মোদির আগমনে কেন ফুসে ওঠেছিলো ব্রাহ্মণবাড়িয়া?

আইরিশ বাংলাপোষ্ট অনলাইন ডেস্কঃ অনেক প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে তিতাস নদীর তীরবর্তী শহর ব্রাহ্মণবাড়িয়া। রক্তারক্তির জনপদে কেন পরিণত হলো এই শহর। কী ঘটেছিল এখানে। কেন এত বিক্ষোভ, জ্বালাও পোড়াও আর কেন দরকার হলো গুলিবর্ষণের। এসব প্রশ্নের অনেক উত্তর জানা থাকলেও মুখ খুলছেন না কেউ। আতঙ্কে রয়েছেন সাধারণ মানুষ। এই সময়ে দেশের সবচেয়ে আলোচিত ব্রাহ্মণবাড়িয়া ঘুরে ও সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে অনেক তথ্য।

ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বাংলাদেশ সফরকে কেন্দ্র করে এখানে ঘটেছে রক্তারক্তির ঘটনা। শুরুটা গত ২৬শে মার্চ মহান স্বাধীনতা দিবসের দিন হলেও তা ভয়াবহ আকার ধারণ করে পরদিন ২৭শে মার্চ থেকে। ২৬শে মার্চ কোনো কর্মসূচি ছিল না হেফাজতে ইসলামের। ওইদিন বিকালে হঠাৎ করেই বড় মাদ্রাসা হিসেবে পরিচিত ‘জামিয়া ইসলামিয়া ইউনুছিয়া ব্রাহ্মণবাড়িয়া’ থেকে একটি মিছিল বের হয়। আরো একটি মিছিল বের হয় ভাদুঘরের ‘জামিয়া সিরাজীয়া দারুল উলুম’ থেকে।

হেফাজতে ইসলামের হরতাল: ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় তৃতীয় দিনের মতো সহিংসতা, হতাহতের  খবর - BBC News বাংলা

তারপর বিভিন্ন এলাকা থেকে এই দুটি মিছিলে নানা পেশার লোকজন অংশ নেন। মিছিলকারীরা কাউতলী মোড়ে জড়ো হয়ে বিক্ষোভ করতে থাকেন। বিক্ষোভকারীদের বাধা দেয় পুলিশ। ফিরে যেতে অনুরোধ করে। এসময় বাধা উপেক্ষা করেই সড়ক অবরোধ করার চেষ্টা করেন তারা। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করতে লাঠিচার্জ করে পুলিশ। এ সময় বিক্ষোভকারীরাও পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। পরিস্থিতি আরো উত্তপ্ত হয়ে উঠলে রাবার বুলেট ও টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে পুলিশ।

ওই সময়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ইটপাটকেল ছুড়ে ও একপর্যায়ে অগ্নিসংযোগ করে জেলা পরিষদের ডাকবাংলোতে। ঢিল ছুড়ে পুলিশ সুপারের অফিসের পার্র্কিং এবং এসপি অফিস সংলগ্ন ফাঁড়িতে। বেশ কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করে তারা। প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, মিছিলকারীরা যখন ছত্রভঙ্গ। পিছু হটে যাচ্ছিলো। ঠিক তখনই কয়েকটি গুলির শব্দ শুনতে পান তারা। এসময় গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান আশিক নামে কলেজপাড়ার এক তরুণ। তিনি স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপে কাজ করতেন। এই ঘটনার পর রেলস্টেশনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে বিক্ষুব্ধ লোকজন।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ভাদুঘরের ‘জামিয়া সিরাজীয়া দারুল উলুম’-এর সভাপতি মাওলানা মুহাম্মদ বোরহান উদ্দীন আল মতিন জানান, তখন বিকাল সাড়ে ৪টা। তিনি তার শ্বশুরবাড়ি কাউতলী এলাকায়। ফোনে খবর পান হাটহাজারীতে চারজন নিহত হয়েছেন। বায়তুল মোকাররমে হামলা হয়েছে। প্রতিবাদে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মিছিল বের করেছে মাদ্রাসার ছাত্ররা। এতে যোগ দিয়েছে সাধারণ মানুষও। ফোনে পুলিশ সুপারের অনুরোধে তিনি তাৎক্ষণিক কাউতলী মোড়ে গেলেও পরিস্থিতি তখন নাগালের বাইরে। কাউতলীতে একজন নিহত হওয়ার পরদিন ২৭শে মার্চ মাদ্রাসা ছাত্রদের নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন কর্তৃপক্ষ। শহরজুড়ে তখন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের অবস্থান। এরমধ্যে জোহরের নামাজের পর হেফাজতের কর্মসূচি অনুসারে দুটি মাদ্রাসা থেকে মিছিল বের হলেও পুলিশি বাধায় ও শিক্ষকদের নির্দেশে তারা পুরো শহর প্রদক্ষিণ না করেই কর্মসূচি শেষ করে।

