ফতুল্লায় গ্যাসলাইন বিস্ফোরণে ভবন বিধ্বস্ত, নিহত ২ আহত ১০

আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্কঃ নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লার লালখাঁ এলাকায় গ্যাসলাইন  বিস্ফোরণে একটি  ভবনের নিচতলার দেয়াল ধসে ও আগুনে দগ্ধ হয়ে দুই নারী নিহত এবং  ১০ জন আহত হয়েছেন। গতকাল সকাল সাড়ে ৬টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।আহতদের ঢাকা শেখ হাসিনা বার্ন অ্যান্ড  প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটসহ বিভিন্ন হাসপাতালে  ভর্তি করা হয়েছে। বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট রহিমা খাতুনকে আহ্বায়ক করে  সাত সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, ফতুল্লার লালখাঁ এলাকায় মোক্তার হোসেনের পাঁচতলা বাড়ির নিচতলায় গতকাল সকাল সাড়ে ৬টার দিকে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে। বিস্ফোরণে ফ্ল্যাটের চারপাশের দেয়াল ও ভেতরের কক্ষের দেয়াল ধসে পড়ে। এতে ঘরের ভেতরে ঘুমিয়ে থাকা মায়া রানী দেয়াল চাপা পড়ে ঘটনাস্থলেই নিহত হন। ভয়াবহ বিস্ফোরণে দেয়াল প্রায় ১০-১৫ ফুট দূরে গিয়ে ছিটকে পড়ে পাশের দুটি দোকান ও একটি টিনশেড ঘর বিধ্বস্ত হয়।

এছাড়া ওই বাড়ির সামনের রাস্তা দিয়ে মেয়ে পুর্ণিমাকে চিকিৎসা করানোর জন্য নিয়ে যাচ্ছিলেন মা মঙ্গলী রানী বিশ্বাস। এ সময় বিস্ফোরণে ভবনের দেয়াল উড়ে গিয়ে মা ও মেয়ের ওপর পড়ে। পরে আশপাশের লোকজন তাদের উদ্ধার করে খানপুর ৩০০ শয্যা হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মা মঙ্গলী রানী বিশ্বাসকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। আর মেয়েকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেয়া হয়। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মঙ্গলী রানী মারা যান।

ওই ভবনের নিচতলার বাসিন্দা দগ্ধ নিপা আক্তার জানান, সকালে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম। বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে যায়। দেখি ঘরের ভেতরে ধোয়া ও আগুন জ্বলছে, দরজা-জানালা ভেঙে ঘরের মাঝে পড়ে আছে। পরে ঘর থেকে সন্তানদের নিয়ে বের হই। আগুনের তাপে আহত হয়েছি।

তুষ্টি রানী নামে আরেক বাসিন্দা জানান, স্বামী-সন্তানকে নিয়ে ঘরে ঘুমিয়ে ছিলাম। হঠাৎ বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে দেখি ঘরে ধোঁয়া আর আগুন। শরীরের ওপর দেয়াল পড়ে আছে। কোনো রকমে স্বামীকে উঠিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে আসি। বাড়ির মালিকের বড় ছেলে আব্দুর রহমান দাবি করেন, তিতাস গ্যাসের এ লাইন অনেক দিনের পুরনো। রাইজারের লিকেজ থেকে গ্যাস বের হয়ে বা বন্ধের দিন গ্যাস চাপ বেশি থাকায় এ বিস্ফোরণ ঘটে থাকতে পারে। তিতাস গ্যাসের গাফিলতির কারণেই এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। তাদের বারবার তাগাদা দেয়ার পরও তারা লাইন বা রাইজার মেরামত করেনি।

তিনি আরো বলেন, তাদের নিচতলার চারটি ফ্ল্যাটে নারী শিশুসহ পায় ২০-২২ জন ভাড়াটিয়া ছিলেন। তারা বিভিন্ন পোশাক কারখানায় কর্মরত ছিলেন।

নারায়ণগঞ্জের ফতুল্লা থানার ওসি রাকিবুজ্জামান জানান, গ্যাস বিস্ফোরণের ঘটনায় দেয়াল চাপা পড়ে দুই নারী নিহত হয়েছেন। আগুনে দগ্ধ হয়ে আরো ১০ জন আহত হয়েছেন। বিষয়টি পুলিশ তদন্ত করছে। যাদের গাফিলতি পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের সহকারী উপপরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফিন জানান, সকালে বিস্ফোরণের পর আগুন লেগে যায়। খবর পেয়ে ফায়ার সার্ভিসের দুটি ইউনিট এসে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। ধারণা করা হচ্ছে, গ্যাসের চুলার লিকেজ থেকে গ্যাস বের হয়ে রুমে জমাট বঁধে ছিল। সকালে কেউ রান্না করা জন্য চুলা জ্বালালে রুমের ভেতরে জমে থাকা গ্যাস থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন কোম্পানি ফতুল্লা জোনের এজিএম প্রকৌশলী আতিকুল ইসলাম জানান, বিস্ফোরণের খরর পেয়ে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। বাড়ির নিচে সেপটিক ট্যাংক রয়েছে। গ্যাসের চুলা নাকি অন্য কোনো লিকেজ দিয়ে গ্যাস বের হয়ে বিস্ফোরণ ঘটেছে তা তদন্ত করে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোস্তাইন বিল্লাহ জানান, বিস্ফোরণের ঘটনা তদন্তে সাত সদস্যের একটি কমিটি গঠন হয়েছে। ১৫ দিনের মধ্যে তদন্ত রিপোর্ট জমা দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিস্ফোরণে যারা নিহত হয়েছেন তাদের মরদেহ সত্কারের জন্য জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দুটি পরিবারকে ২০ হাজার টাকা করে দেয়া হচ্ছে।

SHARE THIS ARTICLE