখ্যা ১৫০। এত বড় অনিয়ম নিয়ে এলাকাবাসী ফুঁসে ওঠায় গত ২০২১ সালের ডিসেম্বর থেকে রিংকু মজুমদারের বেতন বন্ধ হয়ে যায়।

রিংকু মজুমদার ঐ উপজেলার উত্তর চরঈশ্বর (দাসপাড়া) এলাকার অবসরপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষক বরেন্দ্র দাসের স্ত্রী। রিংকু স্বামী-সন্তান নিয়ে গত ৯ বছর ধরে ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।

চয়ন দাস, শোভা রানী, মল্লিকা দাস, নিশান বাবু, পাপন দাস ও অসীম দাসসহ স্থানীয় অনেকে জানান, গত ৮-৯ বছর ধরে প্রধান শিক্ষিকা রিংকু মজুমদার ভারতে থাকেন। কয়েক মাসের বেতন ব্যাংকে জমা হলে বেতন তোলার সময় তিনি দেশে আসেন। মাঝে মধ্যে তার আত্মীয়রা চেক দিয়ে ব্যাংক থেকে টাকা উঠিয়ে নেন। তার এ অনিয়মের ব্যাপারে হাতিয়া উপজেলা শিক্ষা অফিসে জানালেও কোনো কাজ হয়নি। কারণ ঐ সময়ের শিক্ষা কর্মকর্তা ভবরঞ্জন বাবু সম্পর্কে রিংকু মজুমদারের ভগ্নিপতি। তার ছত্রছায়ায় প্রধান শিক্ষক রিংকু মজুমদার অনিয়ম করে আসছিলেন।

তারা আরো জানান, রিংকু মজুমদার সম্ভবত আর চাকরি করবেন না- তবে এত বছর তিনি যে অনিয়ম করেছেন এর শাস্তি হয়নি এবং তার ভগ্নিপতি শিক্ষা কর্মকর্তা ভবরঞ্জন বাবুরও কোনো বিচার হয়নি।

হাতিয়া উপজেলার সাবেক শিক্ষা অফিসার ভবরঞ্জন বাবু অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, আমি অনিয়ম করার সুযোগ দেইনি।

চরঈশ্বর রায় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক রূপ কুমার দাস জানান, মেডিকেল ছুটিতে যান রিংকু মজুমদার। কিন্তু আজ পর্যন্ত ভারতের পশ্চিমবঙ্গ থেকে দেশে আসেননি। ৮-৯ বছর ধরে প্রধান শিক্ষক না থাকায় বিদ্যালয় পরিচালনা, স্লিপের টাকা, উপবৃত্তি, কন্টিজেন্সিসহ বিভিন্ন কাজ আটকে আছে। তিনি এক মাস, দুই মাস অথবা তিন মাস ভারতে থেকে ৩-৪ দিন স্কুলে জমে থাকা কাগজপত্রে সই করে আবার ভারত চলে যেতেন।

স্কুল সভাপতি রণলাল দাস বলেন, প্রধান শিক্ষক রিংকু মজুমদারের কর্মকাণ্ড প্রশ্নবিদ্ধ। অভিযোগ করেও কোনো প্রতিকার পাইনি।

অনিয়ম ও দুর্নীতির ব্যাপারে ঐ ক্লাস্টারের সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা কামরুল হাসান জানান, বর্তমানে তার বেতন বন্ধ রয়েছে। এর আগের বিষয়ে আমার কিছুই জানা নেই।

নোয়াখালী জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. সাইদুল ইসলাম জানান, প্রধান শিক্ষিকা রিংকু মজুমদার অনিয়ম দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে দেশে ও কর্মস্থলে না থেকে বেতন-ভাতা নেয়ার অভিযোগ পেয়েছি। উপজেলা শিক্ষা অফিস কেন এ অনিয়ম এতদিন ধামাচাপা দিয়ে রেখেছে, সেটাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। বিস্তারিত জানার পর যথাযথ ব্যবস্থা নেয়া হবে।

SHARE THIS ARTICLE