ব্রাহ্মণবাড়িয়া: নিহত বেড়ে ৬ হেফাজতের হরতালে দোকান ও যান চলাচল বন্ধ | The  Daily Star Bangla

ব্রাহ্মণবাড়িয়া ইন্ডাস্ট্রিয়াল স্কুল সংলগ্ন সমাজকল্যাণ সংসদের অফিসে তখন মিটিং করছিলেন স্থানীয় সংসদ সদস্য। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আল মামুন সরকারসহ আওয়ামী লীগ ও অঙ্গ সংগঠনের কিছু নেতাকর্মীও সেখানে ছিলেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য পরে যোগ দেন সুর সম্রাট ওস্তাদ আলাউদ্দিন খাঁ সঙ্গীতাঙ্গনের অডিটোরিয়ামে স্বাধীনতা দিবসের এক আলোচনা সভায়। সেখান থেকে তার নেতৃত্বে মিছিল বের হয়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী মিছিলে লাঠিসোটা হাতে নিয়ে অংশ নেন অনেকে। মিছিলটি কুমার শীল মোড় থেকে টিএ রোড হয়ে বড় মাদ্রাসা সংলগ্ন কান্দিপাড়া মোড়ে প্রধান সড়কে থামে। সাধারণত এ ধরনের মিছিল শহরের প্রধান সড়ক দিয়ে যাওয়া-আসা করে। মিছিলটি সড়ক ধরে না গিয়ে এখানে থেমে যায়।

প্রত্যক্ষদর্শীদের করা বিভিন্ন ভিডিওতে ওই সময়ে ঘটনাপ্রবাহ ধরা পড়ে। মানবজমিনের কাছে আসা এমন একটি ভিডিওতে দেখা যায়, কালো মাস্ক পরা লোকজন তখন সক্রিয় হয়ে যান। তারপরই ওই গলির সামনে এগিয়ে যান স্থানীয় নেতাকর্মীরা। তারা শুরুতেই ভাঙচুর চালান প্রধান সড়কের জমিলা ম্যানশনে। ওই মোড় থেকে কয়েকশ’ মিটার দূরে মাদ্রাসার অবস্থান।

মিছিলকারীরা মাদ্রাসা গলি ধরে ভেতরে প্রবেশ করেন। মাদ্রাসা ঘেরাও করে ইটপাটকেল ও ককটেল ছোড়া হয় তখন। মাদ্রাসায় পরীক্ষা থাকায় ছাত্ররা যাতে বাইরে যেতে না পারে এজন্য পূর্ব থেকেই গেট ছিল তালাবদ্ধ।

প্রত্যক্ষদর্শী মোস্তফা আল হুসাইন বলেন, হামলাকারীরা পাইপগান দিয়ে গুলি করেছে এবং মুহুর্মুহু ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়েছে। ভেতরে থাকা ছাত্ররা তখন ছাদে উঠে আশেপাশের লোকজনের সহযোগিতা চাচ্ছিলেন বলে জানান তিনি। ততক্ষণে বাইরে ও মসজিদে থাকা কিছু ছাত্র ও আশেপাশের লোকজন এগিয়ে যান। শুরু হয় সংঘর্ষ। তালা ভেঙে বের করা হয় ছাত্রদের।

SHARE THIS ARTICLE